ক্ষমতাবদলের জটিল চালে মাহাথির

মাহাথির মোহাম্মদ। ছবি: রয়টার্স
মাহাথির মোহাম্মদ। ছবি: রয়টার্স

একসময়কার নিজের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী, সহকর্মী আনোয়ার ইব্রাহিমকে জেলে দিয়ে আবার তাঁরই দলের একজন হয়ে পাকাতান হারপান নামক জোট বেঁধে মাহাথির মোহাম্মদের নির্বাচনে বিজয় লাভ ও সরকার গঠন রাজনৈতিক অঙ্গনের এক বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। ২০১৮ সালের শেষের দিকের সে ঘটনায় বিশ্বব্যাপী রাজনীতিতে সৌহার্দ্য, সহনশীলতা এবং গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধির দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছিল। ২৪ ফেব্রুয়ারি আচমকা পদত্যাগের মাধ্যমে সরকার পতন ঘটিয়ে আলোড়ন তুলেছেন মালয়েশিয়ার বয়োবৃদ্ধ প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। মালয়েশিয়ার রাজা (ইয়াং ডি-পার্টুয়ান আগং) সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমদ শাহ মাহাথিরের পদত্যাগপত্র গ্রহণ ও মন্ত্রিসভা ভেঙে দিলেও অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহাথিরকে দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত দেন।

অধিকাংশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ ব্যাপারে একমত, ক্ষমতাসীন জোটের ভেতরকার দ্বন্দ্বের চাপে নয়, বরং নতুন করে এককভাবে ক্ষমতাশালী হওয়ার লক্ষ্যেই রাজনীতির এই জটিল চাল চালিয়েছেন মাহাথির। এখন তিনি ঠিক কেমন করে কতখানি জাল গুটাতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।

এর আগে মালয়েশিয়ায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির পর প্রথমবারের মতো দেশটিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছে দেন তিনি। এই একটি কারণেই দক্ষিণ এশিয়ার অনুকরণীয় রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হয়েছিলেন মাহাথির। যদিও নিজ দেশে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক ডা. মাহাথির মোহাম্মদ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক মনে করা হয় তাঁকে। আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকারও তিনিই। তাঁর নেতৃত্বে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া উন্নয়নের এক মডেল হয়ে ওঠে। মাহাথির প্রধানমন্ত্রিত্ব ও নিজ দল জোটের চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্ষমতাধর মুসলিম রাষ্ট্র মালয়েশিয়ার রাজনীতি এক জটিল ঘূর্ণির মধ্যে পড়েছে। ক্ষমতা হস্তান্তরে জটিল ও উত্তাল পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ার রাজনীতি এখন যে অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে, তাতে দেশটিতে কী হতে যাচ্ছে, এ প্রশ্ন অনেকের। বর্তমানে শ্বাসরুদ্ধকর মালয়েশিয়ায় নানা ধরনের অনিশ্চয়তা, আশা ও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষণ ও অন্তরালের খবরাখবরে মনে হয়, মালয়েশিয়ার রাজনীতি ও ক্ষমতা নতুন এক অভিমুখ নিতে শুরু করেছে। সরকারের প্রধান সচিব মোহাম্মদ জুকি আলী সংবাদমাধ্যমকে জানান, দ্য ফেডারেল সংবিধানের ৪৩ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন সরকার গঠন ও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন মাহাথির মোহাম্মদ।

‘ডক্টর এম’ কি এখন অপরিহার্য
রাজনীতিতে মাহাথির মোহাম্মদের হাতেখড়ি ১৯৪৬ সালে। তখন বয়স মাত্র ২১ বছর। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তখন উত্তাল মালয়েশিয়া। ওই সময়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) যোগ দেন তিনি। ওই দলের মূল আদর্শ ছিল জাতীয়তাবাদ। ইউনিভার্সিটি অব মালয় থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেছেন মাহাথির। এরপর জন্মভূমি কেদাহ রাজ্যে ৭ বছর চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। মাহাথির ধীরে ধীরে ‘ডক্টর এম’ নামে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ইউএমএনও দলের হয়ে ১৯৬৪ সালে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। তবে ১৯৬৯ সালে ঘটে ছন্দপতন। দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পার্লামেন্ট আসন হারান তিনি। মালয় সম্প্রদায়কে অবহেলার অভিযোগ তুলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টেংকু আবদুল রহমানের কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন মাহাথির। এতেই ক্ষমতাসীন দলের রোষের মুখে পড়েন তিনি।

মালয়েশিয়ায় কী ঘটছে, তা বুঝতে ফিরে যেতে হবে ১৯৯৮ সালে, যখন মাহাথির তাঁর প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সে সময় সমকামিতার অভিযোগে কারাগারে পাঠানোর আগে আনোয়ার ইব্রাহিম ড. মাহাথিরের ডেপুটি ছিলেন। আনোয়ার ইব্রাহিমকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার এক বছর আগে ২০০৩ সালে মাহাথির পদত্যাগ করেন। ২০০৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বারিসান ন্যাশনাল সরকারকে বিদায়ের জন্য ডা. মাহাথির মোহাম্মদ সব বিরোধী দলকে নিয়ে এক মহা ঐক্যজোট গঠন করেছিলেন। সে জোটের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বিরোধী পাকাতান হারপানের নেতৃত্ব দেন মাহাথির মোহাম্মদ। তাঁর নেতৃত্বে জোট জয় পায়। জোট গঠনের আগে মাহাথিরের সঙ্গে আনোয়ারের চুক্তি হয় যে পাকাতান জয়ী হলে পরবর্তী সরকারের দুই বছরের জন্য নেতৃত্ব দেবেন মাহাথির মোহাম্মদ। আর এরপর আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব হস্তান্তর করবেন। জোট গঠনে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আনোয়ার ইব্রাহিমের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে আগ্রহী নন মাহাথির। বরং বিজয়ী হয়ে তিনি আনোয়ার-পত্নী সেরি ডা. ওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাইলকে উপপ্রধানমন্ত্রী করেন।

পরিশেষে মাহাথির মোহাম্মদ পদত্যাগ করলেন বটে কিন্তু কথা রাখলেন না। তিনি শুধু পদত্যাগই করেননি; তাঁর দল সরকার থেকেও পদত্যাগ করেছে। দৃশ্যত, পাকাতান হারপান জোটের প্রধান দল পিকেআরের প্রধান আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে একটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছে মালয়েশিয়ায়।

মালয়েশিয়ায় সরকার গঠন করতে চাইলে আইনসভার নিম্নকক্ষ দেওয়ান রাকায়াতের ২২২ সদস্যের মধ্যে ১১২ জনের সমর্থন লাগবে। মাহাথিরের ২০১৬ সালে গঠিত বারাসাতু পার্টির বর্তমান পার্লামেন্টে ২৬টি আসন রয়েছে। বাকি ৮৬টি আসন সংগ্রহের জন্য মাহাথির, ইব্রাহিম ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিক রাজাক কেমন করে কার সঙ্গে রফার চেষ্টা করেন, তা-ই এখন দেখার বিষয়। নতুন মেরুকরণে এই সংখ্যার ভারসাম্য নির্ধারণে নির্ণায়ক দল হল মাহাথিরের পিপিবিএম। দলটি পাকাতান হারপান জোটে থাকলে এই জোটই সরকার গঠন করতে পারে। আর দলটি যদি বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে হাত মেলায়, তাহলে সরকার গঠন করবে তারা। মাহাথিরের প্রতি সাবাহ ও সারওয়াকের ক্ষমতাসীন আঞ্চলিক দুই দলের ২৭ জন এমপির সমর্থন থাকতে পারে। ফলে নতুন সরকার পাকাতানের বিচ্ছিন্ন অংশ ও বিরোধী উমনুপাস আর সারওয়াকের জিপিএস ও সাবাহর ওয়ারিসান দলের সমন্বয়ে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।

নবতিপর নেতা ডা. মাহাথিরের অধীনে মালয়েশিয়া শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি, তিনি মুসলিম বিশ্বের এক নির্ভরযোগ্য নেতাও হয়ে উঠেছেন। মাহাথিরকে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর জন্য শাসক মডেল বলে উল্লেখ করা হয়। তাঁর আমলে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি আমূল বদলে যায়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেছিলেন। সফলও হয়েছিলেন। জাপানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি মালয়েশিয়াকে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, স্টিল ও গাড়ির উৎপাদক দেশে পরিণত করেন। অথচ এর আগে মালয়েশিয়া শুধু রাবার ও টিন রপ্তানি করত। টানা ২২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। এ জন্য বলা হয়, মালয়েশিয়ায় একদলীয় শাসনের ভিতে রচনা করেছিলেন মাহাথির। এই দীর্ঘ সময়ে মালয়েশিয়াকে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেন তিনি। বর্তমানে প্রায় ৯৫ বছর বয়সেও তাঁর শরীর-স্বাস্থ্য, কর্মদক্ষতা তেমন হ্রাস পায়নি। ফলে ধারণা কর হচ্ছে, প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য মাহাথির পদত্যাগ করেননি। সম্ভবত তাঁর আরও সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক লক্ষ্য রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল পাকাতান হারপান জোট থেকে বেরিয়ে সম্ভবত দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ার ইব্রাহিমকে ছাড়াই নতুন জোট গঠন করবেন। ফলে সামনের দিনগুলোয় মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে কী ঘটছে যাচ্ছে এখনই তা আন্দাজ করা যাচ্ছে না।

কথা রাখলেন না মাহাথির
দীর্ঘদিনের বন্ধু বা সহচর আনোয়ার ইব্রাহিম দীর্ঘ সময় মাহাথিরের উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, মাহাথিরের পর আনোয়ারই মালয়েশিয়ার হাল ধরবেন। কিন্তু একসময় মাহাথিরের সঙ্গে আনোয়ারের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। শেষ পর্যন্ত জেলেও যেতে হয়েছিল। এবারও আনোয়ারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাহাথির প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে আনোয়ারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনাকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছেন। মাহাথির মোহাম্মদকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করেছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তাঁর অভিযোগ, মাহাথির মোহাম্মদের দল ২০১৮ সালে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়া ইউএমএনও সঙ্গে নতুন সরকার গঠনের ষড়যন্ত্র করছে। যদিও নির্বাচন ছাড়াই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকারের স্থলে নতুন আরেকটি সরকার আসার ব্যাপারটি উন্মোচিত হওয়ায় মালয়েশিয়ার অনেক নাগরিক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রাজনীতির পথের কাঁটা সরাতে ওস্তাদ মাহাথির
তবে এ কথাও ঠিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জঞ্জাল সাফ করতে গিয়ে বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিলেন না ড. মাহাথির। রাজনীতির পথে যাকেই কাঁটা মনে করেছেন, শক্ত হাতে সরিয়ে দিয়েছেন। মাহাথির দীর্ঘ সময়ের সহযোদ্ধা আনোয়ার ইব্রাহিমকে জেলে পুরেছেন দুর্নীতির অভিযোগে। আনোয়ারের বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগও আনা হয়েছিল। আনোয়ারের পতনের পর নাজিব রাজাক রাজনীতির সামনের কাতারে চলে আসেন। প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন নাজিব। তাঁকে হারাতেই মাহাথির আবার আনোয়ারের সঙ্গে জোট করেন। আনোয়ারের প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য বহু পক্ষ তাঁর প্রতি আহ্বান জানানোর পর মাহাথির ২০২০ সালের নভেম্বরের মধ্যে এই পদ ছাড়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। আগামী মে মাসে মাহাথিরের সরকারের দুই বছর মেয়াদ পূর্ণ করার কথা। ঠিক এ সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে জটিল ও উত্তাল অবস্থা তৈরি হলো।

মালয়েশিয়ার রাজনীতির উত্তাল অবস্থার পেছনে আন্তর্জাতিক রাজনীতিরও যোগসূত্র রয়েছে। আনোয়ার ইব্রাহিম ব্যক্তিগতভাবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পাকাতান ক্ষমতায় আসার পর থেকে সৌদি-আমিরাত বলয়ের চেয়েও তুরস্ক-ইরানের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সম্পর্ক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়। দেশটি এর মধ্যে সৌদি নেতৃত্বাধীন প্রতিরক্ষা জোট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আর তুরস্ক, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ইরানের সঙ্গে মিলে ওআইসি দেশগুলোর মধ্যে একটি শক্তিমান বলয় তৈরির লক্ষ্যে মাহাথির সম্প্রতি কুয়ালালামপুরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করেন। রিয়াদ-আবুধাবি এই সম্মেলনকে ওআইসির পাল্টা আয়োজন হিসেবে দেখেছে। এরপর তারা কোনোভাবেই তুরস্কের মতো নেতৃত্ব মালয়েশিয়া বা অন্য কোনো শক্তিমান মুসলিম দেশে দেখতে চাইছে না। আনোয়ারের ক্ষমতার কক্ষপথ থেকে অনেকখানি ছিটকে পড়ার পেছনে সৌদি-আমিরাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন।

মাহাথির আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন
এটাও অসম্ভব নয় যে মাহাথির মোহাম্মদ তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারেন। কারণ, ইতিমধ্যে পাকাতান হারপানের বেশ কয়েকটি সদস্য মাহাথিরকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অব্যাহত থাকার জন্য অনুরোধ শুরু করেছেন। ডিএপি মহাসচিব এবং মালয়েশিয়ার অর্থমন্ত্রী লিম গুয়ান ইঞ্জিনি জানিয়েছেন, মাহাথির বিরোধী দল উমনু সঙ্গে একত্রে কাজ করতে অনাগ্রহী। এ ছাড়া লিম এবং জোটের আরও কয়েকজন আনুষ্ঠানিকভাবে মাহাথিরকে প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য মনোনীত করবেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বাকি উমনু-পাস-পিপিবিএম, আজমিন কোং, ওয়ারিসান ও জিপিএসের মধ্যে যে রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রচেষ্টা চলছে, সেটি চূড়ান্ত হওয়ার পর তাঁরা রাজার কাছে সরকার গঠনের আরজি জানাবেন। সংবিধান অনুসারে তাদের দাবি মেনে নিয়ে রাজা সরকার গঠনের আহ্বান জানালে মাহাথির নতুন সরকারেরও প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।

সার্বিক পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, ৯০ পেরোনো ড. মাহাথির মালয়েশিয়ার রাজনীতির মাঠের কুশলী খেলোয়াড়। নাজিব রাজাক ক্ষমতার ফিরবেন কি না অথবা আনোয়ার ইব্রাহিম আদৌ ক্ষমতায় আসবেন কি না, তা এখনো নির্ভর করছে মাহাথিরের রাজনৈতিক চালের ওপর। পরিস্থিতি যেদিকেই যাক, আমরা মনে করি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে স্থিতিশীল ও ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং উন্নয়নের অর্থনীতিতে সফল দেশটি যেন কোনো দুর্বিপাকে না পড়ে। বাংলাদেশের বিপুল জনশক্তি সে দেশে কর্মরত থাকা ছাড়াও বাণিজ্য ও অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। সেদিক থেকেও আমরা চাইব দেশটিতে স্থিতিশীলতা অক্ষুণ্ন থাকুক।

*মোহাম্মদ আবু নোমান, কদমতলী, ঢাকা।
[email protected]