তরুণ গবেষকদের সংগঠন 'জাককানইবি রিসার্চ সোসাইটি'

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠন ‘জাককানইবি রিসার্চ সোসাইটি’র সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠন ‘জাককানইবি রিসার্চ সোসাইটি’র সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

আজকের সভ্যতা গবেষণার দান। গবেষণা ছাড়া মানবসভ্যতার অগ্রগতি কল্পনা করা যায় না। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিজস্ব পছন্দের বিষয়ে গবেষণা উৎসাহিত করতে ও দিকনির্দেশনা প্রদান করতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গবেষণার সংগঠন ‘জাককানইবি রিসার্চ সোসাইটি’ নিয়ে কাজ করে চলেছে একদল তরুণ গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণা প্রক্রিয়া শিখতে ও গবেষণা করার বিপুল স্পৃহা নিয়ে যোগ দিচ্ছে এ সংগঠনে।

নতুন জ্ঞান তৈরি করে এই রিসার্চ সোসাইটি বিশ্বময় অবদান রাখবে তাই মনে করেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলী ও সংশ্লিষ্টরা। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ সংগঠন আয়োজন করে চলেছে গবেষণা বিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার ও আন্তবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধকরণ ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে এ কার্যক্রমগুলো চলেছে।

সংগঠনের আহ্বায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. রবিউল আউয়াল মনে করেন যে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে গবেষণা নিয়ে কার্যক্রম করা হলে, গবেষণা ও গবেষণা পদ্ধতি জানা সহজ হবে এবং গবেষণায় অনেক বেশি সফলতা পাওয়া যাবে। তরুণ গবেষকদের মাঝে সংযোগও বাড়ানো যাবে, নতুন জ্ঞান তৈরি হবে এবং মানব কল্যাণে অধিক অবদান রাখা যাবে।

সম্প্রতি এ সংগঠন দীর্ঘ চার দিনব্যাপী গবেষণা কর্মশালা আয়োজন করে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম অবস্থানের দিক থেকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে প্রয়োজন যথাযথ গবেষণা-কর্মের আধিক্য, প্রয়োজন গবেষণায় সমৃদ্ধি। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা সম্পর্কে ধারণা দিতে ‘Conceptualizing Research & Leading Life as a Researcher’ নামক দীর্ঘ চার দিন ব্যাপী একটি কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় চার দিনে পাঁচটি অনুষদের জন্য বিশেষভাবে পরিচালিত হয়।

কর্মশালা ২ ফেব্রুয়ারিতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য, ৪ ফেব্রুয়ারিতে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য, ৬ ফেব্রুয়ারিতে কলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং ১১ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে আয়োজন করা হয়। কর্মশালাটি পরিচালনার জন্য ছিলেন স্ব স্ব অনুষদের যোগ্য ও গবেষণায় দক্ষ শিক্ষকেরা। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও আইন অনুষদের কর্মশালা পরিচালনা করেছেন জাককানইবির সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. মাসুদুর রহমান; লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালন বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গাজী আরাফাত উজ্জামান মার্কনী এবং স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের প্রভাষক সাদিক হাসান শুভ।

বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের কর্মশালা পরিচালনা করেছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এইচ এম কামাল এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোসা. জান্নাতুল ফেরদাউস।

কলা অনুষদের কর্মশালা পরিচালনা করেছেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ মেহেদী হাসান এবং ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক তুহীন অবন্ত।

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের কর্মশালা পরিচালনা করেছেন হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন সরকার এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিজয় চন্দ্র দাস।

কর্মশালার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণা ধর্মী প্রতিষ্ঠান। এখানে শুধু জ্ঞান আদান-প্রদান করা হয় না, জ্ঞান সৃষ্টি করা হয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন গবেষণা ধর্মী সংগঠন এই বিষয়টিকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে আজকের কর্মশালাটির আয়োজন করেছে, তাদের আমি সাধুবাদ জানাই। তিনি আরও বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সোসাইটির সকল ভালো কাজের সঙ্গে তিনি সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবেন।

জাককানইবি রিসার্চ সোসাইটি আয়োজিত কর্মশালাটির অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যাও কম ছিল না। মোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ২২৮ জন, যাদের ১২২ জন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও আইন অনুষদ থেকে, ২৭ জন বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ থেকে, ৪১ জন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ থেকে এবং ৩৮ জন কলা অনুষদ থেকে। অংশগ্রহণকারীদের সার্টিফিকেটের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ সামগ্রীও সরবরাহ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ কর্মশালাটির আয়োজনে ছিল জাককানইবি রিসার্চ সোসাইটির ২০২০ সালের জন্য নবগঠিত কমিটি, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও কতিপয় শিক্ষকেরা।

জাককানইবিতে চার দিনব্যাপী গবেষণা কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত
জাককানইবিতে চার দিনব্যাপী গবেষণা কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

জাককানইবি রিসার্চ সোসাইটির বর্তমান সভাপতি মোস্তফা সামীন ইয়াসার জানান, জাককানইবি রিসার্চ সোসাইটি আমাদের একটি স্বপ্নের সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের মূল উদ্দেশ্য হোক গবেষণা-এই লক্ষ্য নিয়ে এই সংগঠন গত প্রায় এক বছর বেশ কিছু গবেষণা বিষয়ক কর্মশালা আয়োজন করেছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। সবার সহযোগিতা ও সাড়া পেলে আমরা শিগগিরই জাতীয় পর্যায়ে আমাদের সংগঠনকে উপস্থাপন করতে পারব বলে আশা রাখি।

জাককানইবি রিসার্চ সোসাইটির আগামী কার্যপরিকল্পনার মধ্যে থাকছে—মেম্বার রিক্রুটমেন্ট ৩.০, বিভাগভিত্তিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা কর্মশালা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কনফারেন্সে অংশগ্রহণের জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা উপস্থাপন উপযোগী করে তোলা এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করা।

*নাগরিক সংবাদের জন্য লেখাটি পাঠিয়েছেন ঢাবি গবেষণা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাইফুল্লাহ সাদেক