পরিবেশ সহায়ক বায়োপ্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ানো দরকার

কম্পোস্টেবল পলিথিন নিরাপদ ও সবুজ বিকল্প, যা বায়োপ্লাস্টিক নামেও পরিচিত। ছবি: সংগৃহীত
কম্পোস্টেবল পলিথিন নিরাপদ ও সবুজ বিকল্প, যা বায়োপ্লাস্টিক নামেও পরিচিত। ছবি: সংগৃহীত

পলিথিনের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য দ্রব্যের মোড়কে পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, গৃহস্থালি প্লাস্টিক কিংবা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, যা আমাদের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ অবস্থায় আধুনিক প্রজন্মের অন্যতম আবিষ্কার কম্পোস্টেবল পলিথিন হতে পারে এ সমস্যার সমাধান, যা পরিবেশ রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কম্পোস্টেবল পলিথিন খুব সহজেই পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাবে, ফলে মাটি ও পানি কোনোটাই দূষিত হবে না।

কম্পোস্টেবল পলিথিন হলো প্লাস্টিকের পরবর্তী আবিষ্কার, যা নবায়নযোগ্য উপকরণ থেকে আসে এবং কম্পোস্টিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত ভেঙে যায়, এর ফলে মাটি ও পরিবেশের ক্ষতি রোধ করে। কম্পোস্টেবল পলিথিন নিরাপদ ও সবুজ বিকল্প, যা বায়োপ্লাস্টিক নামেও পরিচিত।

কম্পোস্টেবল পলিথিন এমন একটি পণ্য, যা মাটিকে বিষাক্ত না করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি মূলত ৯০ দিনের মধ্যে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। কিছু সংস্থা তাদের পণ্যগুলোকে নিছক বায়োডিগ্রেডেবল হিসেবে বিজ্ঞাপন দেয় কিন্তু বায়োডিগ্রেডেবল পলিথিন ও কম্পোস্টেবল পলিথিনের মধ্যে কিছু পার্থক্য থেকে যায়।

বিভিন্ন শস্য (যেমন: ভুট্টা বা আলুর র্স্টাচ থেকে) কম্পোস্টেবল পলিথিন তৈরি হয়ে থাকে। কম্পোস্টেবল পলিথিন মাটির আর্দ্রতার উপস্থিতিতে ভেঙে মাটির বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে মিশে যায়। যখন আপনি এ কম্পোস্টেবল পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করবেন, তখন আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে এ ব্যাগটি অবশ্যই কম্পোস্টেবল কি না, যেখানে সবুজ পলিথিন ব্যাগ কম্পোস্টেবল নয়, যা মাটি ও পানি দূষণ করে।

কম্পোস্টেবল পলিথিন ব্যাগ পরিবেশের ওপর কম প্রভাব ফেলে। এর অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ উপকারী দিক রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—কম্পোস্টেবল পলিথিন ব্যাগ অন্যান্য জৈব কম্পোস্টেবল পদার্থের মতো করে বিভিন্ন অণুজীব, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে যায়, যা পরবর্তী সময়ে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কম্পোস্টেবল পলিথিনের ৮৫টিরও বেশি সুবিধা লক্ষ করা গেছে। কম্পোস্টেবল পলিথিন খাদ্য সংরক্ষণের জন্য সেরা পছন্দের তালিকায় রয়েছে। কারণ, এর মধ্যে খাদ্যের অবশিষ্টাংশের গুণ ও মান বজায় থাকে।

কম্পোস্টেবল পলিথিন বিভিন্ন নবায়নযোগ্য কাঁচামাল থেকে তৈরি হয়। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও গবেষণার ফলে বায়োপ্লাস্টিকের মতো কম্পোস্টেবল পলিথিন আমাদের মানবজীবনে বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে অনেক অবদান রাখবে। সবুজ পলিথিনের দ্বারা মাটি ও পানিদূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে কম্পোস্টেবল পলিথিন ব্যাগ উত্তম বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সঙ্গে সঙ্গে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধিতে (যেমন মাটিতে বায়োমাসের পরিমাণ বৃদ্ধিতে) কম্পোস্টেবল পলিথিন ব্যাগ সাহায্য করবে। খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, সুপার মার্কেট এবং হাসপাতালগুলোসহ বর্জ্য প্যাকেজিংয়ের জন্য পলিথিনের ওপর আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রচুর নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে কম্পোস্টেবল পলিথিনের ব্যবহার অত্যাবশ্যক।

এ ধরনের পলিথিন ব্যাগে কোনো ধরনের পলিথিলিন থাকে না এবং ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যায়। এ ব্যাগগুলো খাদ্যবর্জ্য সংগ্রহে এবং বাড়ির আঙিনার বর্জ্য কম্পোস্ট করতে সাহায্য করে, যা বাড়ির আঙিনায় দুর্গন্ধ ছড়াতে, মোল্ড জন্মাতে বাধা দেয়। আমরা যদি খাদ্যের বর্জ্য সংগ্রহ করতে চাই, তাহলে অনুমোদিত কম্পোস্টেবল পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। কম্পোস্টেবল পলিথিন ব্যাগ নন-বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কম্পোস্টেবল পলিথিনের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে উদাহরণস্বরূপ এ পলিথিন সহজে ডিকম্পোজ হয় না, যদি উপযুক্ত পরিবেশ না পায়। এর দরুন এই পলিব্যাগ সামুদ্রিক পরিবেশে বিনষ্ট হয় না। কম্পোস্টেবল পলিথিন জৈব নিষ্কাশনের জন্য উপযুক্ত নয়, কারণ বায়োডিগ্রেডেশনের জন্য উষ্ণ পরিবেশ, অধিক পরিমাণে অণুজীব ও অক্সিজেন প্রয়োজন। যেকোনো আবিষ্কারের উপকারী দিকের সঙ্গে কিছু সীমাবদ্ধতাও থাকবে। তবে আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে কম্পোস্টেবল পলিথিন সবুজ পলিথিনের জায়গা দখল করবে। অন্যদিকে কম্পোস্টেবল পলিথিনে সবুজ পলিথিনের মতো ক্ষতিকর কেমিক্যাল থাকে না। তবে কিছু কম্পোস্টেবল পলিথিনে ক্ষুদ্র ধাতব প্লাস্টিক থাকে, যা বায়োডিগ্রেড হওয়ার সময় পরিবেশে চলে আসে।

বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও আধুনিক প্রযুক্তি অধিগ্রহণের ফলে পরিবেশ উপোযোগী কম্পোস্টেবল পলিথিনের ব্যবহার দ্রুত বাড়বে এবং আমরা আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারব সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে। সরকারের এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যাতে পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে সর্বত্র কম্পোস্টেবল পলিথিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে ভবিষ্যতে পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য পরিবেশ উপহার দেওয়া যায়।


লেখক: শিক্ষার্থী, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়