শিক্ষা খাতে 'ব্যয় নয়, বিনিয়োগ'ই হোক মূল লক্ষ্য

উন্নতির সুফল দীর্ঘ মেয়াদে পেতে চাইলে শিক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য হারে বিনিয়োগ করতে হবে। ছবি: প্রথম আলো
উন্নতির সুফল দীর্ঘ মেয়াদে পেতে চাইলে শিক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য হারে বিনিয়োগ করতে হবে। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে শিক্ষার হার দিন দিন বেড়েই চলছে। সেই সঙ্গে বেড়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলেন, সাক্ষরতার হার বাড়লেও বাড়েনি শিক্ষার মান।

গত কয়েক বছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অংশের পরিমাণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ১০.৭১, ২০১৬-১৭–তে ১৪.৩৯, ২০১৭-১৮–তে ১২.৬, ২০১৮-১৯–এ ১১.৫৩ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৫.২ শতাংশ। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন পরিমাণ বাজেট দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও হয়নি শিক্ষার মানের প্রসার।

গবেষণা খাতেও রয়ে গেছে ঘাটতি এবং কারিগরি শিক্ষার ও হচ্ছে না সঠিক মূল্যায়ন। ফলে শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে এবং শিক্ষা শেষে দেশে আসার প্রবণতা কমছে। দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে প্রায় ৩৩ হাজার ১৩৯ জন, ২০১৭ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬ হাজার ৩৯০–তে। দিন দিন এই সংখ্যা বেড়েই চলছে। কিন্তু শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা দেশে ফিরে আসছেন না। এতে দেশে নলেজ ওযার্কারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে দেশে নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে না। এ ছাড়া দেখা যায় যে বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের কর্মীরা বৈদেশিক নাগরিক এবং তাদের দক্ষতা দেশীয় শিক্ষার্থীদের তুলনায় বেশি হওয়ায় অধিক সম্মানিতে নিয়োগ করা হয়। ফলে দেশের অর্থ বিভিন্ন উপায়ে বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে দেশে দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধাই সৃষ্টি না হয়, তাহলে এত বাজেট বরাদ্দের পেছনে যৌক্তিকতা কী?

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ার কারণে সরকারের শিক্ষা খাতে খরচও বেড়েই চলছে। কিন্তু এই খরচ যদি আমরা বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহার করি, তাহলে হয়তো তা আমাদের দেশে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। এখন আমাদের করণীয় কী?
• বিনিয়োগ শুধু অর্থেরই হয় না, জ্ঞানেরও হয়। তাই শুধু শিক্ষা খাতে প্রতিবছর বাজেট নির্ধারণ না করে গবেষণা ক্ষেত্রেও করা উচিত।
• বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কমানো ও চলতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানোন্নয়ন করা দরকার।
• কারিগরি শিক্ষার দিক সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আগ্রহ তৈরি করা এবং কারিগরি শিক্ষার মান সাধারণ শিক্ষার মতোই মূল্যায়ন করা। কারণ দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কারিগরি খাতে শিক্ষা খাতের মাত্র ১২ শতাংশ বরাদ্দ।
• শিক্ষার্থীদের দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রেরণ করা এবং শিক্ষা শেষে সব সুযোগ–সুবিধাসহ দেশে ফেরত আনার আগ্রহ তৈরি করা।
• বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বৈদেশিক শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে তোলা।
• শিক্ষার্থীদের এমন দক্ষ করে গড়ে তোলা, যেন দেশের কর্মসংস্থানে দেশের শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পান।

একটি দেশের অর্থনীতিতে শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু অপরিকল্পিত খরচ ও অব্যবস্থাপনা দেশের জন্য নেতিবাচক। পরিকল্পিত ব্যয় ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাই দেশের দীর্ঘকালীন উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে। তাই অযথা ব্যয় না করে সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের উন্নতিই আমাদের কাম্য।

*লেখাটি রামিসা রহমান শীতু, মাকসিদা আক্তারী ও মোহাম্মদ মশিউর রহমান পাঠিয়েছেন। তাঁরা সবাই জাবির মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী।