আত্মপ্রত্যয়ী লিটন দাসের আশা পূরণ হবে কি

লিটন দাস
লিটন দাস

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে লিটনের ব্যাটিং গড় ৪ ধাপ বেড়েছে। ২৮.২২ গড়ে ব্যক্তিগত ৯০৩ রান নিয়ে শুক্রবার ম্যাচ শুরু করেছিলেন লিটন দাস। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সাবলীলভাবেই দিনের সূচনা করে তামিম–লিটন জুটি। শুরুতে পিছিয়ে থাকলেও সাবধানী ব্যাটিংয়ে মুহূর্তেই তামিমকে টপকে যান লিটন। ইনিংসের ১৬তম ওভারে অর্ধশতক এবং ৩৩তম ওভারে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক তুলে নেন লিটন দাস। মাঝে বৃষ্টি এসে খেলাকে সাময়িক পণ্ড করে। দর্শকদের মনে বিরক্তির সৃষ্টি করে। বৃষ্টির পরে মাঠে যেন এক দানব লিটনের আবির্ভাব দেখেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

শেষ ২১ বলে লিটনের ব্যাট থেকে আসে মূল্যবান ৬৮ রান। তাতেই রেকর্ড লিটন দাসের। টপকে ফেলেন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে তামিম ইকবালের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মাইলফলক। মাঠ ছাড়ার আগে ব্যক্তিগত ঝুলিতে ১৭৬ রানের দানবীয় স্কোর যোগ করেই তবে বিদায় হন। এতেই এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে লিটনের ব্যাটিং গড় ৪ ধাপ বাড়ে। ম্যাচ শেষে ৩২ গড়ে বর্তমানে ব্যক্তিগত ১০৭৯ রানে অবস্থান করছেন লিটন দাস।

২০১৫ সালে লিটন দাসের ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয়। মোস্তাফিজের জাদুতে সেবার বাংলাদেশ সিরিজ জিতলেও অভিষেকে আহামরি কিছু করতে পারেননি লিটন। ২০১৫ সালে ৯ ম্যাচ সুযোগ পেয়ে নিজের ব্যর্থতায় দল থেকে বাদ পড়েন। ঘরোয়ায় পারফর্ম করে ২০১৭ সালে আবার দলে ডাক পান লিটন। ৩ ম্যাচ সুযোগ পেলেও ব্যর্থতা আবার হানা দেয় লিটনকে। তাতেও ম্যানেজমেন্ট আস্থা হারায়নি। সুযোগ পেলেই লিটনকে ডেকেছে, দলে সুযোগ দিয়েছে। খেলোয়াড় লিটনের আবির্ভাব হয় ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে। ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে ১২১ রানের কাব্যিক ইনিংস লিটনকে ক্রিকেট–বিশ্বে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়। ২০১৮ সালেই ক্যারিয়ারের প্রথম শতক, অর্ধশতক অর্জন করেন লিটন দাস। বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন। সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরির কারণে তা ঢাকা পড়ে যায়। ২০১৯ সালে ৯ ম্যাচে ৩২.৮৮ গড়ে করেন ২৬৩ রান। এ বছর জিম্বাবুয়ে দিয়ে লিটনের ওয়ানডেতে সূচনা হয়। তাতে ৩ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরিতে ৩১১ রান আদায় করে পরিণত লিটনের ইঙ্গিত দেন।

‘ক্রিকেট একটি হতাশার খেলা’—কিছুদিন সংবাদ সম্মেলনে এমনটা বলেছিলেন লিটন দাস। শুক্রবার লিটনের ১৭৬ রানের দানবীয় ইনিংস দেখে অনেকেই দেশের প্রথম দ্বিশতকের আশা করেছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন, পূর্ণ ওভারের খেলা হলে লিটন কাজটা সম্পন্ন করতে পারতেন। দর্শকমনে এমন আক্ষেপ, হতাশার সুর বরাবরই বিরাজ করছিল। দ্বিশতকের কতটা আশা করেছিলেন লিটন? উত্তরে লিটন বলেছেন, ‘এমন কোনো চিন্তাও করেননি তিনি। বরং ক্যাপ্টেন মাশরাফির বিদায়ী দিনে ম্যাচ জেতাই ছিল লক্ষ্য।’

কিছুদিন আগে ৬০ থেকে ৭০ করতে না পারার আক্ষেপ ভোগা লিটন ছিলেন বড্ড আত্মপ্রত্যয়ী। শুক্রবার দেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দেড় শতক পার করেছেন। লিটন এবার দ্বিশতকের স্বপ্ন দেখতে পারেন। সুযোগ পেলে তা করেও দেখানোর চেষ্টা করবেন বলে আশা অবশ্য তিনি করেছেন। স্বপ্নই মানুষকে বড় করে তোলে। কঠোর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস হয়তো লিটনের স্বপ্নকে একদিন বাস্তবে পরিণত করবে।

*লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।