জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 'আবাসিক থেকে অনাবাসিকে রূপান্তর'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের নবীন শিক্ষার্থীদের (৪৯তম আবর্তনের) ক্লাস শুরু হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল কর্তৃপক্ষ কয়েক দিন আগে সিটসংকটের কারণ দেখিয়ে হলে কোনো সিট না দেওয়ার নোটিশ দিয়েছে। কোনো হল এক বা দুদিন আগে নোটিশ দিয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী চরম ভোগান্তি ও গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ছাত্রীদের জন্য বিষয়টি আরও ভয়াবহ।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছেন। তাঁরা অন্তত গণরুমে ঠাঁই নেওয়ার জন্য ক্যাম্পাসে আসছেন। হলের সামনে এসে যখন জানতে পেরেছেন কোনো স্থান নেই, তখন বিষয়টি তাদের জন্য মহাদুশ্চিন্তার। সারা দিন বা সারা রাত যানবাহনে এসে যখন জানলেন হলে কোনো জায়গা নেই, তখন হঠাৎ করে থাকার জন্য তাঁর পক্ষে কোনোই ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অন্তত ১৫ দিন বা ১ মাস আগেও নোটিশ দিয়ে জানাত, তাহলে অনেক শিক্ষার্থী আগেই এসে হয়তো আত্মীয়স্বজনের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করতেন। অথবা বাইরে কোথাও থাকার জন্য রুম বা বাসা ঠিক করতে পারতেন। কিন্তু ক্লাস শুরুর কয়েক দিন আগে নোটিশ দেওয়া হলো, হল কর্তৃপক্ষ কোনোই সিট দিতে পারবে না। ফলে, এসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নের যাত্রার প্রস্তুতির পরিবর্তে দুঃস্বপ্নে নিমজ্জিত হলেন।

এবার আসি কেন সিটসংকট। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। হলের সিটসংখ্যার সমানসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তীব্র আবাসনসংকট দেখা দিয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো মেরুদণ্ডহীন প্রশাসনের নির্লিপ্ততা, বিভাগের শিক্ষকদের সঠিক সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা শেষ না করে সেসন জট সৃষ্টি ও ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের ছাত্ররাজনীতির নামে ছাত্র–ভোগান্তি সৃষ্টি করা। প্রশাসন এ কারণে হলে সিট দেওয়ার দায়িত্ব হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের। কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব পালন না করে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের কাছে নতজানু হয়ে রয়েছে। ফলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ভাইয়েরা ৪২, ৪১, এমনকি ৪০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও আছেন। আর তাঁরা তো হলের অভিভাবক–জমিদার, তাঁদের আবার ৪ জনের সিটে একা না থাকলে চলে না। ফলে এটা সিট–সংকটের কারণ।

অন্যদিকে, বিভাগে বিভাগে সেসনজট। ক্লাস শুরু হয়েছে ৪৯তম আবর্তনের (৪৯তম ব্যাচ)। তাঁরা ভর্তি হয়েছেন ৪৪তম আবর্তনের বিপরীতে। অর্থাৎ ৪৪তম ব্যাচের মাস্টার্স শেষ করে হল ছেড়ে দেবেন আর ৪৯ ব্যাচ হলে সিট নেবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ৪৪ তো দূরের কথা, কোনো কোনো বিভাগে ৪৩ ব্যাচের মাস্টার্সই শেষ হয়নি। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গত বছরের নবীন শিক্ষার্থীরা বছরের নানা সময়ে হলের সিটের জন্য মাঝেমধ্যেই বিক্ষোভ অবস্থান করেছিলেন। যেটা বর্তমান প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে আছে। ফলে অন্যান্য বছরগুলোয় নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য গণরুমের ব্যবস্থা করা গেলেও এবার সেটিও করা যায়নি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী তারা এই দায়িত্ব কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না। আর এ ফলে জাহাঙ্গীরনগর আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ শিক্ষা বর্ষে অনাবাসিকে রূপান্তর হয়ে গেল। এখন কত দিনে এ সমস্যার সমাধান হয়, দেখার বিষয় সেটাই।

লেখক: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী

নতুন শিক্ষার্থীদের হলের বাইরে থাকার জন্য মীর মশাররফ হোসেন হলের নোটিশ। ছবি: লেখক
নতুন শিক্ষার্থীদের হলের বাইরে থাকার জন্য মীর মশাররফ হোসেন হলের নোটিশ। ছবি: লেখক
নতুন শিক্ষার্থীদের হলের বাইরে থাকার জন্য মওলানা ভাসানী হলের নোটিশ। ছবি: লেখক
নতুন শিক্ষার্থীদের হলের বাইরে থাকার জন্য মওলানা ভাসানী হলের নোটিশ। ছবি: লেখক
নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে নোটিশ। ছবি: লেখক
নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে নোটিশ। ছবি: লেখক