অপরূপ সুন্দর সাজেক যেন শিল্পীর নিপুণ হাতে আঁকা ছবি

মুগ্ধ হতে হয় শুভ্র মেঘেদের এমন ভেলা দেখে। এমন ছবি গল্প হয়ে গেঁথে আজীবন বেঁচে থাকে পাতাহীন স্মৃতির ডায়েরিতে।
মুগ্ধ হতে হয় শুভ্র মেঘেদের এমন ভেলা দেখে। এমন ছবি গল্প হয়ে গেঁথে আজীবন বেঁচে থাকে পাতাহীন স্মৃতির ডায়েরিতে।

জীবনের অভিধানে ব্যস্তময় শব্দটিকে বাদ দিয়ে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে কার না ভালো লাগে। তাই তো আমরা সৌন্দর্যপীপাসু বেরিয়ে পড়েছিলাম প্রকৃতির টানে মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালিতে।

আমাদের ভ্রমণের গাড়ি যখন খাগড়াছড়ি দিয়ে যাচ্ছিল, তখন গাড়িটি সর্পিল গতিতে চলছিল। চান্দের গাড়িতে করে সাজেক যাওয়া। সর্পিল গতিতে ও চান্দের গাড়িতে এর আগে কখনো চলা হয়নি তাই হৃদয়ে এক অন্য রকম আনন্দ অনুভূত হচ্ছিল।

সাজেক যেতে যেতে দেখেছিলাম কিছু দূর পরপর পাহাড়িদের ঘরবাড়ি, প্রাত্যহিক জীবনের সহজ–সরল জীবনযাত্রা। প্রায় ২২ ঘণ্টা পর পৌঁছালাম প্রকৃতির অপূর্ব নৈসর্গিক সাজেক ভ্যালিতে। তারপর গিয়েছিলাম এক রাত থাকার জন্য আগে ঠিক করা রিসোর্টে। খাওয়াদাওয়া শেষে ঘুরতে বের হয়েছিলাম। তারপর যাই হেলিপ্যাডে। সেখানে থেকে পুরো সাজেক দেখা যায়। হ্যালিপ্যাডে গিয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য সত্যি মনকে আকৃষ্ট করেছিল। সেখানে দল বেঁধে সেলফি তুলছিলেন ঘুরতে আসা পর্যটকেরা। আমরাও ছবি তোলা ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছিলাম বিকেলের সময়টা। পর্যটকদের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছিল এই হ্যালিপ্যাডে।

এর আগে পরিদর্শন করেছিলাম ঐতিহ্যবাহী লুসাই গ্রাম। ওখানে এক ব্যক্তির আলাপচারিতায় জানা যায়, আগে এখানে প্রায় শতাধিক লুসাই পরিবারের বসবাস ছিল। নানা কারণে তারা ভারতের মিজোরামে চলে গেছে। বর্তমানে কয়েকটি লুসাই পরিবার এখানে বসবাস করে।

এরপর রিসোর্টে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তখন ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা সাতটায়। পাপ্পু ভাইয়ের স্লোগান, ঘুমানোর অনেক রাত পাবে কিন্তু রাতের সাজেক পাবে না। ভাইয়ের নেতৃত্বে বের হয়ে গানের আসর বসায় প্রথম হেলিপ্যাডে। রাতে তারাভরা আকাশ মৃদুমন্দ হাওয়ায় গানের আড্ডাবাজি ও বাঁশের কাপে চায়ে চুমুক স্যাজেক ভ্যালি ভ্রমণের আনন্দে পূর্ণতা এনেছিল।

দূর পাহাড়ে সূর্যের রক্তিম লালচে আভায় আকর্ষিত হয়ে সব ভুলে প্রকৃতি উপভোগ করেন অনেকে। ছবি: লেখক দূর পাহাড়ে সূর্যের রক্তিম লালচে আভায় আকর্ষিত হয়ে সব ভুলে প্রকৃতি উপভোগ করেন অনেকে।
দূর পাহাড়ে সূর্যের রক্তিম লালচে আভায় আকর্ষিত হয়ে সব ভুলে প্রকৃতি উপভোগ করেন অনেকে। ছবি: লেখক দূর পাহাড়ে সূর্যের রক্তিম লালচে আভায় আকর্ষিত হয়ে সব ভুলে প্রকৃতি উপভোগ করেন অনেকে।

পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই সূর্য উদয় দেখা ও মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যেতে প্রস্তুত সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া হাজারের অধিক ফুট উঁচু কংলাক পাহাড়ে যাওয়ার জন্য। ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল সাড়ে পাঁচটায়। চান্দের গাড়িতে করে গেলাম কংলাক পাহাড়ে। কংলাক পাহাড়ে যাওয়ার পথে মিজোরাম রাজ্যের সীমান্তবর্তী বড় বড় পাহাড়, চারদিকে মেঘের আনাগোনা আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। হাজার ফুট উঁচুতে উঠে যখন মেঘ আমাদের ছুঁয়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল এ অন্য এক পৃথিবী। সাজেকের সূর্য উদয় ও সূর্যাস্তের তুলনা হয় না। হৃদয়ে এনেছিল অন্য রকম প্রশান্তি। প্রকৃতি এতটা সুন্দর হতে পারে, সাজেক ভ্যালিতে না গেলে জানার অপূর্ণতা রয়ে যেত। যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমিক সাজেক ভ্যালির প্রেমে পড়তে বাধ্য।

কংলাক থেকে রুইলুই পাহাড়ে এসে ফিরতি পথচলা শুরু। ফিরতি পথে খাগড়াছড়ি শহরে রহস্যময় গুহা আলুটিলা ঘুরে দেখলাম। এই গুহায় বিচিত্র এক অভিজ্ঞতা হলো মাত্র পনেরো মিনিটের একটি ভ্রমণে। এখান থেকে ফিরেছিলাম নিজেদের গন্তব্যে।

অর্থাৎ এ সাজেক বাংলাদেশের দক্ষিণ–পশ্চিমে অবস্থিত রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত। সাজেক থেকে ভারতের মিজোরাম রাজ্য আট কিলোমিটার দূরে এবং হাঁটার সময় মাত্র দুই ঘণ্টা।

*লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ইবি