এ এক অন্য বাংলাদেশ

আজও দুর্দান্ত ব্যাট করেছেন লিটন দাস। ছবি: প্রথম আলো
আজও দুর্দান্ত ব্যাট করেছেন লিটন দাস। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে তিন ফরম্যাটেই হোয়াইটওয়াশ করছে। আরে ভাই, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জিতেছে! বড় কোনো দলের সঙ্গে জিতেনি।

জিম্বাবুয়ে বড় দল না, এ সফরে জিম্বাবুয়ে ভালো ক্রিকেটও খেলেনি। তবে জিম্বাবুয়ের সঙ্গেই বাংলাদেশ হেরেছিল ২০১৮ সালে সিলেট টেস্টে, ১৫১ রানে। টি-টোয়েন্টিতে যেকোনো দলের ভালো দিনে সে দল জিততে পারে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে? জিম্বাবুয়ে ভালো খেলেছিল বলেই বাংলাদেশকে হারাতে পেরেছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই টেস্ট সিরিজের আগের সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ, এর আগেরটাতেও না। দুই সিরিজই ড্র হয়েছিল। সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ২০১৪ সালে, ৩-০ ব্যবধানে। আর ২০১৩ সালে ৩৩৫ রানের বিশাল ব্যবধানেই হেরেছিল বাংলাদেশ।

জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্টে এ পর্যন্ত চারবার হোয়াইটওয়াশের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ, অবশ্য সব কটিই ২০১২ সালের আগে। ২০১১ ও ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের কাছে ওয়ানডে সিরিজেও হারে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে এই সিরিজের আগে মাত্র একবারই জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ, তিনবার করেছিল ড্র।

তখনকার জিম্বাবুয়ে আর বর্তমান জিম্বাবুয়ের মাঝে অনেক পার্থক্য। আর তখনকার বাংলাদেশের সঙ্গে এখনকার বাংলাদেশেরও অনেক পার্থক্য। বাংলাদেশ কিছুটা হলেও উন্নতি করেছে, আর জিম্বাবুয়ের তো অবনতি হচ্ছেই। জিম্বাবুয়ের এই দলের ব্যাটিং, বোলিং অনেক দুর্বল, এটা ঠিক। কিন্তু এই দুর্বল দলের বিপক্ষেও এভাবে জয়লাভ অবশ্যই বিশেষ না হলেও ভালো কিছু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সব কটি ম্যাচে জয়ের ব্যবধান দেখলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

একমাত্র টেস্ট: ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়

প্রথম ওয়ানডে: ১৬৯ রানে জয়

দ্বিতীয় ওয়ানডে: ৪ রানে জয়

তৃতীয় ওয়ানডে: ১২৩ রানে জয়

প্রথম টি-টোয়েন্টি: ৪৮ রানে জয়

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি: ৯ উইকেটে জয়

আরভিনকে আউট করে সতীর্থদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি আফিফের। ছবি: প্রথম আলো
আরভিনকে আউট করে সতীর্থদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি আফিফের। ছবি: প্রথম আলো

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও বিশাল রানে জয়ের সম্ভাবনা ছিল। ক্রিকেট যে অনিশ্চয়তার খেলা, সে ম্যাচটাও তার একটা প্রমাণ। ৩২৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২২৫ রানে জিম্বাবুয়ের নেই ৭ উইকেট। সেখান থেকে বোলার তিরিপানো ২৮ বলে ৫৫ করে খেলা নিয়ে যান শেষ বল পর্যন্ত। অথচ এর আগে তিরিপানোর সর্বোচ্চ রান ছিল ২১।

ওয়ানডেতে সিরিজের সব কটি ম্যাচেই কিন্তু বাংলাদেশ তিন শ রান পার করেছে, তৃতীয় ওয়ানডেতে ৭ ওভার কম খেলেও ৩২২ রান করেছিল বাংলাদেশ। এই সিরিজের আগে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের সঙ্গে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন শর অধিক রান করেছে মাত্র ২ বার, যেখানে জিম্বাবুয়ে করেছে ৬ বার। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে একটি ইনিংসেও বাংলাদেশ তিন শতাধিক রান করতে পারেনি। একই বছর ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ২১৬/৯।

জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সব ম্যাচেই আমাদের জয় প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু এভাবে দাপটের সঙ্গে জয় পাওয়া তো অবশ্যই বড় কিছু। এ সিরিজকে আত্মবিশ্বাস অর্জনের সিরিজও বলা যেতে পারে। বিশ্বকাপের পরে বাংলাদেশ যেভাবে হারছিল, পাকিস্তান সিরিজের আগে এই আত্মবিশ্বাসের খুব প্রয়োজন ছিল। মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি, লিটন দাসের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, তামিম ইকবালের টানা দুই সেঞ্চুরিসহ অন্য সব রেকর্ড বাদ দিলেও আত্মবিশ্বাসটাই এই সিরিজের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ক্রিকেটে নিজের প্রতি বিশ্বাসটাও যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই জয়ে আত্মবিশ্বাসের স্তর অনেকটাই ওপরে চলে যাবে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশ এই প্রথমবারের মতো কোনো দলকে তিন সংস্করণেই ধবলধোলাই করল। এর আগে পাকিস্তান সফরে গিয়ে বাংলাদেশ খালি হাতেই ফিরেছিল। ভারত সফরে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি জিততে পেরেছিল। বিশ্বকাপ শেষে শ্রীলঙ্কা সফরেও হেরেছিল সব ম্যাচ। এককথায় এই সিরিজের আগে বাংলাদেশ খুব বাজে সময়ই পার করছিল। কিন্তু এই সিরিজে আমরা এক অন্য বাংলাদেশই দেখলাম!

জিম্বাবুয়ে ওপেনারকে তুলে নেওয়ার পর সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাস আল আমিনের। ছবি: প্রথম আলো
জিম্বাবুয়ে ওপেনারকে তুলে নেওয়ার পর সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাস আল আমিনের। ছবি: প্রথম আলো

আসুন জয়ের আনন্দে মেতে উঠি ও জয় উদ্‌যাপন করি...।

*লেখক: সিলেটের এমসি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী