লালাখাল না 'নীলখাল'

লালাখালের স্বচ্ছ পানি। ছবি: লেখক
লালাখালের স্বচ্ছ পানি। ছবি: লেখক

অনেকে বলে আমাদের দেশে দেখার মতো কিংবা ঘোরার মতো কিছুই নেই। আমি বলি কী, একবার বের হন বিসমিল্লাহ বলে, দেখবেন আমাদের দেশটা কত সুন্দর। কি নেই আমাদের দেশে? সাগর, পাহাড়, সবুজ অরণ্য—সবই আছে, শুধু চোখ মেলে তাকালেই হয়। আমরা সিলেট ঘুরতে গেলে প্রথমেই চিন্তা করি জাফলং, ভোলাগঞ্জ, রাতারগুল, চা–বাগান ইত্যাদি। কিন্তু সিলেট এমন একটি জায়গা, যেখানে আপনি ১৫ দিন ঘুরলেও শেষ করতে পারবেন না। যাইহোক, আজকে এমন একটা জায়গার কথা বলব যেখানে অনেকেই যেতে চায়, কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে পারে না কিংবা কীভাবে কোন সময়ে যেতে হয় জানে না।

সিলেট অনেকবার যাওয়া হয়েছে, কিন্তু একটা বড় গ্রুপের অভাবে লালাখাল যাওয়া হচ্ছিল না। আপনি যদি বাজেট ট্রাভেলার হন, তাহলে মিনিমাম সাত থেকে আটজনের কম হলে আপনার খরচ একটু বেশি পড়বে। কারণ, নৌকা বা ট্রলারে করে আপনাকে লালাখাল ঘুরতে হবে। আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে এর বিকল্প নেই। এত সুন্দর একটি জায়গায় যাওয়ার লোভ সামলাতে পারছিলাম না, অবশেষে বড় একটা গ্রুপের ব্যবস্থা করে ফেললাম।

ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান, মানে জিরো পয়েন্ট। সিলেট থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে জাফলং রোডে সারিঘাট নামক স্থানে নেমে ঘাটে গিয়ে তো চিন্তায় পড়ে গেলাম! নৌকা ভাড়া করতে গিয়ে শুনি, ঘাট থেকে জিরো পয়েন্ট এক ঘণ্টার নৌপথ। যেতে হলে ভাড়া গুনতে হবে দুই নৌকায় পাঁচ হাজার টাকা! যদিও আমরা ২৫ থেকে ২৬ জন, দুটি নৌকা লাগবেই। অটো দিয়ে যাওয়ার বিকল্প পথ অবশ্য ছিল, ভাড়াও অনেক কম পড়ত, জনপ্রতি ১৫ টাকা। কিন্তু আমরা সেটা করিনি, কারণ, লালাখালের আসল সৌন্দর্য দেখতে হলে নৌযান ছাড়া কোনো উপায় নেই। যাইহোক, অনেক চেষ্টায় আমরা ২ হাজার ৮০০ টাকায় নৌকা ভাড়া করে যাই।

কেউ লালাখালে যেতে চাইলে ভ্রমণের জন্য শীতকালই উপযুক্ত সময় (ডিসেম্বর-মার্চ)। নৌপথে যেতে যেতে যেদিকে চোখ যাবে, আপনার মুগ্ধতায় নেমে আসবে মগ্নতা। নিশ্চিতভাবে কিছুক্ষণের জন্য আপনি হারিয়ে যাবেন কল্পনার রাজ্যে। নদীতে অসংখ্য বাঁকের দেখা মিলবে। প্রতিটি বাঁকই দেখার মতো সুন্দর। এখানে না এলে জানতামই না, নদীর পানি এত স্বচ্ছ হতে পারে! মূলত নীল আর স্বচ্ছ পানির জন্যই লালাখাল জনপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আর এই নীল পানি শীতকাল ছাড়া দেখতে পাবেন না। এই নীল আর স্বচ্ছ পানি দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন নিশ্চিত। এই নীলের রাজ্যকে আমি লালাখাল বলতে পারি না। আমার কাছে ইহা ‘নীলখাল’ হয়ে থাকবে। আরেকটা কথা, কেউ লালাখাল ঘুরতে চাইলে অবশ্যই অন্তত সাত থেকে আটজনের গ্রুপ করে আসবেন, অন্যথায় খরচ পড়বে অনেক।

পানির রঙের জন্য অনেকেই লালাখানকে ‘নীলখাল’ বলে। ছবি: লেখক
পানির রঙের জন্য অনেকেই লালাখানকে ‘নীলখাল’ বলে। ছবি: লেখক

কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে আপনি সিলেটগামী যেকোনো বাসেই সরাসরি যেতে পারবেন। ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সিলেটের গাড়ি ছেড়ে যায়। ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লাগবে। সিলেট বাসস্ট্যান্ড থেকে অনেক সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাবেন সারিঘাটের, ৩০-৪০ মিনিটেই আপনি চলে যেতে পারবেন সেখানে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য
আমরা যেখানেই যাই না কেন, পরিবেশের প্রতি যেন যত্নবান হই। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখি। যেন পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের রেখে যাওয়া একটি সুন্দর সুস্থ পৃথিবী পায়।

*লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়