নারিকেলবাড়িয়ায় এক দিন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ময়মনসিংহে ফুলবাড়িয়া উপজেলার শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ ও বার্ষিক বনভোজনে শিক্ষার্থীরা। ছবি: লেখক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ময়মনসিংহে ফুলবাড়িয়া উপজেলার শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ ও বার্ষিক বনভোজনে শিক্ষার্থীরা। ছবি: লেখক

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল আটটা। গভীর ঘুমে ছিলাম। ফোনের রিংটোনে ঘুম ভেঙে গেল। ফোনটা রিসিভ করতেই রকেট ভাইয়ের ফোন। তুমি কোথায়? তাড়াতাড়ি আসো। সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। ভুলেই গিয়েছিলাম (১০ মার্চ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ ও বার্ষিক বনভোজন। ফুলবাড়িয়া পরিবারের আয়োজনে এ বরণপর্ব অনুষ্ঠিত হবে। ‘ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট থাকুক আজীবন’—এই স্লোগানে যাত্রা শুরু করবে ‘ফুলবাড়িয়া পরিবার’।

ঘুম থেকে উঠতে মন চাইছিল না। ভাবলাম আরেকটু ঘুমাই। নিদ্রাদেবীও হয়তো তাই চাইছিলেন। ফলে ঘুম ভাঙতে একটু দেরিই হয়ে গেল। আবার ভাইয়ের ফোন। অবশেষে ঘুম থেকে উঠতেই হলো। উঠেই তৈরি হয়ে নিলাম।

রিকশায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে এলাম। এসে দেখি সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের গন্তব্য নারিকেলবাড়িয়া! অবাক হওয়ার কিছু নেই এটা শহীদ তিতুমীরের নারিকেলবাড়িয়া নয়। এটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নামে পরিচিত জায়গা। ক্যাম্পাস থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে, রাজশাহী বাইপাস রোড থেকে ডানে এক কিলোমিটার ভেতরে এই ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের অধীনে রয়েছে ক্ষুদ্র এই ক্যাম্পাসটি। এখানে রয়েছে ভেটেরিনারি ক্লিনিক অ্যান্ড ফার্ম হাউস। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগ ও ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগসহ কৃষি অনুষদের পরীক্ষণ ও গবেষণা খামার।

আগেই অটোরিকশা ঠিক করা ছিল। তাই বেগ পেতে হলো না। যাত্রা শুরু করলাম প্রায় ৪০ জন। তাড়াহুড়ো করতে করতে গিয়ে ক্যামেরা নিলাম ঠিকই কিন্তু ভুলে গেলাম মেমোরি কার্ড নিতে। আবার দৌড় হলের দিকে।

নারিকেলবাড়িয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নামে পরিচিত একটি জায়গা। ক্যাম্পাস থেকে তিন কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে, রাজশাহী বাইপাস রোড থেকে ডানে এক কিলোমিটার ভিতরে এই ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের অধীনে রয়েছে ক্ষুদ্র এই ক্যাম্পাস। ছবি: লেখক
নারিকেলবাড়িয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নামে পরিচিত একটি জায়গা। ক্যাম্পাস থেকে তিন কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে, রাজশাহী বাইপাস রোড থেকে ডানে এক কিলোমিটার ভিতরে এই ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের অধীনে রয়েছে ক্ষুদ্র এই ক্যাম্পাস। ছবি: লেখক

সকাল ১০টায় পৌঁছে গেলাম বনভোজন স্পট নারিকেলবাড়িয়ায়। গেটে প্রবেশ করতেই দেখলাম চারদিকে সারি সারি আম, লিচু, বেলসহ আরও নানান রকম গাছ। পৌঁছানোর পর যথারীতি শুরু হলো রান্নার কাজ। কেউ রান্না করার চুলা তৈরি করছে, কেউবা আবার থালা-বাসন ধোয়ার কাজে ব্যস্ত। সবার সহযোগিতায় শেষ হলো রান্নার কাজ। সবাই একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের পর শুরু হলো নবীন শিক্ষার্থীদের বরণপর্ব। পরিবারের বড় ভাইয়েরা তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিল এক এক করে।

‘ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট থাকুক আজীবন’—এ স্লোগানে যাত্রা শুরু করে ‘ফুলবাড়িয়া পরিবার’। ছবি: লেখক
‘ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট থাকুক আজীবন’—এ স্লোগানে যাত্রা শুরু করে ‘ফুলবাড়িয়া পরিবার’। ছবি: লেখক

নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডির মধ্যে নয়। তোমাদের লক্ষ্য নিজ এলাকায় স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মশালা, শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা, সামাজিক সচেতনতামূলক, সাংস্কৃতিক ও গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে ফুলবাড়িয়া উপজেলা তথা সমগ্র দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে অবদান রাখা। ভর্তি-ইচ্ছুক এবং অধ্যয়নরত ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যায় পরিবারের মতো একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর মহৎ উদ্দেশ্যে গঠিত প্ল্যাটফর্মটিই হলো ফুলবাড়িয়া পরিবার। তোমরা এর মাধ্যমে নিজেরদের মধ্যে আত্মসম্পর্ক বৃদ্ধি করতে পারবে।’

বালিশ খেলায় মত্ত শিক্ষার্থীরা। ছবি: লেখক
বালিশ খেলায় মত্ত শিক্ষার্থীরা। ছবি: লেখক

এরপরে শুরু হলো অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্ব। বিভিন্ন রকমের খেলাধুলা। প্রথমেই সবার অংশগ্রহণে মিউজিকের তালে তালে বালিশবদল খেলা। পরে অনুষ্ঠিত হয় ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ। এরপরে সর্বশেষ আকর্ষণ পাতিল ভাঙা। খেলা শেষে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। এভাবেই হাসি-আনন্দ, গল্প, আড্ডা আর গানে কেটে গেল একটি দিন।

একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। আমাদের সব আয়োজন একে একে শেষ হলো। এবার আমাদের ক্যাম্পাসে ফেরার পালা। আবার সেই অটো রিকশায় ক্যাম্পাসের উদ্দেশে যাত্রা। বিদায় জানালাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস খ্যাত নারিকেলবাড়িয়াকে।

*লেখক: শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়