মুজিব বর্ষে মুজিবনগর দর্শন

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষাসফর হয় মুজিবনগরে। ছবি: সংগৃহীত
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষাসফর হয় মুজিবনগরে। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি বছর পার করে চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ করেছি। বিভাগের শিক্ষাসফরের কথা শুনলেই মন হয়ে যায় আনন্দে আত্মহারা। শিক্ষাসফরে যাওয়ার তারিখ ঠিক হলো ৯ মার্চ আর দিনটি ছিল সোমবার। আর স্থান নির্ধারণ করা হলো বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের রাজধানী মেহেরপুরের মুজিবনগর।

বলতে বলতে সেই কাঙ্ক্ষিত দিন চলে এল। যাওয়ার আগের দিন বিভাগের সবার প্রিয় হারুন অর রশিদ স্যার প্রয়োজনীয় সব পরামর্শ এবং বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিলেন। স্যার আমাদের ভোর পাঁচটার মধ্যে উপস্থিত থাকার জন্য বললেন। স্মৃতির পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে রাত প্রায় একটা বেজে গেল কিন্তু ঘুমের লেশমাত্র নেই। ভাবতে ভাবতে মনের অজান্তেই ঘুমিয়ে গেলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল তখন রাত সাড়ে তিনটায়।

যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। যাওয়ার উদ্দেশে সৈয়দ আমীর আলী হল থেকে বের হয়ে অদ্ভুত এক পৃথিবীকে দেখলাম। আকাশে গুটি কয়েক তারকা আর আধখাওয়া চিকন বাঁকানো এক টুকরো চাঁদ। চারদিক সুনসান নীরব যেন এক ভুতুড়ে পরিবেশ। আজকে ক্যাম্পাসটাও কেমন যেন অপরিচিত মনে হচ্ছে। সারি বাঁধা গাছগুলো যেন গভীর ঘুমে নিমগ্ন সবুজ পাতাগুলোয় আলতো করে হাওয়া দোল দিয়ে যাচ্ছে। যেন মা তার শিশুটিকে পরম আদরে ঘুমপাড়ানির গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছে। দেখতে দেখতে চলে এলাম ডিপার্টমেন্টের সামনে। সেখানে এসে দেখি অনেকে এসেছে আর অনেকে এখনো আসতে পারেনি। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে সবাই চলে এল। বাহ্! আজকে সবাইকে দারুণ দেখাচ্ছে। সবাই আসায় মুখরিত হয়ে উঠল বুদ্ধিজীবী চত্বর।

আফসোস দেশে সেলফি মিউজিয়াম নেই
এদিকে শুরু হয়ে গেল সেলফির ধামাকা, ক্যামেরায় বন্দী হতে লাগলাম। কত স্টাইলে যে ছবি তোলা যায়, তা বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেলে খুব ভালোভাবে শেখা যায়। আমার খুব আফসোস হয়, বাংলাদেশের মতো এমন একটি দেশে একটা সেলফি মিউজিয়াম নেই। আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলস শহরে টনি হনটন ও টেয়ার মামেদভ পৃথিবীর প্রথম সেলফি মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে গেলে নাকি দারুণ দারুণ অভিনব কায়দায় সেলফি তোলার কৌশল শেখা যায়। তাই আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমি আর আমার বন্ধু আশিক যদি কোনো দিন সুযোগ পাই, তাহলে একটা সেলফি মিউজিয়াম বানাব।

এদিকে একে একে চলছে আমাদের পিকনিকের জন্য নিয়ে আসা দুটি গাড়িতে নম্বরিং, ব্যানার টানানো ও আসনবিন্যাস। আর এসব তত্ত্বাবধান করছেন বন্ধু হাসান রেজা। অন্যদিকে শামসুজ্জোহা এছামী স্যার আছেন দ্বিতীয় বর্ষের পরিদর্শকের তত্ত্বাবধানে। স্যারের কথা আর কী লিখব। যদি লেখা শুরু করি, তাহলে শুধু দিস্তার পর দিস্তা কাগজই ফুরোবেম তবু লেখা শেষ হবে না।

বাংলাদেশের মানচিত্রে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রায় সবকিছুই বলা আছে। ছবি: লেখক
বাংলাদেশের মানচিত্রে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রায় সবকিছুই বলা আছে। ছবি: লেখক

আমাদের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষাসফরের স্লোগান ‘মুজিব বর্ষে মুজিবনগর দর্শন’। আমরা সবাই একে একে গাড়িতে উঠলাম এবং প্রত্যেকে যে যার আসন গ্রহণ করলাম। আমরা সবাই গাড়ির মধ্যে আনন্দে মাতোয়ারা। হঠাৎ শুনতে পেলাম যে মাহফুজুর রহমান আখন্দ স্যার আমাদের সঙ্গে যাচ্ছেন। আনন্দের মাত্রা তখন বেড়ে দাঁড়াল ৩৬০ ডিগ্রিতে। ঘড়ির কাঁটা যখন ঠিক ৬টা ৩২ মিনিট, আমরা যাত্রা শুরু করলাম মুজিবনগরের উদ্দেশ্যে। সূর্যের তির্যক রোদ। পেটে কিছুটা টান, অবশ্য সকালের নাশতা গাড়িতে দেওয়া হয়েছে। আমাদের গাড়ি ‘লুঙ্গি ড্যান্স-লুঙ্গি ড্যান্স’ গানের তালে তালে রাস্তার বাঁকে হেলেদুলে চলছে। গাড়ি যখন নাটোরের প্রশস্ত রাস্তাটি দিয়ে পাবনার দিকে যাচ্ছে, তখন শুরু হয়ে গেল উদ্দাম ড্যান্স। আমি একটু মাথা তুলে তাকালাম। ওমা! আমি তো অবাক। এ দেখি ঐশ্বরিয়া, কারিনা, ক্যাটরিনা, দীপিকা—এরা সব বলিউড ছেড়ে আমাদের গাড়িতে এসে উপস্থিত। আমি তো মহাচিন্তায় পড়ে গেলাম, একটু ভালো করে দেখলাম। পরে দেখা গেল, নাহ এরা বলিউডের নায়িকারা না। এরা হলো আমাদের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ‘নায়িকারা’। যাদের মেকআপমাখা চেহারা চেনা দায়। গাড়ির বাইরের দৃশ্যটি দেখে আমি তো হতবাক। বিস্তীর্ণ ফসলের খেত আর খেতের ওপর এসে পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে গাঙশালিকের দল। চাষিরা সবাই ব্যস্ত তাদের নিজেদের কাজ নিয়ে। এ রকম হাঁকডাক করে আমরা যে তার পাশ দিয়ে যাচ্ছি, সেদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই। এ জন্যই হয়তো কবি রাজিয়া খাতুন চৌধুরাণী বলেছেন— 
‘সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,
দেশ মাতারই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।’

রাজশাহীতে যে আমের খনি আছে, তা খুব সহজেই বোঝা যায় রাস্তার দুই ধারে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা আমগাছগুলো দেখলে। পাবনার প্রশস্ত রাস্তা দেখে আমার মন যেন আর গাড়িতে থাকতে চাইছে না। গ্রামবাংলার এ অপার রূপের সম্ভাষণ দেখে আমার শুধু চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে—
‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।’

মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। ছবি: লেখক
মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। ছবি: লেখক

গান গাইতে গাইতে আমরা পৌঁছে গেলাম পাবনার পাকশীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশ দিয়ে লালন শাহ ব্রিজের ওপর দিয়ে কুষ্টিয়ার শাহার ফিলিং স্টেশনে। সেখানে নেমে স্যারদের সঙ্গে চলল আরেক ধাপ সেলফিবাজি।

সকাল গড়িয়ে দুপুর, অপেক্ষার প্রহর যেন আর শেষ হচ্ছে না। সবার একটাই কথা, কত দূর? আর কত দূর? দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে থাকায় এক একজনের অবস্থা কাহিল। অবশেষে মেহেরপুরের আমঝুপি নীলকুঠিতে এসে আমাদের গাড়ি স্বল্প সময়ের জন্য যাত্রাবিরতি করল। সবাই অন্তত একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারলাম। কিন্তু গন্তব্যে যেতে আরও কিছু সময় গুনতে হবে। পরে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা গাড়িতে অবস্থানের পর আমরা বহু আকাঙ্ক্ষিত ও প্রতীক্ষিত মেহেরপুরের মুজিবনগরে এসে পৌঁছালাম।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিঘেরা জায়গাগুলোতে ঘুরে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে কার না ভালো লাগে। মেহেরপুর শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ৬৬ একর জায়গাজুড়ে এই মুজিবনগর কমপ্লেক্স। মুজিবনগরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়েছে বঙ্গবন্ধু তোরণ। বঙ্গবন্ধু তোরণ দিয়ে ঢুকেই সাইনবোর্ডে লেখা বাঁ দিকে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানচিত্র আর সোজা স্মৃতিসৌধ। বাঁ দিক দিয়ে গেলাম ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানচিত্র’ দেখতে সেক্টরভিত্তিক গড়ে তোলা হয়েছে এই মানচিত্র।

মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের ইতিহাস চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে। ছবি: লেখক
মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের ইতিহাস চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে। ছবি: লেখক

মানচিত্রের চারপাশে গ্যালারি। গ্যালারির ওপর দিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখতে হয়। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ১১টি সেক্টরে ভাগ করা ছাড়াও আছে ঐতিহাসিক ঘটনাচিত্র, মানচিত্রে যুদ্ধকালে দেশের চারটি পথ দিয়ে শরণার্থী গমন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ধ্বংস, আ স ম আবদুর রবের পতাকা উত্তোলন, শালদাহ নদীতে যুদ্ধ, কাদেরিয়া বাহিনীর জাহাজ দখল ও যুদ্ধ, শুভপুর ব্রিজে সম্মুখযুদ্ধ, কামালপুর ও কুষ্টিয়ার মিরপুরের যুদ্ধ, চালনা ও চট্টগ্রাম বন্দর ধ্বংস, পাহাড়তলী ও রাজশাহীর হত্যাযজ্ঞ, সচিবালয়ে আক্রমণ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ, পিলখানা আক্রমণ, রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ভাস্কর্য।

মানচিত্রের সামনে আছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের কালরাত্রি, অগ্নিসংযোগ, পাকিস্তানি বাহিনীর নারী নির্যাতন, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান, ১২ আনসার কর্তৃক অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার এবং সেক্টর বণ্টনসহ অরোরা-নিয়াজি ও এ কে খন্দকারের উপস্থিতিতে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ভাস্কর্য।

আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম চতুর্থ বর্ষের ৫২ জন এবং দ্বিতীয় বর্ষের ৭২ জন। সঙ্গে ছিলেন ৪ জন শ্রদ্ধেয় স্যার।

এরপর স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনে গেলাম। স্থপতি তানভির করিম নকশা করেছেন এর। এই স্মৃতিসৌধ উদীয়মান সূর্যের প্রতিকৃতিতে নির্মিত। গোলাকার স্তম্ভের ওপর মূল বেদিকে কেন্দ্র করে দাঁড়িয়ে আছে ২০ ইঞ্চি পুরু ২৩টি ত্রিকোণ দেয়াল, যা ২৩ বছরের স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। দেয়ালগুলোর উচ্চতা ৯ থেকে ৪২ ফুট। স্মৃতিসৌধে একটি স্থান সিরামিক ইট দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানেই শপথ গ্রহণ করেছিল বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ। স্মৃতিসৌধের মূল বেদি থেকে বের হওয়ার জন্য রয়েছে ৯টি সিঁড়ি। ৯টি সিঁড়ি ৯ মাস স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রতীক। ৩০ লাখ শহীদকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্মৃতিসৌধের মেঝেতে ৩০ লাখ পাথর বসানো হয়েছে। স্মৃতিসৌধের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে লাল মঞ্চ, ২৩টি স্তম্ভ, এক লাখ বুদ্ধিজীবীর খুলি, ৩০ লাখ শহীদ, ১১টি সিঁড়ি, বঙ্গোপসাগর, ২১ ফেব্রুয়ারি, রক্তের সাগর এবং ঐক্যবদ্ধ সাড়ে সাত কোটি জনতা।

১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া সম্মেলনের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে মুজিবনগরে। ছবি: লেখক
১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া সম্মেলনের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে মুজিবনগরে। ছবি: লেখক

এর মধ্যে এখানে পথে চলতে গিয়ে দেখলাম অত্যাধুনিক একটি মোটেল, আধুনিক মসজিদ, পোস্ট অফিস, ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, প্রশাসনিক ভবন, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র, প্রাথমিক বিদ্যালয়, আনসার ও ভিডিপি অফিস, রেস্ট হাউস ও ব্যারাক, পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড, অফিস ভবন, হেলিপ্যাড, পিকনিক স্পট, গাড়ি পার্কিং, পাবলিক টয়লেট, লন টেনিস কোর্ট। আরও দেখলাম ছয় দফার ভিত্তিতে ছয় ধরনের ছয়টি বিশাল বাহারি গোলাপবাগান। সবকিছু দেখে মনে হবে, মুজিবনগর কমপ্লেক্স ছোট একটি সাজানো গোছানো আধুনিক শহর।

পুরো এলাকা ঘুরে মনে হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত ইতিহাস বুকে ধারণ করে আছে মুজিবনগর। স্মৃতিসৌধ থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্ত দেখতে গেলাম। যদিও গেট পার হয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। সীমান্তের ওপারে পলাশী আম্রকানন। যেখানে অবিভক্ত বাংলার সূর্য অস্ত গিয়েছিল। আর এপারে সূর্যোদয় হয় বাংলার।

আমঝুপি নীলকুঠি জমিদারবাড়ি
এর মধ্যেই স্যারেরা বললেন গাড়িতে উঠতে হবে। কারণ দুপুরের খাবারের স্পট রাখা হয়েছে আমঝুপি নীলকুঠি জমিদারবাড়ি। সেখানে এসে শুরু হয়ে গেল মূল অনুষ্ঠানের কার্যক্রম। অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন বন্ধুবর হাসান রেজা ও বান্ধবী মল্লিকা মোহনা। পাশাপাশি দ্বিতীয় বর্ষের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে গান, নাচ, আরও কত–কী। নিঃসন্দেহে আমি বলতে পারি যে এটি ছিল আমার শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে সেরা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিল স্যারদের উপহার দেওয়ার খেলাটি। খেলাটার সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ওই উপহারগুলোতে ছিল মাহফুজুর রহমান আখন্দ স্যারের জন্য একটি লিপস্টিক, শামসুজ্জোহা এছামী স্যারের জন্য একটি চিরুনি (যদিও স্যারের মাথায় চুল খুঁজে পাওয়া দায়), অন্যদিকে ইমতিয়াজ আহমেদ স্যারকে দেওয়া হলো একটি সাবান (স্যার যদিও মালাক্কার মসলা নিয়েই সর্বদা ব্যস্ত থাকেন)।

এরপর শুরু হলো জ্জোহা স্যারের খিদির বিদিও ড্যান্স। হাসি-আড্ড-তামাশার মধ্য দিয়ে শেষ হলো আমদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি। এরই ফাঁকে আমি এবং বন্ধু আশিক ইসলাম একটি চক্কর দিলাম ব্রিটিশ জমিদারদের নীলকুঠি জাদুঘরে। সেখানে নীল চাষের বর্ণনা, জমিদারদের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন নান্দনিক ও ঐতিহাসিক ছবি দেখলাম। এর ভেতরে ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে আমার নিকট অন্যতম আকর্ষণ ছিল ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাবে ব্রিটিশ কোম্পানির একচেটিয়া অধিকার লোপ পেলে ইংরেজ নীলকরেরা বাংলায় আগমন প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে নীলচাষিদের ওপরে চলে নির্মম নিপীড়নের করে ইচ্ছেমতো নীলের চাষ শুরু করে। এ নিয়ে লেখা হয় ‘নীলদর্পণ’ নাটক। সেই নীলগাছটি আমার নজর কেড়েছে। তা ছাড়া কুষ্টিয়াজুড়ে তামাকগাছগুলো আমায় ভীষণভাবে বেদনা দিয়েছে। শুনেছি ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো আজও জোর করে কৃষককুলকে এই চাষে বাধ্য করছে। অন্যদিকে জাদুঘরের পাশেই নীল জমিদারদের কুঠিটি ভগ্নপ্রায় দেখলাম। এই স্থাপনাগুলো সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

জাদুঘর দেখে আসতে আসতে বিদায়ের ঘণ্টা বেজে উঠল। তখন সমস্ত আনন্দ-উল্লাস যেন এক মুহূর্তের জন্য চিড় খেয়ে গেল। আমাদেরও ছুটতে হলো আপন নীড়ের ঠিকানায়। কিন্তু স্মৃতির ক্যানভাসে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রইল আমার জীবনের এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষাসফর।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাবি