সুন্দরবনে স্মার্ট টহল দলের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা

সাত সদস্যের টহল দলের সঙ্গে রয়েছে একটি ছোট লঞ্চ, স্পিডবোট ও দুটি ফাইবারবডি ট্রলার। বোটচালক, বাবুর্চিসহ কয়েকজন অতিরিক্ত জনবল আছে টিমে। ছবি: লেখক
সাত সদস্যের টহল দলের সঙ্গে রয়েছে একটি ছোট লঞ্চ, স্পিডবোট ও দুটি ফাইবারবডি ট্রলার। বোটচালক, বাবুর্চিসহ কয়েকজন অতিরিক্ত জনবল আছে টিমে। ছবি: লেখক

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বনজ সম্পদ রক্ষায় শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে স্মার্ট টহল দল। আধুনিক প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সুন্দরবনে বনজ সম্পদ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণে দলের সদস্যরা নিরলসভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। ডেটাবেইসনির্ভর এই টহল-ব্যবস্থায় জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) ও সফটওয়্যার ডিভাইস ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরবনের মধ্যে অপরাধপ্রবণ এলাকা এবং অপরাধীদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হচ্ছে।

সম্প্রতি সুযোগ আসে টহল দলের সঙ্গে থেকে তাদের কার্যক্রম স্বচক্ষে দেখার। প্রোগ্রাম আগেই ঠিক হয়েছিল। বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অনুমতি নেওয়ার পর্বও শেষ হয়। যাত্রা শুরু হয় খুলনা রেঞ্জের কাশিয়াবাদ বন বিভাগের অফিস থেকে।

স্মার্ট টহল দলের সঙ্গে যাত্রা
৯ মার্চ বিকেল পাঁচটার দিকে স্মার্ট টহল দলের সদস্য মোখলেসুর রহমান মোবাইলে জানিয়ে দেন, আর তিন ঘণ্টার মধ্যে কয়রার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন ঘাটে পৌঁছাবে তাঁদের ফাইবারবডি একটি ট্রলার। যথাসময়ে পৌঁছে যাই সেখানে। বোটটি ঘাটে ভিড়লে স্বাগত জানান ফরেস্টার জিয়াউর রহমান। তিনি জানালেন, তাঁদের টিমের সরদারসহ অন্য সদস্যরা সুন্দরবনের ছেঁড়া নদীতে টহলকার্য পরিচালনা করছেন। তাঁরাও নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী টিম লিডারের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হবেন। খাকি পোশাকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত আর আধুনিক সব প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত এ স্মার্ট টহল দলের সদস্যদের সঙ্গী হয়ে সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া নদী ধরে এগিয়ে চলি গভীর অরণ্যের দিকে। ট্রলার ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মার্ট ডেটা রেকর্ডার মোখলেসুর রহমান ডিভাইসের মাধ্যমে কাশিয়াবাদ স্টেশন পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়াসহ নদীর জোয়ার-ভাটা সম্পর্কিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করেন। আগ্রহ নিয়ে ডিভাইসের কার্যক্রম দেখার চেষ্টা করলে অপারেটর বললেন, ডিভাইসটির মনিটরে জোয়ার সম্পর্কিত দুটি প্রশ্ন ভেসে উঠেছে। এখন পূর্ণ জোয়ার নাকি জোয়ার শুরু হয়েছে? জানতে চাওয়া হয়েছে। তখনো নদীতে পুরোপুরি ঝোয়ার না হওয়ায় তিনি জোয়ার চলছে—তথ্যটি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। জোয়ারের পানির উজানকে পরাজিত করে আমাদের ট্রলার চলতে থাকে পশ্চিম সুন্দরবনের ছেঁড়া নদীর দিকে। সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া নদীতে কয়েকটি জেলেনৌকার মাছ ধরার জন্য বন বিভাগ থেকে দেওয়া অনুমতিপত্র যাচাই শেষে রাত ১২টা নাগাদ দেখা মেলে স্মার্ট টহল দলের অপর সদস্যদের। এবার দলের সব সদস্য সমন্বিতভাবে শুরু করেন টহল কার্যক্রম।

স্মার্ট টহলের পদ্ধতি
স্মার্ট টহল দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সুন্দরবনের কালাবাগি ফরেস্ট স্টেশনের অফিসার (এসও) মো. মাসুদ রানা। দলের প্রত্যেক সদস্যের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছেন তিনি। ফরেস্টার জিয়াউর রহমান রয়েছেন সহকারী দলনেতার দায়িত্বে। তিনি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষায় ব্যস্ত। টহলরত অবস্থায় পাওয়া সব তথ্য একজন ডেটা রেকর্ডার সঙ্গে সঙ্গে রেকর্ড করে চলেছেন। আরেকজন বাইনোকুলারে চোখ রেখে বন্য প্রাণী ও হুমকি পর্যবেক্ষণে ততপর। এ ছাড়া কয়েকজন অস্ত্রধারী নিরাপত্তায় সজাগ দৃষ্টি রেখে চলেছেন। সাত সদস্যের টহল দলের সঙ্গে রয়েছে একটি ছোট লঞ্চ, স্পিডবোট ও দুটি ফাইবারবডি ট্রলার। এ ছাড়া বোটচালক, বাবুর্চিসহ কয়েকজন অতিরিক্ত জনবল নিয়ে টিম এগিয়ে চলে সুন্দরবনের জাভা নদীর দিকে।

বোটের সামনের ফাঁকা অংশে বসে কথা এগোতে থাকে দলনেতা মাসুদ রানার সঙ্গে। তিনি জানালেন, তাঁদের টিম বনের মধ্যে প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা করে নিরবচ্ছিন্নভাবে সাত দিন টহল দেবে। টিমের সঙ্গে থাকা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) এবং সাইবার ট্র্যাকার মাধ্যমে টহলকালে সব কর্মকাণ্ড রেকর্ড করে টহল পরিকল্পনা অনুযায়ী সুন্দরবনের অন্ততপক্ষে ৭০ শতাংশ এলাকা জলযানে ও অন্তত ৫ শতাংশ এলাকা হেঁটে টহল দেবেন তাঁরা। এ ছাড়া স্মার্ট টহলের নিয়ম অনুযায়ী টহলকালে অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ, সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি এবং মামলা দায়েরের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অপরাধের দৃশ্য পর্যবেক্ষণের সময় আলামত সংরক্ষণ করা এবং আলামত নষ্ট না করে ছবি তোলা হয়। সন্দেহ ভাজনদের তল্লাশি, অপরাধী গ্রেপ্তার, মালামাল জব্দকরণ, মামলা দায়েরসহ সংশ্লিষ্ট পরবর্তী কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনের নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়।

প্রতিদিন টহল শেষে টহলের জিপিএস থেকে জিপিএক্স ফোল্ডার বা সাইবার ট্র্যাকার থেতে ডেটা ল্যাপটপে আপলোড করে ডেটা ম্যানেজারের মাধ্যমে তথ্যগুলো কো-অর্ডিনেটরের কাছে পাঠানো হয়। এ ছাড়া অপরাধের স্থানগুলোর মানচিত্র, বন্য প্রাণীর পর্যাপ্ততা–সংবলিত মানচিত্রে তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময়ে পরিচালিত স্মার্ট টহল দলকে দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন। এ ছাড়া তাদের টহলে বাদ পড়া ২৫ শতাংশ এলাকা পরবর্তী টহলের আওতায় আনা হবে।

রাতে অরণ্যে স্মার্ট টহল
অন্ধকারে ঢাকা ঘন বনের ওপর পূর্ণিমার ভরা জোছনা। চারদিকে সাড়াশব্দ নেই। পশু পাখিগুলোও চুপচাপ। সবাই যেন ঘুমের রাজ্যে। কেবল ঘুমাননি স্মার্ট টহল দলের সদস্যরা। সুন্দরবনের শিবসা নদীতে দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে স্মার্ট প্যাট্রোলিং টিম। রাতে সুন্দরবনের পাড়ে টর্চের আলোয় দুটি চোখ ভাটার মতো জ্বলতে দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। টিমের অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মী সোহেল রানা এগিয়ে এসে বললেন, ওটা হরিণের চোখ। বিশ্রাম নিতেন কখন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমাদের দৈনিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ডিউটি করার কথা থাকলেও ডিউটি করতে হয় আরও অনেক বেশি। কারণ টিমের টার্গেট থাকে রেঞ্জের মধ্যে বনের ৭৫ ভাগ এলাকা টহল করা। দৈনিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টা টহলে সাত দিনে পুরো এলাকা কভার করা যায় না।’ কথার ফাঁকে শক্তিশালী টর্চের আলোতে দেখা যায় নদীর থেকে বনের গভীরে চলে যাওয়া সরু নালা আকৃতির একটি খালের মুখে জেলেনৌকা। স্মার্ট টহল দলের সদস্য জসিম উদ্দিন হ্যান্ডমাইকে নৌকাটিকে থেমে যাওয়ার জন্য হাঁক ছাড়েন। টিমের চৌকস বোটচালক মুহূর্তের মধ্যে নৌকার কাছে নিয়ে যান ট্রলার। টিম লিডার মাসুদ রানা জেলেদের মাছ ধরার অনুমতিপত্র যাচাই করে সঠিক পাওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানান।

দুধার ঘিরে থাকা বন আর রাতের আবছা আঁধারঘেরা সরু সরু খাল ধরে আরও একটু সামনে এগিয়ে রাতের বিশ্রামের জন্য নোঙর করে বোট। পালাক্রমে ঘুমান টিমের সদস্যরা।

দিনের আলোয় টহল দল
হালকা নীল আকাশে লালিমা ছড়িয়ে পূর্ব দিকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে কুয়াশার চাদর সরিয়ে সূর্যমামা জেগে উঠছে। যত দূর চোখ যায় বিস্তীর্ণ ভূমিজুড়ে সবুজের মেলা। সুন্দরবনের ভেতর শিবসা নদীর বিশাল বুক চিরে এগিয়ে চলে স্মার্ট টহল দল। বাইনোকুলারের চোখ রাখা দলের সদস্য আব্দুর নুর চিৎকার করে ওঠেন, পাশের খালের ওপর বাঁকা হয়ে পড়ে থাকা গেওয়া গাছের ওপর একটা মদনটাক পাখি। ডিভাইস অপারেটর সেটাকেও এন্টি করে নেন। এভাবে একের পর এক বনের হরিণ, পাখি, গাছ—সবকিছুর বর্তমান অবস্থা ডেটা আপডেট হতে থাকে টিমের উন্নত প্রযুক্তিতে। তখন সবে বেলা দেড়টা। বাহারী নাম না–জানা পাখির কলরব ছন্দ আর মৃদু শীতল হাওয়ায় ক্লান্ত শরীর যেন নিস্তেজ হয়ে পড়ছিল। হংসরাজ নদ পাড়ি দিয়ে পাটাকাটা এলাকায় এসে স্মার্ট টিমের সদস্যরা দুটি দলে ভাগ হয়ে গেলেন। একদল কালীর খালের দিকে, অপর দল বিদ্যার ভারানী খালে টহলে গেল।

মূল নদীতে লঞ্চ রেখে ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে বেরিয়ে পড়ি টিম লিডার মাসুদ রানার সঙ্গে কালীর খালের দিকে। খাল ধরে গভীর বনের মধ্যে সারি সারি গোলবাগান চোখ এড়ায় না। খালের শুরুর পথে প্রচুর হরিণের দল বেঁধে ঘাস খাওয়ার দৃশ্যগুলো ধারণ করেন টিমের সদ্যরা। সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কেওড়া, ধুন্দলসহ নাম না–জানা অসংখ্য গাছের সমারোহ মধ্যে চলে স্মার্ট টহল দলের ট্রলার। তুলনামূলক ছোট খালে পৌঁছালে ট্রলার থামিয়ে স্পিডবোটে করে যেতে থাকি বনের গভীরে। চৌকস সদস্যরা খালের মুখ দেখেই বলে দেয় খালের মধ্যে অবৈধ প্রবেশের কোনো নমুনা দেখা যাচ্ছে না। ওই এলাকায় সম্ভবত কেউ নেই। দিন শেষে সেই কথাই সত্য হয়। অভয়ারণ্য এলাকায় কাউকেই পাওয়া যায়নি। সাড়ে তিন ঘণ্টা বিভিন্ন ছোট-বড় খালে টহল শেষে পুনরায় দুটি টিমই ফিরে আসে পশ্চিম বন বিভাগের পাটকোস্টা বন টহল ফাঁড়িতে।

সুন্দরবনের বনজ সম্পদ রক্ষায় শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্য স্মার্ট টহল দল। ছবি: লেখক
সুন্দরবনের বনজ সম্পদ রক্ষায় শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্য স্মার্ট টহল দল। ছবি: লেখক


প্রকৃতির স্বর্গ সুন্দরবনে শান্তির সুবাতাস
স্মার্ট টহল দলের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোনো অপরাধীর দেখা মেলেনি। টহল দলের লিডার মাসুদ রানা বললেন, ছয় মাস আগেও টহল দেওয়া খালগুলোয় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দেখা যেত, এখন আর সেভাবে দেখা যায় না। স্মার্ট টহল দলের মাধ্যমে সুন্দরবনে বনদস্যু ও জলদস্যুদের তৎপরতা একবারে শূন্যের কোঠায়। সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জে এখন আর কোনো দস্যু নেই। স্মার্ট টহল দলের কার্যক্রমের ফলে খুলনা রেঞ্জে বন্য প্রাণী ও মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকৃতির স্বর্গ সুন্দরবনে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে।

মাসুদ রানা আরও বলেন, প্রতিদিনের টহল শেষে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ফলাফল জানতে পারছে। পরবর্তী দিনের টহলের জন্য দিকনির্দেশনাও দিতে পারছেন। পাশাপাশি সুন্দরবনকেন্দ্রিক নানা ধরনের তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন প্রস্তুত এবং ডেটাবেইস তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণের পথে বন অধিদপ্তরের অর্জনকে সমৃদ্ধ করেছে স্মার্ট টহল পদ্ধতি।

অভিযানের সফলতা
খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসএিফ) মো. আবু সালেহ বলেন, খুলনা রেঞ্জের স্মার্ট টহল দলের অভিযানে সাফল্য অনেক। অত্যাধুনিক ডিভাইস ও আধুনিক জলযানসমৃদ্ধ স্মার্ট টহল দলের কার্যক্রমে বন অপরাধ কমে গেছে।

২০১৮ সালে সুন্দরবনে ৮৩টি টহল হয়েছে। ৯০ হাজার ৩৮১ কিলোমিটার টহলে ২৩ প্রজাতির ১৪ হাজার ৩৪৬টি বন্য প্রাণী দেখা হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে ৪৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৪০০ নৌকা বা ট্রলার, ৬৯৬টি মাছ ও কাঁকড়া ধরার জাল এবং ১৪৩টি কাটিং টুলস জব্দ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ২০১৯ সালে ১০৪টি স্মার্ট টহল হয়েছে সুন্দরবনে। ৭৭ হাজার ৪৫৫ কিলোমিটার টহল করা হয়েছে। এ সময় ২৩ প্রজাতির ১৫ হাজার ৯২৮টি বন্য প্রাণী দেখা গেছে। বিভিন্ন অপরাধে ৪৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি টহল দল ৩১১ নৌকা বা ট্রলার, মাছ ও কাঁকড়া ধরার ৩৭২টি জাল, ১২১টি কাটিং টুলস জব্দ করেছে।

যেভাবে সুন্দরবনে শুরু স্মার্ট টহল
সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ গুরুত্ব বিবেচনা করে ইউএসএআইডির অর্থায়নপুষ্ট বাঘ প্রকল্পের সহযোগিতায় ২০১৫ সালের জুন থেকে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে স্মার্ট টহল প্রথম শুরু করা হয়। সারা বিশ্বে জলজ পরিবেশে বাংলাদেশের সুন্দরবনেই প্রথম স্মার্ট টহল শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে স্ট্রেনদেনিং রিজওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশন প্রকল্পের অর্থায়নে ২০১৬ সালের জুন মাস থেকে সুন্দরবনের অপর রেঞ্জগুলোয় স্মার্ট টহল সম্প্রসারণ করা হয়।

ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি ও জিআইজেডের সহযোগিতায় সুন্দরবনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সব আইন/বিধি, বন্য প্রাণী শনাক্তকরণ, আইন প্রয়োগ, স্মার্ট টহল পরিচালনা পদ্ধতি, জিপিএস ও সাইবার ট্র্যাকারের ব্যবহার, বন্য প্রাণী অপরাধ চিত্র ব্যবস্থাপনা, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি, নিরাপত্তা বিষয়ে এ পর্যন্ত ২১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি ও জিআইজেডের সহযোগিতায় স্মার্ট টহলের হ্যান্ডবুক তৈরি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অগ্রগামী। অন্য কোনো দেশে স্মার্ট টহলের হ্যান্ডবুক নেই।

স্মার্ট টহলের ক্ষেত্রে অন্তরায়
সুন্দরবনে জলজ পরিবেশে স্মার্ট টহল পরিচালনা কিছুটা ব্যয়বহুল। সবচেয়ে বেশি খরচ হয় জলজানের জ্বালানিতে। এ ছাড়া স্মার্ট টহল বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের অন্য অঞ্চলে বদলি, টহলের উপযোগী জলযানের অভাব ও অপ্রতুল রক্ষণাবেক্ষণ, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাব ইত্যাদি যথাযথভাবে স্মার্ট টহল কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্তরায় বলে জানালেন স্মার্ট টহল দল-১–এর লিডার মো. মাসুদ রানা। চিহ্নিত অন্তরায়গুলো দূরীভূতকরণের জন্য কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেও আশাবাদী তিনি।

বিদায় জানিয়ে ঘরে ফেরা
২৪ ঘণ্টায় স্মার্ট টহল দলের সঙ্গে রোমাঞ্চকর ভ্রমণ শেষে বন বিভাগের ছোট লঞ্চে লোকালয়ে রওনা হই। স্মার্ট টহল দলের সদস্যদের ব্যবহারে কীভাবে যেন তাঁদেরই একজন হয়ে গিয়েছিলাম। দলনেতাসহ একে এক সব সদস্যের কাছে বিদায় নিয়ে উঠে পড়লাম লঞ্চে। স্মার্ট টহল দলও প্রস্তুতি সেরে ফেলে অন্য কোনো খাল ধরে টহলে যাওয়ার। টিমের সদস্যরা সহজাত হাসিমুখে হাত নেড়ে বিদায় জানালেন। সুন্দরবনের ৯১ কিলোমিটার টহলে অংশ নিয়ে স্বচক্ষে সুন্দরবনের অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ আর টহল দলের কার্যক্রমের সুখস্মৃতি ও একরাশ ভালো লাগাকে আজীবনের সঙ্গী করে ফিরে এলাম আপন ঠিকানায়।