জীবাণুনাশক প্রয়োগে যা জানা প্রয়োজন

বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত শব্দ হলো করোনা। উৎকণ্ঠার দিক থেকেও শীর্ষেই রয়েছে এটি। এই মুহূর্তে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত আবিষ্কার কোভিড–১৯ প্রতিষেধক বা আরোগ্য। পৃথিবীজুড়ে বিজ্ঞানীরা দিন-রাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন এর ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কারের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিস্তার রোধে প্রতিদিন বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। আক্রান্ত বিভিন্ন দেশে করোনা প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যক্তিপর্যায়ে কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা (যেমন হাত জীবাণুমুক্ত রাখা) এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে জনসমাগম হয় এমন স্থানের কঠিন তলে (hard surface) যেমন, গণপরিবহনের হাতল, সিট, লিফটের বাটন, ইত্যাদি জীবাণুনাশক দ্বারা নিয়মিত পরিষ্কার করা।

বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সরকারি-বেসরকারি অফিস কর্তৃপক্ষ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এমনকি ব্যক্তি পর্যায়েও সাধ্যমতো নিয়মিত জীবাণুনাশক প্রয়োগ করলে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই সহজ হয়ে আসবে। এ সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

এ বিষয়ক ইংরেজি কয়েকটি শব্দ হলো ‘ডিসইনফেক্ট্যান্ট’, ‘অ্যান্টিসেপটিক’, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’। ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট (যেগুলো হাতের জন্য ক্ষতিকারক নয়, উল্লেখ্য যে ব্লিচযুক্ত ডিটারজেন্টগুলো কেবল পরিধেয় কাপড় জীবাণুমুক্ত করতেই ব্যবহার করা উচিত হাত পরিষ্কার করতে নয়) একধরনের জীবাণুনাশক বা ডিসইনফেক্ট্যান্ট, যা দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব। অন্যান্য ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ সাধারণত ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকনাশক হলেও সঠিক মাত্রার জীবাণুনাশক (সাধারণত অপানীয় অ্যালকোহল বা ক্লোরোহেক্সাডিন) থাকলে তা ভাইরাস দমন করতে সক্ষম।

‘অ্যান্টিসেপটিক’ সাধারণত ত্বকের ওপরে প্রয়োগ করা হয় এবং তা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দমনে ব্যবহৃত হয়। ‘ডিসইনফেক্ট্যান্ট’ সব ধরনের অণুজীব দমনে অজৈব বস্তুর ওপরে প্রয়োগ করা হয়। এই ‘ডিসইনফেক্ট্যান্ট’ বা জীবাণুনাশক (ক্লোরোহেক্সাজাইলন, ক্লোরোহেক্সিডাইন, সেট্রিমাইড ইত্যাদি) সঠিক মাত্রায় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে প্রয়োগে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন প্রস্তুতকারক বিভিন্ন নামে বেশ কিছু জীবাণুনাশক তৈরি করে থাকেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেশের বাজারে এসব জীবাণুনাশক প্রাপ্তি নিশ্চিত করবেন প্রয়োজনে কাঁচামাল ব্যবহার করে যথাযথ তত্ত্বাবধানে জীবাণুনাশক উৎপাদনের ব্যবস্থাও নিতে পারেন।

নিয়মিত পরিবেশ পরিষ্কার দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে—

পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জ্ঞাতব্য
* মুখমণ্ডল, বিশেষ করে মুখ, নাক ও চোখে পরিচ্ছন্নতা চলাকালীন হাত না দেওয়া
* পরিচ্ছন্নতার সময় ডিসপোজেবল গ্লাভস, মাস্ক ও সম্ভাব্য ক্ষেত্রে চোখে চশমা অথবা স্বচ্ছ মুখমণ্ডল আবরণ ব্যবহার করা
* গ্লাভস পরার আগে ও পরে হাতে এবং মাস্ক পরার আগে ও পরে মুখমণ্ডলে অ্যালকোহল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা।

জীবাণুনাশকের ব্যবহার
* সঠিক মাত্রার সদ্য প্রস্তুত জীবাণুনাশকের ব্যবহার করা।
* কমপক্ষে ১০ মিনিট জীবাণুনাশক প্রয়োগ তলের সংস্পর্শে থাকতে হবে।
* পরিষ্কারে ব্যবহৃত কাপড় বা কাগজ, গ্লাভস, মাস্ক ইত্যাদি একবার ব্যবহারের পর ছিদ্রবিহীন প্লাস্টিক ব্যাগে আবদ্ধ করে যথাস্থানে ফেলা।
* সমগ্র প্রক্রিয়ার পর হাত ও মুখ সাবান ও পানি দিয়ে (সম্ভব না হলে ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’) ধোয়া।

জীবাণুনাশক তৈরির সময়
*হাতে গ্লাভস ব্যবহার করা।
*চোখে বা ত্বকে কোনোভাবেই যেন দ্রবণ না লাগে, সেদিকে দৃষ্টি রাখা।

দুটি সতর্কতা
* ক্রয় নিশ্চিত না করে দোকানের কোনো দ্রব্যে হাত না দেওয়া।
* গাড়ির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের খোলা বাতাস (ফ্রেশ এয়ার) বাটন ব্যবহার করা।

লেখক: অধ্যাপক, ফার্মাসি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়