করোনায় অসচেতন গ্রামবাসী, দিতে হতে পারে চড়া মূল্য

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস বা কোভিড ১৯ সারা পৃথিবীতে জেঁকে বসেছে। ইউরোপ–আমেরিকার উন্নত দেশগুলো এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। ১৭৩টি দেশের ৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন ১৩ হাজারের বেশি মানুষ। আমাদের দেশেও হাজারো মানুষ কোয়ারেন্টিনে আছেন। ২৭ জন করোনা শনাক্ত এবং মারা গেছেন ২ জন।

প্রতিটি দেশ তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়াবলি একপাশে রেখে করোনাভাইরাস রোধে দেশকে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে যখন মানুষকে সচেতন করে তুলছে, তখনো আমাদের দেশের গ্রামগুলোয় এই ভাইরাসের ভয়াবহতা নিয়ে মাথাব্যথাই যত্সামান্য।

গ্রামের অধিকাংশ মানুষ করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে অজ্ঞ। যদি তাদের সচেতন হতে বলেন, দিনে কয়েকবার হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান দিয়ে হাত ধুতে বলেন অথবা মানুষের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে বলেন, তাঁদের উত্তরটা অনেকাংশেই গোঁড়ামিতে ভরা থাকে। তাঁরা ধর্মের ব্যাপারটি টেনে আনেন। সম্ভবত লাশের স্তূপ না দেখা পর্যন্ত তাঁরা বুঝতে চাইবেন না।

তাঁদের ধর্মের প্রতি অন্ধবিশ্বাস‌‌ এক দিনে জন্ম নেয়নি। এখন যদি করোনাভাইরাসের ভয়ে হ্যান্ডশেক না করে অথবা ঘরে বসে কেউ থাকেন, এটা তাঁদের ইমানের প্রশ্নে সন্দেহের জন্ম দেবে। আর কোনোভাবেই ইমান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেওয়ার মতো মানুষ গ্রামে খুব একটা নেই। ইমান আর কুসংস্কারের মধ্যে অনেকেই তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। ছোটবেলা থেকে যা দেখেছেন, শুনেছেন, বেশির ভাগ গ্রামের মানুষ সত্যতা যাচাই না করেই ধর্মীয় বিধিনিষেধ হিসেবে মেনে নিয়েছেন, পৃথিবীর খারাপ সময়েও তাঁরা সেভাবেই চিন্তা করছেন। এই চিন্তাভাবনা গ্রামে বয়ে নিয়ে আসতে পারে ভয়াবহ দুর্যোগ।

সরকার সারা দেশে মাহফিল, সামাজিক–সাংস্কৃতিক প্রায় সব ধরনের জনসমাবেশমূলক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এটা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ, শুক্রবারসহ সব নামাজ জামাতের সঙ্গে মসজিদে আদায় করতে পারবেন মুসল্লিরা, তবে যাঁরা জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগছেন, তাঁদের ঘরেই নামাজ পড়তে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যাঁরা মৃত্যুকে ভয় পান না, করোনার ভয়ে ঘরে বসে থাকতে নারাজ তাঁরা কি একটু জ্বর–সর্দি হলেই মসজিদে না গিয়ে থাকবেন? সম্ভাবনা খুব কম। পবিত্র ভূমি মক্কা-মদিনাসহ সৌদি আরব, আরব আমিরাতের মতো দেশে আপাতত এ সংকটকালীন মুহূর্তে ঘরে নামাজ আদায় করতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। নবীর দেশ মক্কা-মদিনার মানুষ এটা মেনে নিলেও আমরা নেব কি না সন্দেহ আছে।

শিগগিরই করোনাভাইরাস রোধে গ্রামের মানুষকে সচেতন করা জরুরি। টিভি চ্যানেল ও দৈনিক পত্রিকাগুলো যথাসাধ্য চেষ্টা করছে সচেতনতা বৃদ্ধিতে। কিন্তু এসবের আবেদন এখনো শহরের মতো গ্রামে গ্রামে পৌঁছায়নি। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বা প্রশাসন রাখতে পারে প্রধান ভূমিকা। গ্রামে গ্রামে মাইকিং হতে পারে ফলপ্রসূ। এ ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের পক্ষ থেকেও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অন্য উপায় নেই।

গ্রামের লোকজন যেহেতু একটু বেশি ধর্মভীরু হয়, তাই তাদের সচেতন করতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা অগ্রণী ভূমিকা পালনে সক্ষম হবেন। গ্রামে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রশাসন থেকে ইমাম বা পুরোহিতদের দিকনির্দেশনা ভালো ফল নিয়ে আসবে। এখনো সময় আছে শহরের পাশাপাশি গ্রামের দিকে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর। আরও দেরি হলে চড়া মূল্যে এই ভুলের মাশুল দিতে হতে পারে।

*লেখক: শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।