ভৌগোলিক অবস্থান এবং করোনা-ঝুঁকি

করোনাভাইরাস রোগ (কোভিড–১৯) একটি নতুন স্ট্রেইন, যা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল। শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিন লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং ১৩ হাজারের বেশি জন মারা গেছে। ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণা করেছে।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য বিজ্ঞানীরা যেমন দিনরাত গবেষণা করে যাচ্ছেন। তেমনি এ ভাইরাসের বিস্তারের সঙ্গে আবহাওয়ার উপাদান বা ফ্যাক্টরগুলোর প্রভাব বা এই প্রাদুর্ভাবের কোনো মৌসুমি প্যাটার্ন রয়েছে কি না, তা খুঁজে পেতে আবহাওয়াবিদেরা, পরিবেশবিদেরা নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

ভাইরাসগুলোর নির্দিষ্ট স্ট্রেইন, যা কোভিড-১৯ ঘটায়, তা একটি নতুন ভাইরাস এবং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় এটি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানে না। আমরা পুরোনো ফ্লু-ভাইরাসের সঙ্গে যা দেখেছি তা হলো, এগুলো সাধারণত ঠান্ডা ও শুষ্ক অবস্থায় বেড়ে ওঠে এবং পুনরুত্পাদন করে এবং তাপমাত্রা উষ্ণ হলে এগুলো ভালো প্রজনন করে না এবং ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বিস্তার থেমে যায়। চীনের গুয়ংজুতে সান-ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা উল্লেখ করেছেন যে তাপমাত্রা কোভিড-১৯ সংক্রমণকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করতে পারে এবং এই ভাইরাস উচ্চ তাপমাত্রার প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল।

সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্র বড় বড় হটস্পটের অবস্থান দেখিয়ে এই দাবিটিকে সমর্থন করে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত সমীক্ষায় লেখকেরা লিখেছেন যে করোনাভাইরাস ৩০ থেকে ৫০ উত্তর অক্ষাংশ করিডোরের কেবল একটি সরু পূর্ব-পশ্চিম বরাবর শহর ও অঞ্চলগুলোয় উল্লেখযোগ্যভাবে বিস্তার লাভ করেছে (তাপমাত্রা: ৫ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আর্দ্রতা ৪৭ থেকে ৭৯)। একই সময়ে কোভিড-১৯ চীনের দক্ষিণের দেশগুলোয় উল্লেখযোগ্যভাবে ছড়াতে ব্যর্থ হয়েছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রোগী এবং মৃত্যুর সংখ্যা শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোর তুলনায় তুলনামূলক কম। ডা. জোসেফ ফেয়ার একজন ভাইরাসবিদ, এপিডেমিওলজিস্ট এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে রোদ ভাইরাসকে দমন করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর উষ্ণতার সঙ্গে সত্যিকারের কোনো সম্পর্ক নেই, তবে এটি দিনের দৈর্ঘ্য এবং সূর্যের আলোর সংস্পর্শের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যা ইউভি আলোর মাধ্যমে ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে তোলে।

প্রশ্ন আসতে পারে, গ্রীষ্মপ্রধান দেশ যেমন আমাদের দেশে কি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে না? আমাদের দেশে করোনাভাইরাস বিস্তারের জন্য পরিবেশগত ফ্যাক্টরগুলো অনুকূল নয় কিন্তু সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো করোনাভাইরাস যেসব দেশে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে সেসব দেশ থেকে প্রবাসী/বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের বাংলাদেশে গমন। বর্তমানে বিদেশফেরতদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে এবং সবচেয়ে বড় কথা সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ