প্রয়োজন পড়বে প্রচুর ভেন্টিলেটর, আমাদের উদ্যোগ কী

করোনাভাইরাস
করোনাভাইরাস

তিন দিন আগে যুক্তরাজ্য সরকার সে দেশের বড় বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে বলেছে যত দ্রুত সম্ভব ভেন্টিলেটর উৎপাদন করতে। ফোর্ড, টয়োটা ও হোন্ডা স্বীকার করেছে যে যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের এই অনুরোধ করা হয়েছে এবং তারা দ্রুততর সময়ে প্রচুর ভেন্টিলেটর তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর ঠিক এক দিন পর একই উদ্যোগ নিতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকেও। টেসলা, ফোর্ড এবং জেনারেল মোটরসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর বানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার। টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক এর মধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন তাঁর প্রতিষ্ঠান ভেন্টিলেটর নির্মাণে কাজ করবে।

ওয়ার্ল্ড মিটারের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে ২৩ মার্চ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু হয়েছে ২৮১ জনের। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ এবং মৃত্যু হয়েছে চার শর বেশি মানুষের।

দুই দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা পৃথিবীর অন্যতম সেরা। তারপরও তাদের কাছে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা উপকরণ নেই। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁদের পড়তে হয়েছে মারাত্মক বিপদে। বেপরোয়া হয়ে দুই দেশই বেসরকারি খাতের উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা চাইছে।

বাংলাদেশে সরকারি হিসেবে করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছেন ৩৯ জন।

যাহোক, এখন বাংলাদেশের চিকিৎসার জন্য প্রচুর চিকিৎসক, সেবক, নিরাপত্তা উপকরণ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির প্রয়োজন পড়বে। ইতিমধ্যেই অবশ্য এই প্রয়োজনীয়তা শুরু হয়েছে। নিরাপত্তা উপকরণ না থাকার কারণে বহু হাসপাতাল সাধারণ রোগীদের সেবা দিতেও আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে অনেকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সহায়তা তীব্রভাবে প্রয়োজন। বিশেষ করে টেস্টিং কিট জোগান বাড়লে আক্রান্ত রোগীদের চিহ্নিত করার সংখ্যাও বাড়বে। তখন চিকিৎসা আরও ব্যাপকভাবে শুরু করতে হবে। তখনই প্রয়োজন পড়বে ভেন্টিলেটরের।

বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে ঠিক কী পরিমাণ ভেন্টিলেটর আছে, তা নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া মুশকিল। যেহেতু যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা আমরা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, সেহেতু এটা বোঝা খুব একটা কঠিন কাজ নয় যে, বাংলাদেশেও প্রচুর ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন পড়বে। সুতরাং আমাদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।

এ উদ্যোগে বাংলাদেশের জন্য দারুণ কিছু করার সুযোগ পেতে পারে প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া দেশে গাড়ি অ্যাসেম্বলিং করা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষেও দ্রুত ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা সম্ভব। প্রয়োজনে প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এখনই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।

করোনাভাইরাস ঠিক কতটা ভয়ংকর, বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু ইতিমধ্যেই তা প্রমাণ করে দিয়েছে। এই ভাইরাসে বাংলাদেশের বহু মানুষের প্রাণও যে যাচ্ছে এবং যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ সরকার নানা গড়িমসি করে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে অনেক দেরি করে ফেলেছে। যার মাশুল দিতে হচ্ছে জনগণকে। কিন্তু এখনই যদি ভেন্টিলেটরের উদ্যোগটা গ্রহণ করা যায়, তাহলে কিছু প্রাণ হলেও বাঁচতে পারে।

লেখক: সাহিত্যকর্মী