আমাদের অগ্রজ প্রজন্মকে বাঁচাতে হবে

আমাদের যাদের বয়সটা কুড়ি আর ত্রিশের মাঝামাঝি, তারা হয়তো ভাবছি, করোনাভাইরাসের চেয়ে আমরাই বেশি শক্তিশালী! যদিও বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে বিশ থেকে ত্রিশ বছর বয়সীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবু ধরে নিলাম, আপনি বা আমি সত্যি সত্যিই করোনা থেকে শক্তিশালী। এ–ও ধরে নিলাম, আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সর্বোচ্চ। তারপরও আমাদের করোনাভাইরাস নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে আর এই ভাবনাটা আপনার আর আমার জন্য নয় বরং আমাদের অগ্রজদের জন্য।

আমাদের অগ্রজ প্রজন্ম, যাঁদের বয়স পঞ্চাশ কিংবা ষাটোর্ধ্ব, তাঁদের অধিকাংশের কাছেই করোনাভাইরাস একটি কাল্পনিক ও হাসির বিষয়বস্তু। ধর্মীয় কারণে হোক কিংবা অজ্ঞতার কারণেই হোক, এসব অগ্রজ মানুষ করোনার ভয়াবহতা অনুমান করতে ব্যর্থ। আর এ কারণে তারা সচেতন হতে অনেকটাই অনীহা প্রকাশ করছেন। আমরা ইতিমধ্যে জেনেও গেছি, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার এই প্রজন্মেরই বেশি। যার ফলে এখন, আমরা আমাদের এই অগ্রজ প্রজন্মের অপূরণীয় ক্ষতির সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে আপনার আর আমার সামান্যতম ভুলেই হারিয়ে ফেলতে পারি এই প্রজন্মকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক দূরত্বায়নই একমাত্র করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির উপায়। এ ক্ষেত্রে ঘরে অবস্থান করা, কারও সঙ্গে হাত মেলানো থেকে বিরত থাকা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, পরস্পর থেকে কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে। আমরা যদি আমাদের এই ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী প্রজন্মের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যায়, ইমিউন সিস্টেমের দোহাই দিয়ে আমরাই বেশি দল বেঁধে জনসমাগমে যাচ্ছি, এদিক–সেদিক ঘোরাঘুরি করছি আর বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছি। এ ছাড়া বিদেশফেরতের সংখ্যার দিক থেকেও এই প্রজন্মের সংখ্যাটা কম নয়। আবার আমাদের এই প্রজন্মের অনেকের মধ্যে করোনাভাইরাস থাকলেও তা অনেক সময় সুপ্ত অবস্থায় অবস্থান করতে পারে বিধায়, কে আক্রান্ত, কে আক্রান্ত নয়, তা বুঝে ওঠা কঠিন। যে কারণে করোনাভাইরাসের বাহক হিসেবে সম্ভবত মিলেনিয়ালস প্রজন্ম হিসেবে খ্যাত আমরাই উত্তম মাধ্যম।

বর্তমান বিশ্বে যা ঘটছে, তা সম্পর্কে আমাদের এই বিশ-ত্রিশ বছর বয়সী প্রজন্ম অবগত সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি সম্পর্কেও কম অবগত নয়। আমাদের ইমিউন সিস্টেম ভালো বিধায় করোনাভাইরাস থেকে আমরা রক্ষা পেলেও (সবাই হয়তো পাবে না) আমাদের মাধ্যমে যদি আমাদের অগ্রজরা আক্রান্ত হয়, তবে সেটি হবে অগ্রজদের প্রতি করা আমাদের শ্রেয়তম অন্যায়। আমরা অসাবধান হয়ে অগ্রজদের ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি না। বিনা কারণে ঘোরাঘুরি না করে, কয়টা দিন বাসায় অবস্থান করে আমরা আমাদের অস্তিত্বগুলোকে রক্ষা করতে পারি।

আজ যদি আমাদের এই বিশ-ত্রিশ বছর বয়সী প্রজন্ম, অগ্রজ প্রজন্মকে ঝুঁকির মুখে ফেলে তাহলে আজকের এই সর্বোচ্চ ইমিউনিটি সম্পন্ন প্রজন্ম যেদিন ষাটোর্ধ্ব হবে তখনকার বিশ-ত্রিশ বছর বয়সী প্রজন্ম কি এই মিলেনিয়ালস প্রজন্মকে ক্ষমা করবে?

*লেখক: শিক্ষার্থী, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়