পিপিই সংকট: ঝুঁকিতে সাংবাদিক, চিকিৎসক ও পুলিশ

পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বা বিশেষ সুরক্ষা পোশাক। ছবি: সংগৃহীত
পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বা বিশেষ সুরক্ষা পোশাক। ছবি: সংগৃহীত

খবরের পাতা খোলামাত্রই দেখতে পাই মৃত লোকের সংখ্যা বেড়ে চলছে। মর্মান্তিক। এক খারাপ সময় অতিক্রম করছে সারা বিশ্বের মানুষ। সমাজের সব পেশার লোকই করোনা মোকাবিলায় কাজ করছে। কিন্তু এদের মধ্যে সাংবাদিক, চিকিৎসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বেশি ঝুঁকিতে।

করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না চিকিৎসক ও নার্স। চীন ও ইতালিতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় সংক্রমিত হয়ে অনেক চিকিৎসক মারা গেছেন। পুলিশসহ আতঙ্কে আছেন সাংবাদিক, চিকিৎসক, অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীসহ জরুরি কাজে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

সাংবাদিকেরা করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের যেভাবে তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেটা প্রশংসার। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সাংবাদিকেরা অপরিসীম দায়িত্ব পালন করেছেন। তেমনি করোনা–পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁরা সর্বদা আপডেট তথ্য দিয়ে থাকেন। সাংবাদিকেরা নানাভাবে জনসাধারণকে সচেতন করে যাচ্ছেন, যা করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করবে বলে মনে করছি।

একটু চিন্তা করুন, কীভাবে আমরা করোনার নানাবিধ তথ্য পাই। যেমন করোনার লক্ষণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ ও করোনায় কোথায় কী ঘটছে, কীভাবে অন্য দেশ করোনা মোকাবিলায় সফল হয়েছে ইত্যাদি। তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সহযোগিতা করে থাকেন। কিন্তু তাঁরাও পিপিই, মাস্ক, গ্লাভসসহ যেসব দ্রব্যাদি পাচ্ছেন, তা পর্যাপ্ত নয়। গ্রামের কোনো এক ক্ষুদ্র জায়গা থেকে শুরু করে বিশ্বের যেকোনো এলাকার সংবাদ সংগ্রহ করেন। সেই তথ্যই আমরা পাই।

সাধারণ ছুটি ঘোষণার সঙ্গে পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে আছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়াও করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন চিকিৎসক ও নার্স। এখানে পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্টের (পিপিই) ঘাটতি রয়েছে। কারণ, কেউ পেয়েছেন, কেউ পাননি। কোনো কোনো জায়গায় আবার পিপিইর দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন। সিলেটের বেসরকারি এক হাসপাতালে পিপিই ছাড়া কাজ করতে করতে দুজন করোনার উপসর্গ নিয়ে কোয়ারেন্টিনে।

একটু ভেবে দেখুন, চিকিৎসকদের ভূমিকার কথা। একটু ঠান্ডাজনিত সমস্যা হলেও আমরা তাঁদের শরণাপন্ন হই। আর করোনা খুবই ছোঁয়াচে প্রকৃতির। সেখানে এত সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডাক্তারদের পিপিই প্রদানের ব্যবস্থা করা উচিত। কারণ, একজন ডাক্তার সংক্রমিত হলে আমরা অনেকজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের শারীরিক যেকোনো সমস্যায় চিকিৎসকেরাই এগিয়ে আসেন। তাঁদের রাত জেগে সেবা অনেক রোগীর জীবন বাঁচিয়েছে।

পুলিশ বাহিনী রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জনবল। যদিও পুলিশ মানে সমাজে সমালোচনা, বাঁকা চোখে দেখা। বাস্তবিক অর্থে পুলিশের অবদান অনেক, যা আমাদের স্বস্তি দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখার কাজটি পুলিশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। তারা এক ঘণ্টা কাজ না করলে আমরা কি পারব শান্তিতে ঘুমাতে, পারব কি আমাদের ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাতে, পারব কি ১০০ শতাংশ ধর্ষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে? উত্তর, না।

দেশের সব ক্রান্তিলগ্নে সর্বদা পুলিশ বাহিনী অগ্রণী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বর্তমানে পুলিশ করোনায় সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে মানুষকে রক্ষার কাজও করছে। অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করে দায়িত্ব পালন করছে। করোনা প্রতিরোধে পুলিশের উল্লেখযোগ্য কাজ যেমন ডিএমপি ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক ওয়াটার ক্যানন দিয়ে ব্লিচিং পাউডার (জীবাণুনাশক) মেশানো পানি ছিটানো, বিদেশফেরত লোকদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে ফলভর্তি ঝুড়ি প্রদান করছে। আজকের খবর, কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষকে খাবার দিয়েছে পুলিশ। রাস্তায় ফেলে দেওয়া বাচ্চাটিকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করে সুস্থ করার কাজ করেছে পুলিশ। তারা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। এটা হওয়া উচিত হবে না। যারা আমাদের নিরাপত্তা দেবে, সেই লোকগুলো যদি কোনোভাবে সংক্রমিত হয়, তাহলে তো আমরা শঙ্কায় থাকব। পুলিশ সদস্যদের যাঁরা এভাবে রাস্তায় দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের পিপিইসহ অন্য জিনিসের সংকট কাম্য নয়। ইতালিতে রাস্তায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ সদস্য করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। বিদেশফেরত লোকদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য করা এবং করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন করার কাজটি র‌্যাব বা পুলিশ সদস্যরা করে থাকেন। গণমাধ্যমের খবর, র‌্যাবের সদস্যরা সবাই পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পাচ্ছেন না। বিভিন্ন ইউনিট তাদের নিজেদের চেষ্টায় কিছু পিপিই ব্যবস্থা করছে।

সরকার, অন্য সেবাধর্মী সংগঠন বা বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে তাড়াতাড়ি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। যা করোনা প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখবে এবং দেশের সব নাগরিক করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্ত হতে পারবে। আমাদের সুরক্ষিত রাখতে সাংবাদিক, চিকিৎসক, নার্স, স্বেচ্ছাসেবক, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এবং অন্য সরকারি কর্মকর্তারা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, এটা প্রশংসনীয়। এঁরাসহ অন্যরা ঝুঁকি নিয়ে অক্লান্তভাবে কাজ করছেন। তাঁদের যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা উচিত। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া যদি পারে, আমরাও আল্লাহর রহমতে করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্ত হতে পারব। কিন্তু দরকার সচেতনতা আর সরকারের নির্দেশনা মেনে চলা। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো যদি আমরা মেনে চলি এবং অন্যদের অনুসরণ করতে উৎসাহ দিই, তাহলে আমরাও করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পারি।

লেখক: পিএইচডি ফেলো, জংনান ইউনির্ভাসিটি অব ইকোনমিকস অ্যান্ড ল, উহান, চীন এবং শিক্ষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ