নিম্নবিত্তের ত্রাণ আছে, মধ্যবিত্তের বরাদ্দ কী

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দুদিন আগে মিরপুরের টোলারবাগে বাস করা এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলো। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক, তার প্রমাণ পেলাম তাঁর কথায়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ওই এলাকাটি লকডাউন করা হয়েছে। ফলে অনেকের ঘরে খাবার নেই। বাইরে থেকে কিনে আনার উপায় আপাতত অনেকটা বন্ধ।

লোকটি ইনিয়ে-বিনিয়ে বললেন তাঁর ঘরে চাল ফুরিয়ে আসছে। ডালও শেষ প্রায়। তেল-লবণের বোতল ও বয়ামের তলাও দেখা যাবে আর দু-এক দিনের মধ্যে। তিনি বললেন, নিম্নবিত্তের লোকজন তো সরকারি ত্রাণ পাচ্ছে, বেসরকারি সহায়তা পাচ্ছে, কিন্তু মধ্যবিত্তের কী হবে?

বাংলাদেশের একটি তথ্যভান্ডার আছে। যেখানে সব নাগরিকের সব রকম তথ্য জমা আছে। সেই তথ্যভান্ডার দেখে কি এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সম্ভব—বাংলাদেশে ঠিক কতটি পরিবার মধ্যবিত্তের পর্যায়ে পড়ে? নাহ, যাবে না। কারণ এই তথ্যভান্ডার ভুলে ভরা। এই তথ্যভান্ডারে এইটুকুর খবর নেওয়াও সম্ভব না যে গত এক মাসে কতজন নাগরিক বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন এবং তাঁরা ঠিক কোথায় আছেন। অথচ বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ঢোকার সময়ই ওই তথ্যভান্ডার আপডেট হওয়া উচিত ছিল। সাধারণ লজিক তা-ই বলে। কিন্তু লজিকে মনে হয় এই দেশ চলে না!

জাতীয় তথ্যভান্ডারের কাজটা আসলে কী, সেটা বোঝা আসলে মুশকিলই। দিন কয়েক আগে ব্যাংকে গেলাম কিছু টাকা জমা দিতে। ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটি আমার নয়; একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট। অ্যাকাউন্টটি যেহেতু আমার নয়, সেহেতু আমাকে একটি ফরম দেওয়া হলো পূরণ করার জন্য। সেখান নিজের নাম, বাবার নাম, কী করি, টাকা কেন জমা দিচ্ছি—এই সব বিষয় জানতে চাওয়া হচ্ছে।

ফরমটি পূরণ করতে করতে মনে হলো, আমি মনে হয় কোনো অপরাধ করতে এসে পড়েছি! কেন জমা দিচ্ছি, শুধু এই তথ্যটা ছাড়া আর একটা তথ্যও দেওয়ার মতো তথ্য নয়। দেওয়ার মতো নয় মানে হলো, সরকারের জাতীয় তথ্যভান্ডারে এসব তথ্য আছে। যত দূর জানি, ব্যাংকগুলোর সেই তথ্যভান্ডারে একসেসও আছে। তাহলে ফরম পূরণ করার এই ভোগান্তি কেন?

যা হোক, জাতীয় তথ্যভান্ডারের কথা এ জন্য বললাম, এর ব্যবহার সুনিশ্চিত হলে এখন মধ্যবিত্তের খোঁজ নেওয়া যেত। যাঁরা ত্রাণ নিতে ইতস্তত বোধ করে কিন্তু মহামারির চোরাস্রোতে তাঁদের ঘরে ঢুকে পড়েছে অভাবও। এই অভাব অবশ্য মধ্যবিত্তের জন্য নতুন নয়, তাদের বরং অভাবেই বেঁচে থাকা। কিন্তু সব যখন চলমান থাকে, সেই অভাব থেকে বাঁচার একটা পথও মধ্যবিত্ত পেয়ে যায়। এখন যেহেতু সবকিছু চলমান নয়, স্বাভাবিক নয়, মধ্যবিত্তের সংকটটাও বেশ প্রকট।

সুতরাং এই পর্যায়ে লকডাউনে থাকা এলাকাগুলোর মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর খোঁজ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে সরকারি উদ্যোগ না হলে এদের জীবনধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। অন্তত খেয়েদেয়ে প্রাণটা যাতে বাঁচিয়ে রাখতে পারে, এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতি জরুরি।

নিম্নবিত্তের মতো ত্রাণের লাইনে দাঁড়ানো মধ্যবিত্তের জন্য যে সম্ভব না, তাদের এই মূল্যবোধটাকে এই সময়ে বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু তাদের মূল্যবোধটা যাতে আঘাতপ্রাপ্ত না হয়, তাদের মানসিকতা যাতে অপমানিত না হয়, সেটা নিশ্চিত করানো নিশ্চয় রাষ্ট্রের দায়িত্ব। হ্যাঁ, দায়িত্বের কথা উঠলে অন্য অনেক কথাও ওঠে বটে, কিন্তু এই দুঃসময়ে আমরা অন্তত এইটুকু ধৈর্য ধরি; যতটুকু ধৈর্য ধরলে অন্য বিভেদ ও বিবাদের আলাপ পরেও করা যায়।

লেখক: সাহিত্যকর্মী