এক দশকে কুবির বাংলা বিভাগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ চালু হয়েছে ২০১০ সালের ২৯ মার্চ। ছবি: সিয়াম চৌধুরী
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ চালু হয়েছে ২০১০ সালের ২৯ মার্চ। ছবি: সিয়াম চৌধুরী

প্রতিনিয়ত আমরা কথা বলা, লেখার কাজে অহরহ বাংলা ভাষা ব্যবহার করে থাকি। আর করব নাই–বা কেন, বাংলা যে আমাদের মাতৃভাষা। বাংলা শুধু মাতৃভাষাই নয় অনেকের কাছে এটি পাঠ্য বিষয়ও। অর্থাৎ, বাংলা বিষয়টি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের চার মহাদেশের ৩০টি দেশের ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা ও চর্চা হচ্ছে। গবেষকেরা মনে করছেন, ইংরেজি, চীনা ও জাপানি ভাষার পরপর বাংলা ভাষা নিয়ে বিশ্বের আগ্রহ বাড়ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পাঠদানের বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছে। অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও বাংলা বিভাগ চালু রয়েছে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালের ২৮ মে। বাংলা বিভাগ চালু হয়েছে ২০১০ সালের ২৯ মার্চ। ২০১০ থেকে ২০২০ এই দীর্ঘ ১০ বছরে বিভাগের করিডরে হেঁটেছেন বহু স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণী। যাঁরা পাস করে বের হয়ে গেছেন তাঁরা আজ দেশে-বিদেশে সুনামের সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের।

শুধু পুঁথিগত বিদ্যা কপচানো নয়, কুবির বাংলা বিভাগের প্রতিটি শিক্ষক চান তাঁদের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী হয়ে উঠুক একজন সুনাগরিক।

বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক এবং বর্তমান চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শামসুজ্জামান মিলকী বিভাগের দশক পূর্তিতে বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে যে বাংলা বিভাগে শুরু হয়েছিল, এই ১০ বছরে অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে। আমরা চেষ্টা করছি, যুগোপযোগী শিক্ষা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলতে যাতে তারা দেশের কল্যাণে কাজ করে যেতে পারে। ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক এবং বর্তমান বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে সবাইকে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাচ্ছি।

এই বিভাগের স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীর পথচলার পথ মসৃণ করতে ক্লান্তহীন কাজ করে যান শিক্ষকেরা। তেমনি একজন নূর মোহাম্মদ রাজু। যিনি বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র এবং বর্তমানে বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তিনি বিভাগের এক দশক পূর্তিতে বলেন, বাংলা বিভাগের এক দশক পূর্তিতে প্রথমে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি সব শিক্ষক, শিক্ষার্থীকে। আমি প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে প্রথম থেকেই বাংলা বিভাগের সঙ্গে আছি। বাংলা বিভাগের প্রতিটি চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ প্রবলভাবে আমাকে টানে। ছাত্র হিসেবে এসেছিলাম শিক্ষক হিসেবে রয়ে গেছি এটাই সার্থকতা। বিশেষ করে, বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন যেসব শিক্ষক আমাদের পড়িয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা অবিরাম।

এখন পর্যন্ত ৫টি ব্যাচ তাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছে এই বিভাগ থেকে। বর্তমানে স্নাতকোত্তরে রয়েছে বিভাগের ষষ্ঠ ব্যাচ। ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহফুজ কিশোর বিভাগের দশক পূর্তিতে বলেন, ঠিক পাঁচ বছর আগে নিজের দ্বিতীয় পরিবার ‘বাংলা বিভাগে’ এসে যুক্ত হয়েছিলাম। এই বিভাগের ক্লাসরুম-করিডোরের প্রতিটি ধূলিকণায় যেন মিশে আছে আমাদের অস্তিত্ব। সময়ের বিবর্তনে আমরা বিদায় নিচ্ছি, নবাগতরা এসে দখলে নিচ্ছে আমাদের স্থান। নতুন-পুরাতনের এই বাংলা পরিবার সহস্রকাল টিকে রইবে—সেই কামনা থাকবে।

বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী জামান বাবু। এবার ২০১৯-২০ সেশনে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কটা বেশি দিনের না, মাত্র তিন মাসের। এই অল্প সময়েই বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কটা আত্মার সঙ্গে মিশে গেছে। এই সম্পর্ক আজীবন বেচে থাকবে পরম যত্নে।

মাহফুজ কিশোর, জামান বাবু ছাড়াও আরও অনেক স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীর ভিড় এই বাংলা বিভাগে। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় এক দশক পূর্তি উপলক্ষে সব আয়োজন বন্ধ রয়েছে কিন্তু বিভাগের প্রতি ভালোবাসার কমতি নেই। এই গুমোট পরিস্থিতিতে সবাই সবার খোঁজখবর নিচ্ছে। একসঙ্গে চলতে চলতে বাংলা বিভাগ একটি পরিবারে রূপ লাভ করেছে। নবাগত প্রতিটি অবর্তনকে পরম যত্নে কাছে টেনে নিচ্ছেন অগ্রজ শিক্ষার্থীরা, যা দেখার মতো। পরিশেষে এটাই প্রার্থনা, স্থবির জীবনযাত্রা কাটিয়ে সবাই যেন আবার বিভাগের করিডরে ক্লান্ত পায়ে হাঁটতে পারেন।

* লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়