'আলো' বন্ধুরা খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের

‘চল বন্ধু একসাথে বাঁচি’ স্লোগানে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে। ছবি: লেখক
‘চল বন্ধু একসাথে বাঁচি’ স্লোগানে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে। ছবি: লেখক

কোভিড-১৯ নামের অদৃশ্য এক শত্রু নাজেহাল করছে পুরো বিশ্বকে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ। সব দেশ অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যুদ্ধ করছে অদৃশ্য এই শত্রুর বিরুদ্ধে। কিন্তু এই শত্রুর বিরুদ্ধে যে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করা যায়, যুদ্ধের একমাত্র হাতিয়ার নিজেরাই নিজেদের ঘরে রাখা। কোভিড–১৯ মোকাবিলায় উন্নত ও অনুন্নত বিভিন্ন দেশ লকডাউনের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।

বাংলাদেশেও কোভিড–১৯ তার ভয়াল থাবা বসিয়েছে। আর সেই শত্রুর বিরুদ্ধে জয়ী হতে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সারা দেশে প্রায় সব ধরনের ব্যবসায়িক ও মজুরি কার্যক্রম বন্ধ। এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন দিন এনে দিন খান এমন মানুষ। বাস্তবিক অর্থে এই মানুষগুলোর সংখ্যা সারা দেশে নেহাত কম নয়। মানবতার এই চরম দুর্দিনে সরকারি বিভিন্ন সাহায্য–সহযোগিতার পাশাপাশি এগিয়ে এসেছে ছোট–বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

‘আলো’র খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে মানুষের হাতে। ছবি: লেখক
‘আলো’র খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে মানুষের হাতে। ছবি: লেখক

আসিফ সাজ্জাদ মিশুর হাত ধরে যাত্রা শুরু কুমিল্লার লালমাই উপজেলার একদল স্বপ্নবাজ তরুণের সংগঠন ‘আলো’। এ সংগঠনের ইচ্ছা, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু মানবসমাজের এই দুর্দিনে তারা আলো জেলে চলেছে। সমাজে অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা দুই বেলা আহারের ব্যবস্থা করতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন; তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘আলো’। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মানবতার সেবায়।

ভ্যানগাড়িতে করে ‘আলো’র খাদ্যসামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ছবি: লেখক
ভ্যানগাড়িতে করে ‘আলো’র খাদ্যসামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ছবি: লেখক

‘চল বন্ধু একসাথে বাঁচি’ হচ্ছে আলোর স্লোগান। এ স্লোগানের মূল উদ্দেশ্য, অন্তত কেউ যেন ক্ষুধায় কষ্ট না করে। ছোট এই সংগঠন স্বল্প অর্থায়নে সমাজের অপেক্ষাকৃত নিম্নবিত্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে চাল, ডাল, আলু, লবণ, তেল ও সাবানের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। মিশু, রাসেল, ইউনুস, সাদ্দাম, ফারুকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় কাপাশতলা গ্রামের প্রায় ২০০টি পরিবারকে ১৪ দিনের খাবার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবীদের তৈরি করা খাদ্যের প্যাকেট পৌঁছে দেওয়ার অপেক্ষায়। ছবি: লেখক
স্বেচ্ছাসেবীদের তৈরি করা খাদ্যের প্যাকেট পৌঁছে দেওয়ার অপেক্ষায়। ছবি: লেখক

আলো তাদের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে। সচেতনতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব নিয়েছে খেটে খাওয়া মানুষদের সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ঘরে রাখতে, অন্তত ক্ষুধার তাড়ানায় যেন তাদের বাইরে যেতে না হয়। এই যুদ্ধে তারুণ্য যখন জেগে উঠেছে, তখন আলোর দেখা মিলবেই।

মানুষের প্রয়োজনে মানুষ, এটাই তো মানবতা ও তারুণ্যের স্লোগান। জাতির এই দুঃসময়ে সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি আলোর বার্তা নিয়ে এগিয়ে আসবে তরুণ শক্তি, দেশকে সুরক্ষার জন্য ছোট ছোট ইউনিটে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে, এটাই তো কাম্য। আর এভাবেই আমরা বারবার একসঙ্গে যুদ্ধ করে একসঙ্গে বেঁচে থাকব।

*শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়