দলে-দলে ঢাকায় ফেরার সময় আসেনি এখনও

কাল রোববার গার্মেন্টস কারখানা খুলছে। তাই ঢাকায় ফিরছে দলে দলে মানুষ। ছবিটি শিমুলিয়া ফেরিঘাট থেকে তোলা। ছবি: দীপু মালাকার
কাল রোববার গার্মেন্টস কারখানা খুলছে। তাই ঢাকায় ফিরছে দলে দলে মানুষ। ছবিটি শিমুলিয়া ফেরিঘাট থেকে তোলা। ছবি: দীপু মালাকার

খবরে দেখা যাচ্ছে ময়মনসিংহ থেকে পায়ে হেঁটে ঢাকা ফিরছে দলে-দলে নারী-পুরুষ। সহজ সরল মানুষগুলোর চোখেমুখে নাই ডর-ভয়। অনলাইনে হাজারো মানুষের ফিরে আসার খবর পড়ে, টিভিতে ছবি দেখে অবাক লাগলো। তাদের উদ্দেশ্য আগামীকাল রোববার থেকে তৈরি পোশাক কারখানায় কাজে যোগ দেওয়া। চট্টগ্রামেও দেখছি আনোয়ারায় কেপিইজেডে রোববার থেকে কাজ করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত কর্মীরা। প্রথম আলোর অনলাইনেও রোববার থেকে কেইপিজেড খোলার খবর পড়লাম।

বুঝে উঠতি পারছি না কেন পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে না। পোশাক কারখানা খোলা রেখে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হয় কিভাবে? আমাদের দেশে হাজার-হাজার মানুষ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়নি, তার মানে এই নয় যে শিগগরিই হবে না। করোনাভাইরাস সামাজিক পর্যায়ে সংক্রমণ ঠেকাতে হলে আমাদের সব ধরণের কারখানা বন্ধ রাখতেই হবে। শুধু সরকারি বেসরকারি অফিস বন্ধ রেখে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকানো যাবে না।

আল্লাহ না করুক যদি সংক্রমণ বেড়ে যায়, তখন আমাদের মতো দূর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই দেশে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে যাবে। আমাদের প্রার্থনা এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশে না হোক। নেপালের মতো দেশ যদি লকডাউন ঘোষণা করতে পারে বাংলাদেশ কেন পারবে না।

আপনি সাধারণ মানুষের কথা ভাবছেন? গবীর মানুষ রোজগারের জন্য ঘর থেকে বের হচ্ছেন-এটা ভাবছেন? নেপালের মানুষ আমাদের চেয়ে বেশি গরীব, ভারতে কোটি কোটি মানুষ আছে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি গরীব। তারা পারলে বাংলাদেশ কেন লকডাউন ঘোষণা করতে পারবে না। করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারী বলা হচ্ছে। মহামারীতে মানুষের কষ্ট তো হবেই। শুধু গরীব মানুষের নয়, কষ্ট সকল পর্যায়ের মানুষের। গরীবেরা খাদ্য সংকট আছে, সে কষ্ট অবশ্যই সবচেয়ে বড়। তাদের এই কষ্ট লাগব করার চেষ্টা করতে হবে সরকারকে। তাদের খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। অনেকেই এগিয়ে আসছেনও। দেশে বড়-বড় শিল্প গ্রুপগুলোকে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। মানুষ যেন খাদ্য সংকটে না-থাকে। এ-বিষয়ে কড়া নজর দিয়ে সব-কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা দরকার। ঘরে থাকতে হলে সকল মানুষকেই ঘরে থাকতে হবে। যাদের জরুরি প্রয়োজনে বাইরে থাকতে হয়, বাইরে যেতে হয় তাদের কথা ভিন্ন।

বাংলাদেশের চেয়ে গরীব দেশ পৃথিবীতে আছে। তাদের জনগণ কেমনে ঘরে থাকছে। করোনার হানা তো পৃথিবীর সব দেশে-দেশে। সারা পৃথিবীর খবরাখবর প্রতিনিয়ত পড়ছি, দেখছি। তথ্য এখন হাতের নাগালে, চোখের সামনে। কোনো দেশ কীভাবে করোনা রোধে প্রাণপণে চেষ্টা করছে। দেশে-দেশে শুধু সরকার নয়, জনগণও ভূমিকা রাখছেন করোনা রোধে। সে ভূমিকা হচ্ছে ‘ঘরে থাকা’। নিজে ঘরে থাকা, অন্যকে ঘরে থাকতে সাহায্য করা। কারখানার কর্মীদের ঘরে থাকতে দিন, ঘরে থাকতে উদ্যোগ নিন, ঘরে থাকতে সাহায্য করুন। গরীর অসহায়দের প্রতি খেয়াল রাখুন।

আমি মালয়েশিয়া প্রবাসী। এখন দেশেই আছি। দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী। মালয়েশিয়ায় যারা থাকেন তারা কমবেশি সবাই জানেন, মালয়েশিয়ার মানুষ ঠিকমতো বেতন না-পেলে খেতে পারেন না। অনেকেই বেতন পাওয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহ ভালোভাবে চলেন। দুই সপ্তাহ পর থেকে পেট ভরে খেতে পারেন না। বিশেষ করে মালয়রা। কোন কারণে চাকরি চলে গেলে চলতে কষ্ট হয়ে যায়। ধার দেনা করে চলতে হয়। একবেলা খেলে আরেক বেলা খান না তারা। পকেটে টাকা থাকলে দিনে কয়েক বেলা খায়, না-থাকলে এক-দুই বেলা খেয়ে চালিয়ে দেন মালয়রা। হ্যাঁ, মালয়েশিয়া দেশটা উন্নত, কিন্তু সে দেশের সাধারণ মানুষ একমাস কাজ না-করলে ঠিক মত খেতে পারেন না-এ-রকমই একটি কথা বাংলাদেশি প্রবাসীদের মাঝে পরিচিত। সেই মালয়ের দেশে লকডাউন চলছে গত ১৮ মার্চ থেকে, লকডাউন চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। লকডাউনের সময়সীমা আরো বাড়তেও পারে, যা এখন বলা যাচ্ছে না।

তারা যদি পারে আমাদেরও পারতে হবে এমন নয়। তবে আমাদের পারতে হবে, ঘরে থাকতেই হবে; এজন্য যে, আমাদের সামনের দিনগুলো যেনো পরিস্থিতি খারাপ না-হয়ে ভালোর দিকে যায়। আমরা যেনো করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করে জয়ী হয়ে পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি। এখন ঝুঁকি নিয়ে না-ফেরা, ঘর থেকে বের না-হওয়ায় আমাদের জন্য মঙ্গল। দেশের জন্য মঙ্গল। তাতেই মহামারী থেকে সহসাই রক্ষা পাওয়া যাবে। অন্যথায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে দেশের ষোল কোটি মানুষকে। তা যেন না হয়। সবার মঙ্গল হোক। মোদ্দা কথা দলে-দলে ঢাকায় ফেরার সময় আসেনি এখনও। বরং এখনও অনিশ্চিত কখন, কবে নাগাদ ফেরা যাবে।