সোনামণিরা, হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা

সোনামণিরা, তোমাদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। তোমাদের সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক পরিবেশ আমরা দিতে পারছি না। এমনিতেই স্কুলের ব্যাগের বোঝা, খোলা মাঠহীন শৈশব, দূষিত বায়ু, যান্ত্রিকতা প্রভৃতি নিয়েই বেড়ে উঠছ। এর মধ্যে আবার করোনাভাইরাসে গৃহবন্দী শৈশব। তোমাদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের জন্য এই পরিবেশ আমাদের কারও কাম্য নয়। তবুও তোমরা চিন্তা করো না। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিন্তু গানে গানে তোমাদের জন্য বলেছেন—

কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে...

সত্যিই তো, তোমাদের হারিয়ে যাওয়ার মানা নেই, তবে তা মনে মনে। তোমরা তোমাদের কল্পনায় যেথায় খুশি যেতে পারো। মনমতো মনে মনে নানান জায়গায় ঘুরতে পারো। তোমরা আমাদের আগামী। তোমরাই এ দেশের ভবিষ্যৎ। তোমরা বড় হয়ে ভালো মানুষ হয়ে বিভিন্ন পেশা বেছে নেবে যার যা খুশি। কেউ শিক্ষক, কেউ চিকিৎসক, কেউ প্রকৌশলী, কেউ বৈমানিক, কেউ শিল্পী, কেউ রাজনীতিবিদ হবে, কেউ আইনজীবী অর্থাৎ যার যেটা ভালো লাগবে, সেটাই হবে।

সোনামণিরা, তোমরা এখন এমন এক সময় পার করছ যখন পুরো দুনিয়াতে একটি ভাইরাস আক্রমণ করেছে, যার নাম তোমরা এত দিনে জেনে গেছো। সেটার নাম বিশেষজ্ঞরা দিয়েছেন নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এই কারণে সব দেশে মানুষকে ঘরে থাকতে হচ্ছে, যাতে এই ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত না করে, যেহেতু এটি মারাত্মক ছোঁয়াচে। মানুষ অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে এই কারণে। তোমরাও ঘরে রয়েছ। এর ফলে খোলা আকাশের নিচে খেলার মাঠে তোমরা খেলতে পারছ না, পার্কে-বাগানে ঘুরতে পারছ না, স্কুলে যেতে পারছ না।

একটা কথা তোমাদের বলতে চাই। আমরা কিন্তু ঘরে থেকেও অনেক আনন্দ করে সময় কাটাতে পারি। যেমন লুডু খেলে, দাবা খেলে, ক্যারম খেলে, বাগাডুলি খেলে, ছবি এঁকে, গান গেয়ে, গান শুনে, ছড়া বলে, গল্প শুনে, গল্প বলে, ঠাকুরমার ঝুলি পড়ে, ঈশপের গল্প পড়ে, মীনা কার্টুন দেখে। এ ছাড়া তোমরা বিভিন্ন ফুল, পাখি, গাছপালার সঙ্গে মনে মনে বন্ধুত্ব করেও গল্প করতে পারো।

তোমরা আর কয়েকটা দিন ঘরে থেকেই এমন করে আনন্দের সঙ্গে এই সময়ের শৈশব কাটাতে পারো। আব্বু-আম্মুর কথামতো ঠিক সময়ে খাওয়া, ঘুম আর গোসলের নিয়ম তো রইলই। মাঝেমধ্যে বিকেলে ছাদে যেতে পারো। এখনকার আকাশ খুব পরিষ্কার, যা দেখলে তোমাদের মন ভালো হয়ে যাবে। আর মনে মনে তো অনেক জায়গায় যেতে পারবেই, যেখানে খুশি সেখানে অথবা আগে যেখানে গিয়ে ভালো লেগেছিল। সেটা হতে পারে চিড়িয়াখানা বা পার্ক, সেখানে আবার মনে মনে বেরিয়ে আসতে পারো।

তোমরা নিশ্চয় আবার স্কুলে যাবে, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করবে, মাঠে খেলতে পারবে, পার্কে যেতে পারবে, মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে পারবে, চিড়িয়াখানায় যেতে পারবে। তোমরা সুস্থ থেকো, ভালো থেকো। তোমরা সুস্থ থাকলেই আমাদের পরবর্তী পৃথিবী সুন্দর, স্বাভাবিক থাকবে। তোমরাই হবে আমাদের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তোমাদের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

*লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়