পুলিশকে কিছু বলার আগে একবার ভাবুন

পুলিশ দেশের বিভিন্ন এলাকায় খাদ্য সহায়তা পৌছে দিচ্ছে।
পুলিশ দেশের বিভিন্ন এলাকায় খাদ্য সহায়তা পৌছে দিচ্ছে।

যদি করোনাভাইরাসের এ সময়ে মৃত্যু ছোবল মারে; তবে আপনজন দূরে সরে যাবে হয়তো। কিন্তু মানবিক পুলিশ নিয়মমতো দাফন করবে, এ আস্থাটুকু অর্জন করেছে পুলিশ বাহিনী। মানবসেবার ব্রত নিয়ে কাজ করা এ পেশার মানুষদের অনেকেই নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। কিন্তু ওই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করছে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।

চারদিকে ‘করোনাভাইরাস, করোনাভাইরাস’ একটাই শব্দ। এ ভাইরাসকে নিয়ে তটস্থ সারা বিশ্ব৷ চীনের উহান শহরের খবর জানার পরও আশা করেনি এর প্রভাবে মরবে হাজারো মানুষ। অপ্রত্যাশিত এক বিপদ মানুষের সম্মুখে। রোগ প্রতিরোধের একটাই পথ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা আর মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘরে থাকা। কিন্তু এর জন্য সচেতন থাকা জরুরি মনে করে না বাংলাদেশের মানুষ। বিধাতার হাতে নিয়তিকে ছেড়ে দিয়ে চলাফেরা করা স্বভাবজাত অভ্যাসে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ দেশের সংকট আসন্ন আঁচ করতে পেরেছেন। তাই কালক্ষেপণ না করে এ শহরকে বাঁচাতে নিয়মিত দায়িত্বের পাশাপাশি মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। স্কুল ছুটির পর মানুষ বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আমেজে ছুটে যায় সমুদ্রসৈকতসহ নানা স্থানে। কোনো ধরনের বাধানিষেধ শুনতে নারাজ জনগণ। বিয়েসহ অন্য উৎসব আয়োজন চলে বিভিন্ন স্থানে। এ পরিস্থিতিকে রুখতে মানবিক ভাবনা থেকে সিএমপি নিজস্ব উদ্যোগে সবকিছু বন্ধ করে। মানুষকে হাত ধুয়ে পরিষ্কার থাকার সচেতন থাকার প্রচার চালাতে থাকার সঙ্গে মাস্ক ও জীবাণুনাশক সাবানসহ অন্য দ্রব্যাদির বাজার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

এখানেই থেমে থাকেনি সিএমপি পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান ও তাঁর বাহিনী। একটি মোমের আলো থেকে যেমন হাজার আলো জ্বলে, ঠিক তেমনভাবেই চট্টগ্রামের পুলিশ বাহিনী এ শহরে আশার আলো জ্বালাচ্ছে ক্রমেই। তাই করোনাভাইরাস নিয়ে বিপদগ্রস্ত হলেই ফোন করে সিএমপি হটলাইনে। কারণ, বিশ্বাস করে সাহায্য আসবেই।

সরকার ছুটি ঘোষণার পর ঘরবন্দী মানুষের পাশে থাকতে চট্টগ্রামের পুলিশ রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে। শহরকে পরিষ্কার, চিকিৎসকদের হাসপাতালে পৌঁছানো, রোগীদের ব্যবস্থা করছে। প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিন ও তালিকা তৈরি করেছে।

সবচেয়ে যে বিষয়টি সারা দেশের নজর কেড়েছে, তা হলো নিম্নবিত্তের মানুষদের খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করা। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে সিএমপি গরিব মানুষদের হাতে তুলে দিচ্ছে চাল–ডাল–তেল–আলু। আবার কোতোয়ালিসহ কিছু থানায় রান্না করা খাবার বিতরণ করছে। মানুষকে ঘরে থাকে উৎসাহিত করতে তাদের প্রয়োজনী দ্রব্য ঘরে পৌঁছে দিতে হোম সার্ভিস দিচ্ছে।

হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসীদের খোঁজ রেখেছে প্রতিনিয়ত। ফল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে মানসিক সাহস জুগিয়েছে।

পুলিশ মানে ঘুষখোর। থানার দরজাও টাকা খায়। এসব কারণে পুলিশ এ সমাজে যেন আলাদা জীব। তবে ভালো–মন্দ সব পেশাতেই আছে। কিছু মন্দ লোকের জন্য সবাইকে গালি দেওয়া ভুল। তাই পুলিশ নাম শুনলেই গালি দেওয়ার আগে এখন ভাবতে হবে। কারণ, দিন বদলে গেছে। পুলিশ জনগণের বন্ধু—এ মানসিকতা যেমন পুলিশের মাঝে পরিবর্তন আনছে, তেমন সাধারণ মানুষের মনেও আসছে।

সামাজিক মাধ্যমে একটা ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন পুলিশ নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মধ্যবিত্তদের দিকে। এ শ্রেণির লোকরা নিজের অভাবের কথা বলতে পারেন না। সরাসরি সাহায্য নিতে যেতে পারেন না। তাই নিজের ঘরের জিনিস বিক্রি করে বা ধার করে সংসার চালাচ্ছেন। সচেতন হয়ে ঘরে থাকা এ মানুষদের প্রতি সম্মান জানিয়ে সিএমপি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে গোপনীয়তা রক্ষা করে ঘরে পৌঁছে দেবে সাহায্য। এমন মানবিক ভাবনার মানুষগুলোকে বাস্তবতার নিরিখে গালি দেওয়ার আগে ভাবুন একবার, সত্যিকারের দেশপ্রেম আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই সিএমপি এখন মানবিক পুলিশ। আর সে কারণে সমাজকে করোনাভাইরাস–মুক্ত করতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও অভাবের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ হাতে লড়াই করছে পুলিশ বাহিনী।

আসুন অন্তত একবার মুক্ত মনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ বাহিনীকে জানাই অভিবাদন। আর প্রত্যাশা হোক মানবতার কাছে পরাভূত হবে করোনাভাইরাস।

*লেখক: কলাম লেখক