সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাবার কাছে শ্রেয়ার চিঠি

বাবার কোলে শ্রেয়া। ছবি: সংগৃহীত
বাবার কোলে শ্রেয়া। ছবি: সংগৃহীত

আসসালামু আলাইকুম আব্বু,

আশা করি ভালো আছ। আমি আজ এতটাই অসহায় যে তোমাকে এটা জিজ্ঞাসা করতে পারছি না, তুমি কেমন আছ?

আব্বু, আমি এতটাই অভাগা যে তোমার ভালোবাসা অনুভব করতে পারছি না। আল্লাহ আমাকে হয়তো তোমার ভালোবাসার অংশীদার করতে চায়নি। এই পৃথিবীতে তুমি আমার প্রিয় জিনিস ছিলে। তুমি আমার খেলার সাথি ছিলে। আল্লাহ তোমাকে আমার কাছে থেকে নিয়ে নিয়েছে। আমাকে এই পৃথিবীতে একা করে দিয়েছে। কিন্তু এতে আমার দুঃখ নেই, কারণ, মনে হয়, তুমি সব সময়ই আমার সঙ্গে আছ। আমার পাশে আছ। মাঝেমধ্যে আমার চাচাতো ভাই-বোনদের দেখে মনে হয়, তারা এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যক্তি। কারণ, তাদের পাশে তাদের বাবা আছে। তাদের বাবার ভালোবাসা আছে৷

মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অভাগা। যদি বাবা এখন তুমি আমার পাশে থাকতে তাহলে আমি নিজেকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবতী মনে করতাম। তোমার ভালোবাসা পেতাম, তোমার আদর পেতাম৷ তোমার মনে আছে তুমি আমাকে খাইয়ে দিতে? লোডশেডিংয়ের সময় চাঁদের আলোয় আমাকে গল্প শোনাতে, আর আমি ঘুমিয়ে পড়তাম!

আগে আইসক্রিম খেয়ে যদি কানে ব্যথা হতো, তাহলে মুখ লুকিয়ে কাঁদতাম আর এখন তোমার কথা মনে করে তোমার বালিশে মুখ লুকিয়ে কাঁদি!

জানো আব্বু, আমি এখন সরকারি গার্লস স্কুলে পড়ি। যদি তুমি থাকতে, তাহলে আমাকে তুমি স্কুলে নিয়ে যেতে, এভাবে আমাকে একা একা যেতে হতো না। আমার কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে কাউকে বলা লাগত না, তুমি এনে দিতে।

যখন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও, তখন আমি চার বছরের ছিলাম, আর এখন আমার বয়স ১২।

তোমার সব স্মৃতি আমার মনে আছে। আমি কিছুই ভুলিনি। তুমি যখন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাও, তখন আমি বুঝিনি যে তুমি আমাকে আর শ্রেয়া বলে ডাকবে না। আমাকে চা ঠান্ডা করে আর খাওয়াবে না। আমাকে আর গল্প শোনাবে না, আমার সঙ্গে আর খেলবে না।

জানো আব্বু, এই পৃথিবীতে আমি এমনই অভাগা যে তোমাকে বলতেই পারছি না, ‘আব্বু আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’

আমি তোমাকে হারিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় শাস্তি পেয়েছি। আল্লাহর কাছে এটাই দোয়া করি যে তুমি সব সময়ই ভালো থাকো, আমার পাশে থেকো। আল্লাহ তোমাকে নিশ্চয় খুব ভালো রেখেছেন।

ইতি,
তোমার স্নেহের শ্রেয়া।

*রওনক আহসান শ্রেয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ২০১২ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিপুর মিয়াপাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর সময় পেছন থেকে ঢাকাগামী একটি বাসের ধাক্কায় আহন হন শ্রেয়ার বাবা। হাসপাতাল নেওয়ার পথেই মারা যান তিনি। ওই সময় শ্রেয়ার বয়স ছিল চার বছর।

*চাচাতো বোনের লেখা এ চিঠি নাগরিক সংবাদে পাঠিয়েছেন ইয়াসির আরাফাত