পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছে আইকেন

রাজধানীর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছে ফেসবুক গ্রুপ ‘করোনা রুখতে, পরিচ্ছন্নকর্মীদের পাশে’। ছবি: ফেসবুক
রাজধানীর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছে ফেসবুক গ্রুপ ‘করোনা রুখতে, পরিচ্ছন্নকর্মীদের পাশে’। ছবি: ফেসবুক

বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা ভাইরাসের মহামারির সংকটকালে সবাই যখন সংক্রমণ ঠেকাতে বাসায় অবস্থান করছি, তখন প্রতিদিন গৃহস্থালির আবর্জনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকায় কর্মরত ২১ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এসব পরিচ্ছন্নতাকর্মী জানেন না কোন বাসায় করোনার সংক্রমণ হয়েছে বা কীভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন। আবার এটাও জানেন না, তাঁদের মাধ্যমে পুরো শহরেই করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পোশাক, নেই কোনোরূপ প্রশিক্ষণ, খালি হাতেই তাঁরা কাজ করেন।

রাজধানীর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তানভীর হোসেন নামের এক ব্যক্তি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তানভীর হোসেন ও তাঁর বন্ধুরা বসে থাকেননি, বাসায় বসে তৈরি করেন ফেসবুক গ্রুপ ‘করোনা রুখতে, পরিচ্ছন্নকর্মীদের পাশে’। এই গ্রুপের মাধ্যমে অনলাইনে অর্থ সংগ্রহ করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও ত্রাণ সরবরাহ করে যাচ্ছেন তাঁরা।

সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জীবন বাঁচাতে একটি প্যাকেজের মাধ্যমে নিরাপত্তা পোশাক, মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস, সাবান, পরিচ্ছন্নতার জন্য সাবান এবং তাদের পরিবারের জন্য খাদ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেয় ফেসবুক গ্রুপ ‘করোনা রুখতে, পরিচ্ছন্নকর্মীদের পাশে’। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে একটা ট্রেনিং সেশন করেছেন গ্রুপের সদস্যরা। সেখানে এসব উপকরণ কীভাবে ব্যবহার করবে, কেন ব্যবহার করবে এবং করোনাবিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়।

অনলাইনে অর্থ সংগ্রহ করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও ত্রাণ সরবরাহ করে যাচ্ছে ফেসবুক গ্রুপ ‘করোনা রুখতে, পরিচ্ছন্নকর্মীদের পাশে’। ছবি: ফেসবুক
অনলাইনে অর্থ সংগ্রহ করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও ত্রাণ সরবরাহ করে যাচ্ছে ফেসবুক গ্রুপ ‘করোনা রুখতে, পরিচ্ছন্নকর্মীদের পাশে’। ছবি: ফেসবুক

নিজেদের কার্যক্রম প্রসঙ্গে তানভীর হোসেন বলেন, ‘ধীরে ধীরে নগরবাসী এ উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হতে শুরু করেছে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ফোন করে এ গ্রুপের সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং আমাদের কাজের প্রতি তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তিনি একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আমাদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদান পাঠিয়েছেন। দেশের ভেতর থেকে যেমন অনুদান এসেছে, তেমনি দেশের বাইরে থেকেও প্রবাসীরা সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। সবচেয়ে বেশি সাড়া পাচ্ছি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের থেকে। আমরা যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। সবাই বলছেন এই প্রথম কেউ তাঁদের জন্য এগিয়ে এসেছেন। অনেকে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন, কিন্তু কখনো কোনো পারসোনাল সেফটি ইকুইপমেন্ট পাননি।’

পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জীবন বাঁচাতে নিরাপত্তা পোশাক, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, সাবান, পরিচ্ছন্নতার জন্য সাবান এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য খাদ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেয় ফেসবুক গ্রুপ ‘করোনা রুখতে, পরিচ্ছন্নকর্মীদের পাশে’। ছবি: ফেসবুক
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জীবন বাঁচাতে নিরাপত্তা পোশাক, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, সাবান, পরিচ্ছন্নতার জন্য সাবান এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য খাদ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেয় ফেসবুক গ্রুপ ‘করোনা রুখতে, পরিচ্ছন্নকর্মীদের পাশে’। ছবি: ফেসবুক

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তানভীর হোসেন বলেন, ‘আমরা মনে করি পরিচ্ছন্ন দেশ পেতে চাইলে আমাদের অবশ্যই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাঁদের সাহায্য করতে হবে এবং তাদের জীবন নিরাপদ করতে হবে। আমরা আমাদের এই প্রচেষ্টা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। করোনা সংকট উত্তরণের পর আমরা আমাদের উদ্যোগ সারা দেশে সম্প্রসারিত করতে চাই। এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা চাই।’