এবার দূর থেকে বৈশাখের শুভেচ্ছা

বাঙালির জীবনে সর্বজনীন বড় এক উৎসবের নাম বাংলা নববর্ষবরণ। মানুষের জীবন রক্ষায় ঘরবন্দী সময়ে এবার অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ভিন্ন রূপে এল বৈশাখ। এখন শুধু ছাদবাগানে সময় দিয়ে, বাড়ির পাশে খালি জমিতে সবজিবাগান করে কাটছে সময়। এর মাঝেই বৈশাখ এল। কথা ছিল ১৪২৭ বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন করতে এ বছর রাঙামাটির রাজস্থলী যাব। ফেব্রুয়ারি থেকে পরিকল্পনা এমনই ছিল। মনি ভাবির সঙ্গে কথা হয়েছিল ওনার ও আমার বাচ্চাদের নিয়ে মারমাদের সাংগ্রাই আর চাকমাদের বিজু উৎসব দেখব এই বৈশাখে। পাহাড়িদের বৈসাবি উৎসব সত্যিই দারুণ উপভোগ্য। ওদের বৈসাবি উৎসবের খাবারগুলো খুব সুস্বাদু। ১৪২৫ সনে দেখেছি, উপভোগ করেছি রাঙামাটির বরকলে। সেই স্মৃতি বহু বছর হৃদয়ে জ্বলজ্বল করবে। সেই সময়ের বরকল থানার ওসি মফজল ভাই এখন কর্মরত নতুন জায়গা রাজস্থলীতে। আবার পাহাড়িদের জীবনযাত্রা ও বৈসাবি উৎসব দেখতে নতুন জায়গা রাজস্থলী যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাই। কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেঙেচুরে চুরমার করে দিয়েছে করোনাভাইরাস। এখন রাজস্থলী যাওয়া দূরের কথা, ঘর থেকে দুই কদম বাইরে যাওয়া মানা।

ঘরবন্দী মানুষকে ঘরেই পরিবার নিয়ে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করতে বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমরা করেছিও তা। তিনি বলেছেন ডিজিটালভাবে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করতে। হ্যাঁ, পয়লা বৈশাখের সকাল থেকে ডিজিটাল মিডিয়ায় নতুন বাংলা সনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি শত শত বন্ধুর সঙ্গে। তা ফেসবুকের মাধ্যমে, মেসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপে।

ডিজিটাল মাধ্যমে ভালোই শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে বহু বন্ধুবান্ধব, আপনজনের সঙ্গে, চেনা-অচেনা মানুষের সঙ্গে। সেটা কেমনে বলছি, পয়লা বৈশাখের সকাল থেকে বৈশাখের শুভেচ্ছা জানিয়ে, ‘শুভ নববর্ষ’ লেখা ফেসবুক ওয়ালে যত চেনা-অচেনা মানুষের পোস্ট দেখেছি, তার অধিকাংশে লাইক, কমেন্ট করেছি। ফিরতি কমেন্টও পেয়েছি। মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে তা হয়েছে। এভাবেই শত-শত মানুষের সঙ্গে বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়ে গেল। ভালোই তো লেগেছে। ডিজিটাল মিডিয়া আছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে। শুধু দেশে সীমাবদ্ধ নয় এই শুভেচ্ছা বিনিময়, লকডাউনে ঘরবন্দী থাকা পৃথিবীর নানা দেশে-দেশে প্রবাসী বন্ধুদের সঙ্গে, আপনজনের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় ঘটেছে। প্রায় এক মাস ধরে করোনায় আবদ্ধ মানুষের মনে বিরক্তিকর সময়ে কিছুটা আনন্দের হাওয়াও লেগেছে বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময়ে। এই বৈশাখে সবারই প্রত্যাশা একটাই, আগামী বৈশাখে মিলিত হবে, শুভেচ্ছা বিনিময় হবে জড়িয়ে ধরে, হাতে হাত মিলিয়ে, মেলায়, উৎসবে, গানে-গানে; ঢাকার বটমূলে, চট্টগ্রামের সিআরবিতে অথবা রাঙামাটি বরকল হাইস্কুলের মাঠে। অথবা কুয়ালালামপুরের ক্রাফট কালচারাল কমপ্লেক্সে বা কুয়ালালামপুর ট্যুরিজম সেন্টারে বা হোটেল রেনেসাঁর হলরুমে।


সবার প্রত্যাশা–প্রার্থনা, করোনামুক্ত হোক মানুষের পৃথিবী। শিগগিরই মানুষ আবার ফিরে যাবে স্বাভাবিক জীবনে। মানুষের তৈরি মহাসড়কগুলোয় পশুপাখি নয়, আবার ছুটবে মানুষের গাড়ি। মুক্ত আকাশ শুধু পাখিদের নয়, সেখানে মানুষ আবার ওড়াবে উড়োজাহাজ, রকেট। বিমানবন্দরগুলো আবার রাতদিন ব্যস্ত হয়ে উঠবে মানুষের আগমন-বহির্গমনের সিল মারায়। আবারও পৃথিবীর নানা দেশের পর্যটকের ভিড় হবে কুয়ালালামপুরের চায়না টাউনে। আবারও আরব দেশগুলোর হাজার হাজার পর্যটকের ‘ইয়া হাবিবি, তাল’ বলে ডাকব। কিংবা জাপানি পর্যটককে মাস্তা বলে ডাকব। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে আবারও ইতালীয় পর্যটকেরা ঘুরবে দেশে দেশে। কম খরচে কীভাবে বেশি দেশ ঘোরা যায়, তা তো ইউরোপীয়রা ভালোই জানে।

আমার–আপনার সবার প্রার্থনা একটাই, করোনামুক্ত হোক বাংলাদেশ, করোনা মুক্ত হোক পৃথিবী। মানুষের জয় হোক। সেই প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত ঘরে থাকি, নিরাপদে থাকি। দূর থেকেই ভালোবাসা সবার জন্য। করোনাকাল ফুরিয়ে গেলে হাত মেলাব, ইনশা আল্লাহ।

লেখক: প্রাবন্ধিক।