সিরাজগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা

সিরাজগঞ্জে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের সদস্যরা। ছবি: লেখক
সিরাজগঞ্জে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের সদস্যরা। ছবি: লেখক

পঁচাত্তর বয়সী আব্দুস সাত্তার টরো মিয়া। বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার কুনকুনিয়া গ্রামে। কয়েক দিন আগে হঠাৎই তিনি ঠান্ডা, জ্বর অনুভব করছিলেন। সঙ্গে কিছুটা কাশিও ছিল। কপালে টরো মিয়ার চিন্তার ভাঁজ। কারণ করোনা দুর্গত হিসেবে এই উপজেলায় আশপাশের কয়েক গ্রামে প্রশাসনিকভাবে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। লাগবে ওষুধও। ফোন করলেন নিজ এলাকার এক কলেজশিক্ষক মো. নাজমুল হুদা চয়নকে। তিনি জানালেন কাজিপুরের ডাক্তারদের নিয়ে গঠিত ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমকে। একটুপর মোটরসাইকেল চেপে পিপিই পরিহিত দুজন ডাক্তার এসে হাজির হন টরো মিয়ার বাড়িতে। চিকিৎসা নিলেন, পেলেন বিনা মূল্যের কিছু ওষুধও। এখন তিনি সুস্থ আছেন।

একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা আব্দুস সামাদ। বয়স প্রায় ষাটের কোঠায়। তিনিও হঠাৎ অসুস্থতা অনুভব করায় ফোন করেন মেডিকেল টিমকে। বাড়ি থেকেই নেন চিকিৎসা সেবা। শুধু টরো মিয়া কিংবা আব্দুস সামাদ নয় মাত্র ১৩ দিনেই প্রায় ৪৫০ পরিবারকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন এ মেডিকেল টিমটি।

এতক্ষণ বলছিলাম কাজীপুরের ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম নিয়ে। এ আয়োজনের উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। নিজ এলাকার কিছু স্বেচ্ছাসেবী ও দলীয় লোকজন নিয়ে নিজের অর্থেই করোনা প্রাদুর্ভাব থেকে মানুষের কষ্ট লাঘব করতে এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা দলের রয়েছে দুটি হটলাইন নম্বর ০১৯১৬১০০৮৯০, ০১৩১২৯২১১১৯। ইতিমধ্যে মাইকিং ও সামাজিক গণমাধ্যমেও যোগাযোগের নম্বরটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ টিমে পাঁচ ডাক্তারসহ রয়েছেন ৮ জন সদস্য। এরা সবাই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন।

চিকিৎসা দলের সদস্য ডা. এম ফজলুল হকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ উদ্যোগের ফলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০টি পরিবারকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। নদীভাঙন প্রবণ এ এলাকায় বেশ কিছু ইউনিয়নের মানুষের বসবাস দুর্গম চরাঞ্চলে। সেখানেও অনেক সময় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।

ডা. এম ফজলুল হক আরও জানান, আমরা প্রথমে হটলাইনের দেওয়া কলে রোগীর প্রাথমিক অবস্থা শুনি। যদি রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন মনে হয়, তখন জরুরিভাবে পিপিই পরে রোগীয় বাসায় চলে যাই। বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধপত্র দিই। বেশি সিরিয়াস হলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি।

মেডিকেল টিম ফোন পেলে বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দেন। বিনা মূল্যের কিছু ওষুধও দেন সদস্যরা। ছবি: লেখক
মেডিকেল টিম ফোন পেলে বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দেন। বিনা মূল্যের কিছু ওষুধও দেন সদস্যরা। ছবি: লেখক

মেডিকেল টিমের আরেক স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক আতিক। পড়াশোনা ও ইন্টার্ন শেষ করেছেন বগুড়া একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে। নিজ এলাকার মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের গ্রামের মানুষজন বেশ আতঙ্কগ্রস্ত। আবার অসচেতনও। মেডিকেল টিমের মাধ্যমে তাদের প্রাথমিক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি সচেতন করতে। এ দুর্যোগে ডাক্তার যেহেতু ‘ফ্রন্ট ফাইটার’, সেহেতু আমি নিজেও সে মানসিকতাই নিয়ে কাজ করছি।

উদ্যোগটি নেওয়া ব্যাপারে প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বলেন, আমরা ইতিমধ্যে কাজীপুর উপজেলায় শুরু করেছি। আমাদের পাশের রতনকান্দি, বাগবাটি, ছোনগাছাসহ আশপাশের এলাকায় এ সেবাটি চালু করেছি। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগী দেখার ব্যবস্থা করেছি যাতে উপজেলা হাসপাতালের ওপর কিছুটা চাপ কমে। আর রোগীরা ঘরের বাইরে বের হলে তো করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

এ ব্যাপারে কথা হয় কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহিদ হাসান সিদ্দিকীর সঙ্গে। তিনি জানান, এই স্বেচ্ছাসেবী মেডিকেল টিমের কাজটি বেশ প্রশংসাযোগ্য। আমি উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানাই। কাজিপুর উপজেলার ৪ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পক্ষে একা অতিশয় দুরূহ কাজ। তবে মেডিকেল টিমের প্রচেষ্টা কিছুটা হলেও সেটি লাঘব হবে। সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সচেতনও হবে।