সময় এখন উদ্যোক্তা হওয়ার

যেখানে সমস্যা সেখান থেকেই সমাধান বের করতে হয়। ছবি: সংগৃহীত
যেখানে সমস্যা সেখান থেকেই সমাধান বের করতে হয়। ছবি: সংগৃহীত

করোনা ভাইরাসে দিনদিন মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। একইসঙ্গে বাড়ছে ক্ষুধার তীব্রতা। এভাবে কর্মহীন জীবন চলতে থাকলে না খেয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা কম হবে না। তাই স্পেন লকডাউন শিথিল করেছে। ইতালি, ইউক্রেন লকডাউন রাখলেও কিছু প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট খুলে দিছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সেদিকেই হাঁটার কথা ভাবছে। এর মূল কারণ অর্থনীতি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে অর্থনীতির এমন দূরাবস্থা কেউ দেখেনি। আইএমএফের মতে, এ বছর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ, ইতালি, স্পেন সবদেশের জিডিপিই অনেক নিচে থাকবে। ভারত, চীনের জিডিপি জিরোতে না নামলেও থাকবে একদম তলানিতে। একইসঙ্গে আরও বলা হয়, ১৯৭৬ সালের পর এভারই চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম হবে।

ক্ষতি কমিয়ে আনতে প্রতিটি দেশেই বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এসব প্রণোদনার বেশিরভাগই ব্যবসা সংশ্লিষ্ট। সরকার অর্থ দিচ্ছে ঋণ হিসেবে। স্বল্প সুদে এসব ঋণ যেন প্রতিষ্ঠানের চলমান ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে। একইসঙ্গে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, এ সময় যেমন অর্থ সংকটে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে, তেমনই নতুন অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু হবে। উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়বে। নতুন নতুন উদ্যোগ দেখা যাবে। নতুন অনেককিছুর চাহিদা বাড়বে। কৃত্রিম চাহিদা এমন পন্যের সংখ্যাও কম হবে না। বিশেষ করে, প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাবে। করোনাভাইরাসে ভেন্টিলেটর সংকট কমাতে একদল প্রকৌশলী কৃত্রিম ভেন্টিলেটর বানাচ্ছে। এটা তারই বড় ও বাস্তবিক উদাহরণ।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) প্রেসিডেন্ট আলমাস কবির ১১ এপ্রিল এক কলামে বলেছেন, কোভিড ১৯-এর পরবর্তী সময়ে রোবটের মাধ্যমে বিভিন্ন পন্যের ডেলিভারি বেড়ে যাবে। মানুষ মানুষের সাথে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব রাখতে সচেতন মানুষেরা এসবে ঝুঁকবে।

উদ্যোক্তাদের কনন্টেন্ট নিয়ে তৈরি বিজনেস ইন্টেলিজেন্সি সাইট মার্কারে এ বিষয়ে একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তার লেখা পড়লাম গত পরশু। তিনি একজন বিনিয়োগকারীও। নাম ফেলিকস ইসার। তার মতে, সমস্যা উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করে। এ বিষয়ে তিনি তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। ২০০৮-০৯ এ যখন অর্থনৈতিক সুনামি হয়, তেমন দুর্দশার মধ্যে তার প্রতিষ্ঠানের যাত্রা।

করোনা সংকটে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে তেমনই নতুন অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু হবে। ছবি: সংগৃহীত
করোনা সংকটে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে তেমনই নতুন অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু হবে। ছবি: সংগৃহীত

ফেলিকস ইসার বলেন, এ সময় মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। নতুন চাহিদা বেড়ে যায়। ব্যাংকে ঋণের পরিমাণ কম থাকে। সরকারি চাপ কম থাকে। প্রতিনিয়ত ব্যাংক পাড়ায় তলব পড়ে না। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তেমন প্রতিযোগিতাও থাকে না। এই সময়টায় যদিও অর্থনৈতিক চাপের কারণে একটু ধীরগতির ব্যবসা থাকে, তবে এ সময় চাপ সামলে ফেললে যে অভিজ্ঞতা হয় তা না অন্য কখনো হয় না। তিনি মনে করেন, এই সময়ে কেউ চারটি বিষয় সহজে আয়ত্তে আনতে পারলে উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হবেই।

প্রথমত, ডায়নামিক আইডিয়া
যেহেতু সংকট নানান সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়, তাই দারুণ উদ্যোগ মাথায় আসার এখনই সুযোগ। এ সময় মাথা খাটালে অসংখ্য উদ্যোগ চিন্তায় চলে আসে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, প্রযুক্তি ও কৃষিখাতের একটা বিপ্লব হয়তো করোনা পরবর্তী সময়ে দেখা যাবে। অসংখ্য শিক্ষিত তরুণ চাকরির অভাবে আর কৃষিতেই মুক্তি চিন্তা নিয়ে এদিকে ঝুঁকবে।

দ্বিতীয়ত, দক্ষ কর্মীর প্রাপ্তি
যেহেতু, এই সংকটে অসংখ্য মানুষ বেকার হবে। কর্মহীন মানুষের মাঝে দক্ষ লোকের সংখ্যা কম হবে না। তাদের সহজেই নিয়ে নেওয়া যাবে। এতে প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। অভিজ্ঞ লোক দিয়ে কম প্রতিযোগিতার সময়ে রাজ করা সম্ভব হবে।

তৃতীয়ত, ফান্ডিং
এ সময়ে ফান্ডিং কমে যাবে। বিজ্ঞাপনের বাজার সংকুচিত হবে। ব্যয়ের পরিমাণ কমে যাবে। সঞ্চয়, বিনিয়োগের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমবে। তবুও কিছু বিষয়ের উপর নজর থাকবে সবার। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপদ আবাসনসহ সেবাখাতে বিশ্বস্ততা ও টেকসই চাইবে সবাই। এ সবের কিছু কিছু বিষয়ে এখনই ফান্ডিং থাকবে। যেসবে থাকবে না, সেগুলোতেও সম্পর্ক তৈরি করা গেলে সংকট কেটে গেলে ক্রাউড ফান্ডিং করা, বিনিয়োগ বাড়ানো সহজ হবে।


সবশেষ, ক্রেতা খুঁজে বের করা। লয়াল কনজিউমার তৈরি করা। এ সময়ে নির্দিষ্ট টার্গেট কাস্টমার খুঁজে বের করা সহজ৷ এবং তাদের থেকেই কিছু মানুষকে যারা কনজিউমার করতে পারবে তারাই সফল হবে।

ফেলিকস ইসার মনে করেন, প্রাথমিক সময়ে এই সংকট সামলানো কঠিন হলেও অসাধ্য না। কেউ দুইবছর টিকে থাকলেই তার এই সময়ের প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময়ে সুফল বয়ে আনবে। ছোট বেলায় আমিও একটা কথা খুব শুনতাম, "ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে যে যুদ্ধের ঘোষণা দিতে পারে, সে-ই তো বীর!"