ধরিত্রী দিবস কেমন হওয়া উচিত

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের অঙ্গীকার আজও বিশ্বজনীন। কবি বলেছিলেন, ‘এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য ক'রে যাব আমি- নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’।

আজ ২২ এপ্রিল, সারা বিশ্বে আজকের দিনটিকে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে সানফ্রান্সিস্কোতে ইউনেসকো সম্মেলনে শান্তিকর্মী জন ম্যাককনেল পৃথিবী মায়ের সম্মানে একটা দিন উৎসর্গ করতে প্রস্তাব করেন। শান্তির ধারণা থেকে গোলার্ধে বসন্তের প্রথম দিন হিসেবে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ প্রথম দিনটি উদযাপিত হয়। 


ধরিত্রী দিবস কী
১৯৭০ সালে প্রথমবার ধরিত্রী দিবস পালিত হয়। সে সময় ২০ মিলিয়ন মানুষ পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন। এ ঘটনার সূত্রপাত ১৯৬৯ সালে সান্তা বারবারায় তেল উপচে পড়া থেকে, যার সঙ্গে ধোঁয়াশা ও দূষিত নদীর মতো ইস্যুগুলোও জুড়ে গিয়েছিল।


পরবর্তী ৫০ বছরে পরিবেশ সক্রিয়তায় ধরিত্রী দিবস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্যারিস চুক্তিতে ২০০ দেশ বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস নিষ্কাশন কমানোর লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ধরিত্রী দিবসে স্বাক্ষর করেছিল।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত। এমন প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং পৃথিবীকে নিরাপদ এবং বাসযোগ্য রাখতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজকের এই দিনটি পালন করা হয়। সারা বিশ্বে এ দিনটিকে বলা হয় ‘আর্থ ডে’ বা ‘ধরিত্রী দিবস’। পৃথিবীকে নিরাপদ এবং বাসযোগ্য রাখতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হয়। তবে এ বছর পুরো পৃথিবী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে কোনো আয়োজন হয়তো হচ্ছে না। পৃথিবী যে অনিরাপদ এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, তা স্পষ্টত লক্ষণীয়। এমন প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এ দিবস পালিত হোক ভিন্ন ভাবে। এসো হাত ধৌত করি, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করি, বাইরে যাওয়ার আগে মাস্ক ব্যবহার করি। আসুন একটি বসবাসযোগ্য নিরাপদ পৃথিবী গড়তে নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি।


ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে পৃথিবী। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে মাটির ক্ষয়। তাই আগামী দিনে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না। সেচ হয় এমন জমির পরিমাণ বাড়ছে। মাটির ক্ষয় অনেক বেড়ে গেছে। যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সাব সাহারন আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। শুধু চাষ বেশি হওয়া নয়, ব্যাপক হারে গাছ কাটাও মাটির ওপরে চাপ তৈরি করছে। এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে সারের ব্যাপক প্রয়োগ। এর ফলে মাটির স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়েছে। অন্যদিকে তাপমাত্রা বাড়ার ফলে বিভিন্ন মৌসুমের ফসলের পরিমাণ কমছে।
২০৬০ সালের মধ্যে ভারতে চাল উৎপাদন ১২ শতাংশ কমতে চলেছে বলে রিপোর্ট বলছে। এর মূল কারণ পরিবেশ, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। গোটা এশিয়ায় পরিবেশের বদলে যাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, লাওস ও চীনের মতো দেশের। উৎপাদন কমে যাওয়া, দুর্বল পরিকাঠামো, বন্যা, রোগের প্রাদুর্ভাব, পরজীবীর উৎপাতে ফসলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। খাদ্য উৎপাদন কমে গেলে খাদ্য সুরক্ষা ভালো করে হবে না। এর ফলে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। বাতাসে যেভাবে কার্বনের পরিমাণ বাড়ছে, তাতে এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা আরও বেশি। পরিবেশ বদলের কারণে ফসলে প্রোটিন, পুষ্টি, ভিটামিন বি-র মতো উপাদান কমছে।


এশিয়ার ৪৮টি দেশের মধ্যে বর্তমানে ৩৮টি দেশে খরার প্রভাব রয়েছে। ভারতে গত কয়েক দশকে খরার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। উত্তর ভারত, মধ্য মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ উপকূলে খরার প্রভাব গত কয়েক দশকে অনেক বেড়েছে। এর ফলে খাদ্যনিরাপত্তার অভাব অনেক বড় করে দেখা দিয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে ভারতসহ নানা দেশের সামনে যে সমূহ বিপদ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।


যদি আমরা পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য রাখতে চাই, তবে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। গাছকে ভালোবাসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আসছে বর্ষায় যদি আমরা সবাই কমপক্ষে দুটি করে গাছ লাগাই তবে আগামী ১০ বছরে তাপমাত্রা বাড়ার বদলে উল্টো সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে। এবং ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসও কমবে। আমাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হবে। আমি মনে করি, সরকারিভাবে আরও গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক করা উচিত আর সরকারের অনুমতি ছাড়া বড় গাছ কাটা নিষিদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তন এখন পুরো মানবজাতির বড় ইস্যু হয়ে গেছে। আমাদের বাঁচা-মরার প্রশ্ন হয়ে গেছে। তাই আসুন একটি বসবাসযোগ্য নিরাপদ পৃথিবী গড়তে নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি।


*লেখক: প্রভাষক, উইন্স কলেজ