ইরফান খানের মৃত্যু: বিশ্ব চলচ্চিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি

ইরফান খান
ইরফান খান

ইরফান খান বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতের একটি নক্ষত্রের নাম। মহামারির কালো আকাশে একরাশ অপূর্ণতা এবং বিনোদনজগতে শূন্যতা সৃষ্টি করে গতকাল বুধবার পরলোকগমন করেন। গত শনিবার রাতেই তাঁর মা সাইদা বেগম বার্ধক্যজনিত রোগে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর সময় কাছে থাকতে পারেননি। হাসপাতালের বিছানা থেকে ভিডিও কলে দেখেছেন শেষকৃত্য। কে জানে, হয়তো মাকে কাছ থেকে দেখার আকুতিই তাঁকে পরপারে নিয়ে গেছে।

অবিশ্বাস্য প্রতিভা, কর্মঠ কর্মী, দক্ষ অভিনেতার যোগ্যতা নিয়ে ভারতের রাজস্থানের জয়পুরে জন্মগ্রহণ করেন ইরফান। পরিবার সেখানে অবস্থান করায়, প্রাথমিক শিক্ষা রাজস্থানেই সম্পন্ন হয়। এরপর অবশ্য দিল্লিতে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় পড়তে আসেন। প্রবল ইচ্ছাশক্তি, অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বলিউডে নাম লেখান।

ইরফান খানের বিচরণ শুধু বলিউড পাড়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, সমসাময়িক বিশ্ব চলচ্চিত্রের প্রিয় মুখ ছিলেন তিনি। ‘স্লামডক মিলিয়নিয়র’, ‘লাইফ অব পাই’, কিংবা ‘সালাম বম্বে’, ‘মকবুল’, ‘লাঞ্চবক্স’, ‘পিকু’সহ অনেক কালজয়ী সিনেমার অভিনেতার অকালমৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অভিনয় জগতে শাণিত বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সহজাত অভিনয় করে হাজারো দর্শকের মন ছুঁয়ে গেছেন। হলিউড, ব্রিটিশ ভারতীয়, বলিউড এবং তেলেগু চলচ্চিত্রে বেশ প্রতাপের মধ্য দিয়েই কাজ করেছেন। ২০১২ সালে মার্কিন চলচ্চিত্র ‘অ্যামেজিং স্পাইডার ম্যান’–এ দৃষ্টিনন্দন অভিনয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হন বিনোদন জগতের মহতি শিল্পী। এরপর ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ ছিল আরেকটি চমক।

১৯৮৮ সালে মীরা নায়ার পরিচালিত, একাডেমি পুরস্কার মনোনীত হিন্দি চলচ্চিত্র ‘সালাম বম্বে’ সিনেমায় কাজ করার মাধ্যমে সিনেমা জগতে পা রাখেন ইরফান। চলচ্চিত্রে পদার্পণের ৩০ বছরে ইফরান খান প্রায় ৫০টির কাছাকাছি দেশি-বিদেশি সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে বারবার দর্শককে বিমোহিত করেছেন। ২০১৩ সালে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন যেন তাঁর প্রতিভাকেই জানান দিচ্ছিল। নিজেকে বারবার সিনেমা জগতের অন্যতম সেরা অভিনেতা প্রমাণ করেছেন।

২০১৮ সালে এই টুইটার বার্তায় ইরফান খান জানান, তিনি এন্ডোক্রাইন টিউমারের চিকিৎসা নিচ্ছেন। এটি এমন একধরনের রোগ, যেটি রক্তে হিমোগ্লোবিন সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করে। পরে তিনি লন্ডনের একটি হাসপাতালেও চিকিৎসা নেন। দুই মাস পর কষ্টের তীব্রতা ও অনিশ্চিত জীবন নিয়ে ভক্তদের উদ্দেশে চিঠিও লিখেছেন।

যাই হোক, সব কষ্ট ভুলে তিনি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অবিশ্বাস্য প্রতিভাবান এই গুণী শিল্পীর মৃত্যু বিনোদন জগতে শূন্যতা সৃষ্টি করে গেল। তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি।

*লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়