সত্যজিৎ রায়ের নিরানব্বই

সত্যজিৎ রায়
সত্যজিৎ রায়

বছর বারো আগে গ্রামে তখনো স্যাটেলাইটের দৌরাত্ম্য শুরু হয়নি। তখন বিটিভির পাশাপাশি ভারতের একটা চ্যানেল দেখা যেত, ‘ন্যাশনাল’। চ্যানেলটি বিকেলে হয়ে যেত দূরদর্শন কলকাতা। ভারতের বাংলা চ্যানেল। রোববার বিকেলে একটা করে সিনেমা দেখাত এখানে। স্বল্প বিজ্ঞাপন বিরতির কারণে মাঝেমধ্যে চ্যানেলটা ভালোই দেখা হতো। এক দিন স্কুল থেকে এসে টিভি চালিয়ে দেখছি অনেক আগের সাদা–কালো একটা সিনেমা হচ্ছে। সাদা–কালো হলেও কেনো যেন সিনেমাটা দেখতে বেশ ভালো লাগতে শুরু করল।

মোরা দুজনাই রাজার জামাই, কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়, আহা কি আনন্দ আকাশে–বাতাসে, এ যে দৃশ্য দেখি অন্য, এবারে দেখো গর্বিত বীর—এ রকম সুন্দর সুন্দর সংলাপের আলোকে গান। গুপী, বাঘা, হীরক রাজা, উদয়ন পণ্ডিত ইত্যাদি চরিত্রে যথাক্রমে তপেন চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, উৎপল দত্ত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কাহিনি, সংলাপ, গান, চরিত্র সবকিছু মিলিয়ে আমার কিশোর মন তখনই জয় করে নিলো সিনেমাটা। ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমার মাধ্যেম শুরু, এখন পর্যন্ত সত্যজিৎ রায়ের প্রতিটি সৃষ্টি আমি গলাধঃকরণ করে আসছি একচিত্তে। এ পর্যন্ত দেখে আসছি অপুর সংসার, পথের পাঁচালী, গুপি বাইন বাঘা বাইনসহ আরও অনেক সিনেমা।

সত্যজিৎ রায়ের যে সৃষ্টি যখন দেখি বা পড়ি, মনে হয় এত দ্রুত কেনো শেষ হয়ে গেল। আরেকটু থাকলে আরও ভালো লাগত। প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি গল্প যেন মনে হয় এখনো জীবন্ত অথচ প্রতিটি কাহিনি লেখা হয়ে হয়েছে আমার জন্মের অনেক আগে। তবু মনে হয় সব যেন আমার জন্যই লেখা!

সত্যজিৎ রায়
সত্যজিৎ রায়

করোনার কারণে ছুটি চলছে এক মাসের বেশি সময় ধরে। এই সময়ে একটা অভ্যাস তৈরি হয়েছে; প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সত্যজিৎ রায়ের যেকোনো একটা গল্প বা উপন্যাস চোখ বন্ধ করে শুনি। বেশ কিছু রেডিও চ্যানেল খুব সুন্দর আঙ্গিকে অডিও বই প্রচার করছে, সেখানেও সত্যজিৎ রায়ের আধিপত্য। প্রতিটি কাহিনি একাধিক বার শোনার পরও কোনো এক অদৃশ্য কারণে কোনো কাহিনিই পুরোনো হয় না।

মহান সৃষ্টিশীল এ মানুষটির জন্মতারিখ আজ ২ মে। কৈশোর থেকে শুরু করে আমৃত্যু বাংলা ভাষাভাষী প্রত্যেকের দুরন্তপনা স্বপ্নের কারিগর তিনি। ২ মে ১৯২১ সালে জন্ম নেওয়া এ মানুষটি গত হয় ২৩ এপ্রিল ১৯৯২ সালে। বেচে থাকলে বয়েস হতো ৯৯। তবু চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায় বেঁচে থাকবেন ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কু, জটায়ু, তোপসে ইত্যাদি চরিত্রের ভিতর আজীবন।

*লেখক: শিক্ষার্থী সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়