করোনা আমাগো শেষ কইরা দিছে, জামদানি কারিগরদের হাহাকার

জামদানি কারিগরদের কোনো কাজ নেই। অলস সময় কাটছে। ছবি: লেখক
জামদানি কারিগরদের কোনো কাজ নেই। অলস সময় কাটছে। ছবি: লেখক

বিয়ে-শাদি কিংবা ঈদে বাঙালি রমণীর জামদানি শাড়ি ছাড়া নাকি চলেই না। অনুষ্ঠানে কিংবা পার্বণের সময় জামদানির চাহিদা বেশি থাকায় ওই সময় জামদানিশিল্পীরা ব্যস্ত সময় কাটান। আর ঈদ এগিয়ে এলে তো কথাই নেই। ঈদের আগে নাওয়া-খাওয়ার ফুরসতটুকু পান না নারায়ণগঞ্জের জামদানিশিল্পীরা। কিন্তু এবারের চিত্র ঠিক উল্টো। এবার জামদানিশিল্পীরা বেকার ও অলস সময় কাটাচ্ছেন।


ফি-বছরগুলোতে ভারত, সৌদি আরব, দুবাই, ইন্দোনেশিয়ায় জামদানি শাড়ি রপ্তানি করা গেলেও এবার তা সম্ভব হয়নি। শাড়ির কারিগরেরা বলছেন, এর ফলে ৪০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ। বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে বাংলাদেশকে দাঁড় করিয়ে দিতে যে শিল্পীরা শ্রম-ঘাম ঝরাচ্ছেন, তাঁদের জন্য নেই সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা। ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত জামদানিপল্লির ১০ হাজার শিল্পীর মাথায় হাত।

সম্প্রতি নোয়াপাড়া জামদানিপল্লি ঘুরে দেখা গেছে, জামদানিপল্লিতে আগের মতো খুটখাট শব্দ নেই। নেই কোলাহল। দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে জামদানি কারখানাগুলো। জামদানি বিক্রির হাটও বন্ধ। অথচ প্রতিবছর ঈদ এগিয়ে এলে নাওয়া-খাওয়া ভুলে কারিগরেরা কে কত শাড়ি তুলতে পারেন, তা-নিয়ে চলত প্রতিযোগিতা। এবারের চিত্র ঠিক উল্টো। দেখে মনে হবে যেন এক ভুতুড়ে নগরী। আবার তাঁতিরা শুয়ে-বসে অলস সময় পার করছেন। কেউ লুডু খেলে অথবা আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। তবে কোনো তাঁতি স্বল্প পরিসরে জামদানির কাজ করলেও বিক্রি করতে পারছেন না। তাঁত বুননের কাজ না থাকায় কয়েকজন তাঁতিকে কাঁচামালসহ রমজানের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়।

নারায়ণগঞ্জের নোয়াপাড়া জামদানিপল্লির দোকানের এই তালা কারিগরদের হাহাকার বাড়ায়। ছবি: লেখক
নারায়ণগঞ্জের নোয়াপাড়া জামদানিপল্লির দোকানের এই তালা কারিগরদের হাহাকার বাড়ায়। ছবি: লেখক

জামদানিশিল্পীরা বলেন, ঈদে দেশের বাজার ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, মিসর, সৌদি আরব, দুবাই, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশে জামদানি শাড়ি রপ্তানি হতো। করোনার কারণে এবার রপ্তানি বন্ধ। ফলে ৪০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ।


তাঁতিরা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে তাঁতিদের তেমন কোনো ব্যস্ততা নেই। কর্মহীন দিন কাটছে তাঁদের। তবে কয়েকজন শাড়ি তৈরি করলেও তা বিক্রি করতে পারছেন না। সংসার চালাতে গিয়ে চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন তাঁরা।


কথা হয় শিল্পী নুরুল হক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘করোনা আমাগো শেষ কইরা দিছে। এহন লুডু খেইলা সময় কাটাই। সংসার চালানোর মতো টাকা নাই। সরকার হগলতরে প্রণোদনা দিতাছে। অথচ জামদানিশিল্পীরা বাংলাদেশরে বিশ্বদরবারে তুইলা ধরে। জামদানিশিল্পীগো খবর নেয় না কেউ।’

শিল্পী ঝর্না বেগম, সাবেকুন, বিউটি আক্তার ও আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঘাম ঝরাইয়া একটা শাড়ি বানাই। এই শাড়ি সারা বিশ্বে চলে। কিন্তু আমাগো দাম নাই।’

মহাজন এরশাদ, ইসমাঈল, আনোয়ার, মজিবুর বলেন, ‘আগে ঈদ আসলে ভারত, সৌদি, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে জামদানির চাহিদা থাকত। লকডাউনের কারণে সব শেষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ৪০-৪৫ কোটি টাকার জামদানি বিদেশে যাইত।’

জামদানিপল্লি বিসিকের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের কারণে শতকরা ৯০ ভাগ তাঁতি কর্মহীন হয়ে কষ্টে দিন পার করছেন। তাঁদের প্রণোদনার দাবি জানাচ্ছি।