মায়ের যত শঙ্কা!

মা আমাকে বলল, সন্ধ্যার আগে ঘরে ফিরবি। পাঁচ বছরের ছোট বালক তখন মায়ের অনুগত হলেও খেলতে একটু বেশি পারলেই যেন আকাঙ্ক্ষা মিটবে মনের। মা ঘরে বসে যে চিন্তা করতেছে, সে ভ্রুক্ষেপ ছোট বালকটির নেই, ‘মায়ের কথা না শোনায় যেন বাধল বিপত্তি!’

সূর্য যখন পশ্চিমাকাশে অস্ত যাওয়ার সন্ধিক্ষণে, তখনই মায়ের ডাক পড়ল, মাইদুল সন্ধ্যা হয়ে গেছে, ঘরে আয়। কিন্তু আমি খেলা চালিয়ে গেলাম। ঠিক তখনই মায়ের শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিল। খেলতে খেলতে হঠাৎ পড়ে থাকা কাচের টুকরোয় পায়ের নিচটা কেটে গেল, রক্ত পড়া শুরু হলো অঝোর ধারায়। তখনি ব্যথায় কাতরে গগনবিদারি চিৎকার ‘মা’।

ততক্ষণে ঘর থেকে বেরিয়ে আমার কাছে মা, ব্যস্ত হয়ে গেল আমার কষ্ট লাগবের। আমার ব্যথা যেন তৎক্ষণাৎ টের পেয়ে যায় মা। কারণ, মা-ই যে আমার সবচেয়ে আপনজন।

সেই পাঁচ বছরের আমি এখন পড়ছি স্নাতক প্রথম বর্ষে। মায়ের ছেলেটি যে বড় হয়ে গেছে, তা মানতে নারাজ মা। তার কাছে সেই ছোট বালকই আছে তার ছেলে। তাই তো এখনো যত শঙ্কা ছেলেকে নিয়ে মায়ের।

হঠাৎ মা জানতে পারল, চীনের উহানে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস বাংলাদেশেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। মায়ের ছেলে যে তার কাছে নেই, রাজধানীতে আছে। আবার শঙ্কা শুরু হয়ে গেল মায়ের তার ছেলেকে নিয়ে। ফোনে কল দিয়েই ছেলেকে শুরু করল সাবধান করা, বাবা, মাস্ক কিনেছিস? বাসায় এসে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিস? তখনো বাংলাদেশে নভেল করোনার কোনো লক্ষণ না থাকায় আমি এর কোনোটাই করছি না। মাকে বুঝিয়ে বললাম ব্যাপারটা, কিন্তু মায়ের মন বুঝতে নারাজ। বলল, বাইরে বের হবি সাবধানে, মাস্ক কিনবি আর বাসায় এসে পরিচ্ছন্ন হবি। ছোট সময় মায়ের শঙ্কা উপেক্ষা করে খেলা চালিয়ে গেলেও, এখন মায়ের ছেলেটি বড় হয়েছে। মায়ের কথা না শোনার মাশুল ছোট সময়ে দিতে হয়েছে, তাই মা বলার পরপরই সচেতন হতে উঠেপড়ে লাগলাম।

ছেলেকে সচেতন করেও ক্ষান্ত হয়নি মায়ের মন। ১৬ মার্চ যখন শুনেছে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাবে, সঙ্গে সঙ্গেই মায়ের কল, বাবা ঢাকায় থাকার দরকার নেই, আজই সন্ধ্যায় লঞ্চে ওঠ। অনেক বলার পরও, ওই যে মায়ের শঙ্কা। আর থাকতে পারলাম না। পরের দিন বিকেলে রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশে। বাড়িতে আসার পরও শঙ্কা কাটেনি মায়ের। এত দিন পর গ্রামে এসেছি, গ্রামের মানুষ, স্কুলের বন্ধু, এদের সঙ্গে দেখা করা, আড্ডা না দিয়ে কীভাবে পারি। কিন্তু মা ঘর থেকে বের হতে দেবে না কোনোভাবেই। হোম কোয়ারেন্টিনে আছি মায়ের খুশির জন্য।

সেই ছোটবেলা থেকেই ‘মা’–এর শঙ্কা তার ছেলেকে নিয়ে। স্নাতক জীবনে পা রাখলেও এতটুকু শঙ্কা কমেনি মায়ের তার ছেলেকে নিয়ে! কোনোদিন কমবেও না।

তবে মাকে নিয়ে এখন আমার চিন্তা হয় আরও বেশি। মায়ের বয়স হয়েছে, আমি দূরে থাকি। মায়ের অসুস্থতার খবর শুনলে মা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় ঘুমাতে পারি না।

বিশ্ব মা দিবস আজ। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মায়েদের সম্মানের মাধ্যমে পালন করা হয় মা দিবস। ভালো থাকুক সব মা, এ কামনা আজকের দিনে।
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ