মা এক শব্দের এক উপন্যাস

মায়েদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন হয় না কি? বা বিশেষ একটা দিনই শুধু মায়েদের জন্য? এ নিয়ে বিশেষ তর্ক-বিতর্ক রয়েছে।

বিশেষ করে বাঙালিদের কাছে প্রতিটি দিনই মা দিবস। তবে বিশ্ব মা দিবসে মায়ের জন্য নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়ে থাকে। ব্যস্ততার জন্য যেটা অন্য কোনো দিনে হয়ে ওঠে না। মা দিবস নিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কি ভাবনা? তাদের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছি।
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ৭ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আয়শা আফরিন চৈতী বলেন, আম্মু সব সময়ই অনেক আলাদা। আমার দেখা বাকি মায়েদের থেকে অনেক বেশিই আলাদা। আম্মু খুব বন্ধুভাবাপন্ন। পেশায় শিক্ষক হওয়ায় খুব ছোট থেকেই বাস্তবতা শিখিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি মিস করি আম্মুর ল্যাব ক্লাস। আর মিস করি এটা সেটা বানিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাসকে।

আয়শা আফরিন বলেন, ছোট-বড় সব ভুল করে আম্মুকেই বলতাম। তাই বকা, মার খেয়েছি প্রচুর। জীবন অনেকবার হোচট খেয়েও উঠে দাড়াতে শিখেছি আম্মুর কারণেই। আম্মুকে নিয়ে স্বপ্ন কি সেটা বলার আগে বলতে হয়, আমাকে নিয়ে মায়ের অনেক স্বপ্ন। আম্মুই শিখিয়েছেন একটা মেয়ের নিজের স্বপ্ন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আম্মুকে কখনোই ওভাবে বলা হয় না যে কতটা মিস করি আম্মুকে। মা দিবসে এটাই বলতে চাই, আম্মু তোমাকে খুব বেশি মিস করি। তোমার চোখে বেস্ট মেয়ে হতে চাই, ঠিক তোমার মতো পারফেক্ট মা হতে চাই।

ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৫ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আবু মুহাম্মদ রুইয়াম বলেন, 'মা' একটা ভালোবাসার নাম। পৃথিবীর সবাই তোমাকে ভালোবাসবে, কেউবা ভালোবাসার অভিনয় করবে। তাদের প্রায় প্রত্যেকের ভালোবাসার স্বার্থ, উদ্দেশ্য রয়েছে কিন্তু যে তোমাকে কোনো স্বার্থ, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন ছাড়াই ভালোবাসবে, সে ভালোবাসার নাম হলো 'মা'।

আবু মুহাম্মদ রুইয়াম আরও বলেন, দুনিয়াতে সব কিছুই বদলাতে পারে কিন্তু মায়ের ভালোবাসা কখনো বদলাবে না। পৃথিবীর যেখানেই যাও না কেন, মায়ের কোলে যে শান্তি, তা আর কোথাও খুজে পাবে না। তোমার মাথায় শত চিন্তা হোক, একবার মায়ের কোলে মাথা রাখ, দেখবে সব চিন্তা দূর হয়ে যাবে। বাবার শাসন আর আমার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাওয়া, নিজের ভাগ না খেয়ে আমাকে খাওয়ানো, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বাবার আড়ালে পকেটে টাকা গুজে দেওয়া, অসুস্থ হলে সারারাত ছটফট করা তোমার ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না মা। মায়ের কথা বলে আসলে শেষ করা সম্ভব না। পৃথিবীর সকল মায়েদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে 'মা' দিবসের শুভেচ্ছা।

ফিজিওথেরাপি বিভাগের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সানজিদা লিজা বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই মাকে বড্ড মনে পড়ছে। লকডাউনে আমার গ্রামে ফেরা হয়নি। দু'মাস হলো মায়ের চেহারা দেখি না। আল্লাহ আমাদের এই মহামারী থেকে রক্ষা করুন। রক্ষা করুন পৃথিবীর সকল মাকে, বেঁচে থাকুক পৃথিবীর সকল মা।

ফার্মেসী বিভাগের ৫ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. আখলাকুল ইসলাম বলেন, মাকে আমার জাদুকর মনে হয়। আবার আয়নার মতোও লাগে। যার মাঝে আমি আমার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। শত না বলা কথাগুলো কী করে যে পড়ে ফেলেন তিনি বলা মুশকিল। এই দুনিয়ার বুকে এক টুকরো জান্নাতি সুখ আমার মা। মা সবকিছুই গুছিয়ে করতে ভালোবাসেন। আমাদেরও সেভাবেই গড়ে তুলেছেন। মা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

মো. আখলাকুল ইসলাম বলেন, যখন খুব কষ্টে থাকি, ছুটে যাই মা'র কাছে। মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকি। মনে হয় পৃথিবীর সব শান্তি যেন মা'র বুকেই লুকোনো। মায়াবতী মা আমার! মা'র কাছে কিছুই লুকানোর নেই আমার। মুখ দেখেই সব বুঝে ফেলেন তিনি। মাঝে মাঝে ভাবি, আমার মামনি বুঝি মায়ের চেয়ে বন্ধুই বেশি! আমার আর মা'র এমন সহজ সম্পর্ক দেখে অনেক বন্ধুই অবাক হয়। মা'র প্রতিটি শব্দ, বাক্য আমাকে সাহস যোগায়। সহজ কথায়, আমার কাছে অনুপ্রেরণার আরেক নাম 'মা'।

একই বিভাগের ৪র্থ সেমিস্টারে শিক্ষার্থী শাহনেওয়াজ আরিফ বলেন, আসলে মাকে ভালোবাসতে বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি দিনই মাকে ভালোবাসা যায়। পৃথিবীর সকল আবদার যার কাছে করতে পারি তিনি মা। মা শব্দটি পৃথিবীর কোনো বিশ্লেষণই বিশেষায়িত করা যাবে না। তবুও মাকে আমরা না বুঝে অনেক কষ্ট দিয়ে থাকি। কিন্তু সামনে যেয়ে কখনো বলা হয় না, মা আমি তোমাকে কত ভালোবাসি!

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী লিজা শেখ বলেন, মা আমার কাছে মরুভূমিতে এক বিন্দু পানির মতন স্বর্গীয় সুখ। মা আমার হাসি, কান্না, সুখ-দুঃখের সাথী। মা আমার ভালবাসা। মা আমার জীবন। মা মানে এক পশলা বৃষ্টি। মা মানেই ছায়াতরু। মা শুধুই মা-ই তার কোনো তুলনা হয় না।

লিজা শেখ আরও বলেন, 'মা' সেই মহান চরিত্র যিনি কখনো ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হন না। মা সন্তানের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেন তা অতুলনীয়। মা সন্তানের মুখে হাসি ফুটানোর নিমিত্তে সব করতে পারেন।

আইন বিভাগের ৭ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. সামছু উদ্দিন শাওন বলেন, এই করোনা মহামারীতে মা থেকে অনেক দূরে আছি। মায়ের কথা প্রতিদিন মনে পড়ছে। আমার পৃথিবীর অনেকখানি জায়গা জুড়ে আছে আমার মমতাময়ী মা। খুব অসুস্থ হয়ে ছিলাম যখন আমার ৪ বয়স। ডাক্তার বলেছিল বাচ্চাকে বাসায় নিয়ে অপেক্ষা করুন আর বেশি দিন বাঁচবে না। কিন্তু হাল ছাড়লো না মা, আমাকে নিয়ে এক হাসপাতালে থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটেছে। আল্লাহ রহমতে এবং আমার মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমি সুস্থ হয়ে উঠি।

মো. সামছু উদ্দিন আরও বলেন, আমাকে পৃথিবীর আলো দেখানো থেকে শুরু করে আমার জীবনের এখনো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে আমার মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। পড়াশুনা শেষ করে মায়ের পাশে থেকে মায়ের সেবা যত্ন করে বাঁকি জীবন কাটাতে চাই। হতাশাগ্রস্থ কন্ঠে তিনি বলেন, খুব বেশি দুঃখ হয় যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা সংবাদপত্রে দেখি মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে তার ছেলে-মেয়েরা। কেউ বা মাকে পাঠিয়ে দিয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। তাই মা দিবসে সকলের প্রতি অনুরোধ মাকে শ্রদ্ধা করি। মাকে ভালোবাসি। যেভাবেই থাকি না কেন, মাকে পাশে রাখি। প্রতিটি দিনই হোক মাকে ভালোবাসার দিন।

মেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী তন্ময় নাথ বলেন, 'মা' এক শব্দের উপন্যাস। আমার পৃথিবীর পথ, আমার নাড়ী। আজকের মা দিবসে আমার মায়ের মাধ্যমে বিশ্বের সকল মা'দের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, ভক্তি, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। সকল মা'ই ভালো থাকুক। শুভ মা দিবস।

*লেখক শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়