পান্থপথে রান্না করে মানুষকে খাওয়াচ্ছেন মারুফ

সামাজিক দূরত্ব মেনে এভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে বিতরণ করা হয় খাবার। ছবি: ফেসবুক
সামাজিক দূরত্ব মেনে এভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে বিতরণ করা হয় খাবার। ছবি: ফেসবুক

আজ ৪৩ দিন ধরে নিজে রান্না করে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষকে খাওয়াচ্ছেন জামিউল ইসলাম মারুফ। গত ৩০ মার্চ থেকে আজ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষের রাতের খাবারের ও ইফতারের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ২৫০টি অসহায় মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্র পরিবারকে নগদ অর্থ (বিকাশের মাধ্যমে) ও চাল, ডাল, ডিম, পেঁয়াজ, তেল, আলুসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করেছেন।

এখন প্রতিদিন রাজধানীর পান্থপথে এই ইফতার দেওয়া হচ্ছে। আগে বিভিন্ন জায়গায় খাবার বিতরণ করা হতো। ইফতারে দেওয়া হচ্ছে খেজুর, আপেল, সবজি খিচুড়ি আর ডিম। এই চরম অসহায় মানুষদের নিজে রান্না করে প্রতিদিন খাওয়াচ্ছেন মারুফ। খাবার বিতরণে মাঝেমধ্যে পুলিশের সহায়তাও নেওয়া হয়।

শুরুটা ২৬ মার্চে, নিজের বানানো হ্যান্ড স্যানিটাইজার শ্রমজীবী ও হতদরিদ্র মানুষদের হাতে তুলে দিয়ে। এরপর খাদ্যসহায়তা শুরু করেন তিনি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এখন চলছে সাধারণ ছুটি। এই দীর্ঘ ছুটির ফলে রাজধানীর সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্ন আয়ের মানুষ একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েছেন। হতদরিদ্র মানুষগুলোর জন্য আয়োজন চলে প্রতিদিন।

চাল, ডাল, ডিম, পিঁয়াজ, তেল, আলুসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয় মানুষের ঘরে। ছবি: ফেসবুক
চাল, ডাল, ডিম, পিঁয়াজ, তেল, আলুসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয় মানুষের ঘরে। ছবি: ফেসবুক

জামিউল ইসলাম বলেন, ৩০ মার্চ দুপুরে বাজার করে রাতে নিজেই রান্না করে ৪০ জন মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন। শুরুতে দিয়েছিলেন ভাত, সবজি, ডিম। রাতে খাবার বিতরণ করতে গিয়ে দেখেন প্রায় ১০০ জন মানুষ খাবারের লাইনে দাঁড়িয়েছেন। শুরুতে ৪০ জনের ব্যবস্থা থাকলেও দিন দিন খাবারের পরিমাণ বাড়তে থাকে। বর্তমানে ৩০০ প্যাকেট খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। খাবার নেওয়ার তালিকাটাও দিন দিন বড় হচ্ছে।

খিচুড়ি বিতরণে মাঝেমধ্যেই উপস্থিত থাকেন পুলিশ সদস্যরা। ছবি: ফেসবুক
খিচুড়ি বিতরণে মাঝেমধ্যেই উপস্থিত থাকেন পুলিশ সদস্যরা। ছবি: ফেসবুক

নিজেই রান্না, প্যাকেট এবং বিতরণ করেন। এ কাজে সাহায্য করছেন জামিউল ইসলামের সহধর্মিণী ফারিয়া ফারিয়েল। এখন দুজন শ্রমিক নিয়েছেন। তবে বিতরণের কাজটা নিজেই করেন। অসহায় মানুষের পাশে খাবার নিয়ে দাঁড়ানোর কাজে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া সমাজের অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার আছে, যাদের সামাজিক মান–সম্মানের বিষয়টি চিন্তা করে লাইনে দাঁড়িয়ে সাহায্য নেওয়া সম্ভব হয় না। এমন ২৫০টি অসহায় মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্র পরিবারকে নগদ অর্থ (বিকাশের মাধ্যমে), চাল, ডাল, ডিম, পেঁয়াজ, তেল, আলুসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন জামিউল ইসলাম। রাজধানীর গ্রিন রোড, পান্থপথ, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, নিউমার্কেট, আজিমপুর, ধানমন্ডি এলাকার মানুষকে (পরিচয় গোপন রেখে) প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কথা জানান তিনি।

ইফতারে সামর্থ্য অনুযায়ী খাবার দেওয়া হয় হতদরিদ্র ব্যক্তিদের। ছবি: ফেসবুক
ইফতারে সামর্থ্য অনুযায়ী খাবার দেওয়া হয় হতদরিদ্র ব্যক্তিদের। ছবি: ফেসবুক

সারা দিন রোজা রাখার পর অন্তত ইফতারিতে সামান্য কিছু খাবার তাঁদের মুখে তুলে দিতে চান জামিউল ইসলাম। তিনি বলেন, এই অসহায় মানুষগুলোর এক বেলা খাওয়ানোর জন্য অনেকেই সহায়তা করেছেন। কেউ সহায়তা করতে চাইলে facebook.com/zamiulislammaruf অথবা ০১৭১৬৫৬৮২৮৩ (বিকাশ-পারসোনাল) নম্বরে কল দিতে পারেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি

সামাজিক দূরত্ব মেনে এভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে বিতরণ করা হয় খাবার। ছবি: ফেসবুক
সামাজিক দূরত্ব মেনে এভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে বিতরণ করা হয় খাবার। ছবি: ফেসবুক