পূর্ণভবা নদী এখন শুধুই মরা খাল

নদীতে সেতুর কাজ চলছে। ছবি: লেখক
নদীতে সেতুর কাজ চলছে। ছবি: লেখক

দিনাজপুরে কাহারোল উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একসময়ের খরস্রোতা পূর্ণভবা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। আজ থেকে ৩০-৩৫ বছর আগেও নদীটি ছিল এ অঞ্চলের প্রধান যাতায়াতের মাধ্যম। পলি জমে নাব্যতাসংকটের কারণে বছরের অধিকাংশ সময় নদীটি থাকে ধু ধু বালুচর।

খনন না করায় নদীটি এখন বালুচরে রূপ নিয়েছে। এতে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে কৃষকেরা। নদীর পানি সেচকাজে ব্যবহার করতে না পারায় ফসল উৎপাদনে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে চাষিদের।

দিনাজপুরে নদীর সংখ্যা প্রায় ৩০টি, পূর্ণভবা এগুলোর অন্যতম। উন্নয়নের নামে বিভিন্ন সময়ে বলি হয়েছে নদীটি। নদীর দুপাড়ে অবাধে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর নির্মাণ করেছে মানুষ। অথচ একসময় কৃষি কাজে সেচের জন্য ওই নদীর পানি ব্যবহার করতেন কৃষকেরা। নদীতে চলছে ধান-ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষও।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, একটা সময় ছিল যখন নদী অনেক বড় ছিল, এখন তার চরিত্র বদলে গেছে। নদীর প্রাণ হচ্ছে বিলের পানি কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় কালভার্ট, সেতুর মুখ বন্ধের কারণে নদীর পানি সঠিক প্রবাহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কাহারোল সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী নয়ন দেব বলেন, প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায়ীরা তাঁদের যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলছেন। এ ছাড়াও স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের দোকানের উচ্ছিষ্টসহ বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নদীতে ফেলে নদীকে দূষিত করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নদীতে পানির প্রবাহ না থাকায় ময়লা জমে পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, যার ফলে উপজেলার একমাত্র বাজার সংযোগকারী সেতু দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াতকারী দশ হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রংপুর বিভাগের অন্যতম বড় হাচ কাহারোলের গবাদি পশুর হাট। অন্যান্য দিনের তুলনায় হাটের দিন লোকসমাগম ও গাড়ির সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট সৃষ্টির কারণে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।

নব্বই দশকে নির্মিত হওয়া সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ, যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। যদিও ইতিমধ্যে নতুন ঢালাই সেতুর ভিত্তি কাজ শুরু হয়েছে, তবে করোনার কারণে থমকে গেছে কাজের গতি।

এ দিকে প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে জীববৈচিত্র্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। এই প্রভাব কেবল পৃথক প্রজাতি এবং জনসংখ্যার জন্যই যে ক্ষতিকর তা নয়, বরং প্রাকৃতিক অন্যান্য বিষয়ও প্রভাবিত হচ্ছে। বর্তমান সময়ে এলাকাটিতে পানিদূষণের কারণে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় প্রায়ই।

*লেখক: শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়