ধন্যবাদ সুন্দরবন

সুন্দরবন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
সুন্দরবন। প্রথম আলো ফাইল ছবি

আইলা, সিডর, ফণি, বুলবুল, আম্পান-আর কত শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করবে? প্রিয় বাংলাদেশকে রক্ষা করতে আর কত চিতিয়ে বুক বাড়িয়ে দেবে? সুন্দরবন তো আমাদের দেখছে, আমরা কী সুন্দরবনকে দেখছি! প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, ফণি ও বুলবুল ক্ষত কাটতে না কাটতেই আবারও মায়ের আঁচলের মতো বুক পেতে উপকূলীয় এলাকার মানুষ ও সম্পদ রক্ষা করেছে সুন্দরবন।

বাঘের মতো তর্জন-গর্জন করে আসা ঘূর্ণিঝড় আম্পান প্রথমে ভারতের দীঘা ও সুন্দরবনের আঘাত হানে। তাণ্ডব চালায় সাতক্ষীরায়। পটুয়াখালী, বরগুনাতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্ত ও উপকূলবর্তী এলাকার বহু ঘরবাড়ি ভেসে গেছে।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ ২৬০ কিমি/ঘণ্টা বেগে সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল, যার ফলে ৩ হাজার ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয় এবং দুর্যোগ উপদ্রুত এলাকার প্রচুর ক্ষতিসাধন হয়। তবে সুন্দরবন না থাকলে এই ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ হতো। একইভাবে, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ সুন্দরবনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করেছিল। ফণিকেও ঠেকিয়ে দেয় ফাইটার সুন্দরবন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’কে বুক দিয়ে ঠেকিয়ে দুর্বল করে দেয় সুন্দরবন।
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে এর আগেও ঢাল হিসেবে কাজ করেছে সুন্দরবন বিশেষ করে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডব থেকে এই বন উপকূলকে রক্ষা করেছে। গতকাল আম্পান থেকেও রক্ষা করল। অন্তত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বের করতে আরও কয়েক দিন লাগবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বনাঞ্চলের ওপর দিয়ে দুই ধরনের ধাক্কা যায়। প্রথমে ক্ষিপ্র গতির বাতাস এরপর জলোচ্ছ্বাস সুন্দরবনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের বাতাস বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপেক্ষাকৃত কম গতি নিয়ে স্থলে পৌঁছায়। বনে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ যেখানে ঘণ্টায় ১০০–এর বেশি কিলোমিটার থাকলে সেটা বন পার হয়ে স্থলভাগে যেতে যেতে শক্তি হারিয়ে দমকা বাতাসে রূপ নেয় বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। আবার জলোচ্ছ্বাস স্থলভাগে পৌঁছানোর আগে সুন্দরবনে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক কমে যায়। এভাবেই সুন্দরবন প্রতি ঝড়ে প্রিয় বাংলাদেশকে রক্ষা করে।

একসময় বাংলাদেশ পরিচিত ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে। বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমছে। সুন্দরবন বুক চিতিয়ে যুদ্ধ না করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতো। এতে প্রিয় দেশ পিছিয়ে পড়ত। কিন্তু সুন্দরবন রক্ষায় আমরা কী কী করছি?

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক