ঢাবির অসহায় রোভারদের পাশে ডুপসেফ-ঢাবি রোভার গ্রুপ

ভবিষ্যৎ বড়ই অনিশ্চিত। আজ যে গরিব, কাল সে ধনী। আবার একইভাবে আজ যে ধনী, কাল সে গরিব। সত্যি বলতে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আগে থেকে কেউ নিশ্চিত কোনো কিছু বলতে পারেন না, যার বড় উদাহরণ বর্তমান করোনা পরিস্থিতি।

আজ থেকে দুই-তিন মাস আগে যে করোনার কথা মানুষ জানতই না, সেই করোনার কবলে পড়ে আজ গোটা পৃথিবী একঘরে হয়ে পড়েছে। করোনার কারণে কোনো কিছুই আর আগের মতো নেই। কয়েক দিনের ব্যবধানে পাল্টে গেছে গোটা পৃথিবীর চিত্র।

করোনা সংক্রমণের কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও তালাবদ্ধ। ফলে কলকারখানা, অফিস-আদালতের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গেছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর ব্যত্যয় ঘটেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও। বর্তমান করোনাকালে প্রায় সবাই ঘরবন্দী। অধিকাংশ মানুষেরই আয়-রোজগার প্রায় বন্ধের পথে। এর মধ্যে যেসব শিক্ষার্থী টিউশন বা পার্টটাইম জব করে জীবন নির্বাহ করতেন, তাঁদের দুঃখ-কষ্টের যেন শেষ নেই। তাঁরা নিজেদের খরচ ও পরিবার নিয়ে বেশ সংকটে পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপেও বর্তমানে এমন অনেক সদস্য আছেন, যাঁরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল কিন্তু মুখ ফুটে নিজের দুর্দশার কথা বলতে পারছেন না। করোনা পরিস্থিতিতে এমন অসহায় রোভারদের দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ও সাবেক সিনিয়র রোভারমেটদের সংগঠন ডুপসেফ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ যৌথভাবে অসচ্ছল রোভারদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঈদের আগেই ঈদ উপহার হিসেবে অসহায় রোভারদের ২ হাজার টাকা করে পাঠিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনটির সূত্রমতে, করোনা পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

এ উদ্যোগের বিষয়ে ডুপসেফের কার্যনির্বাহী সদস্য পিআরএস ও গ্রুপের সাবেক সিনিয়র রোভারমেট মোহাম্মদ ইয়াছিনুর রহমান রাকিব বলেন, ডুপসেফ প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের প্রত্যেক সদস্যদের পাশে দাঁড়ানোকে নৈতিক দায়িত্ব মনে করে। আমরা সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এই উদ্যোগটি হাতে নিয়েছি এবং সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের এই মানবিক প্রচেষ্টা সব সময় অব্যাহত থাকবে।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান রোভার স্কাউট লিডার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমি প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। চলমান সংকটে তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমাদের এই উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সাবেক রোভারবৃন্দ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

সহায়তা পাওয়ার পর রোভারদের অনুভূতি কেমন, তা জানতে ঈদ উপহার পাওয়া একজন রোভার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বর্তমান সংকটে এমন সহায়তা পাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়৷ এই উপহার দিয়ে আমার পরিবার ১৫ দিন নিশ্চিন্তে চলতে পারবে। আমি ডুপসেফ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই গ্রুপটি দেশের বিভিন্ন দুর্যোগের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়