আমরা আবার ফিরে আসব

করোনার জ্বালা সামলাতে পারছিলাম না। এরই মাঝে চলে আসলো আম্পান। একইসঙ্গে আঘাত করল দুইটি দুর্যোগ। পঙ্গপালও আসার কথাও শোনা যাচ্ছে। নানান বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছি আমরা। করোনা আমাদের সাধারণ জীবনযাপন কেড়ে নিয়েছে। আমরা আমাদের সাধারণ কাজকর্ম বাদ দিয়ে ঘরবন্দী হয়ে আছি। আমরা ঘরে বসে থাকা মানুষদের সবসময় দুয়ো দিতাম। কিন্তু এখন সেই ঘরে বসে থাকাই হচ্ছে বিরাট বড় কাজ। একসময় যারা ফেসবুকে ঘরে বসে বিভিন্ন শ্লোগান দিতো তাদের আমরা অকর্মা বলতাম। এখন ঘরে বসে থাকাই সবচেয়ে বড় কাজ।

করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে অনেকের নাম। এই করোনার আতঙ্কের মাঝেই হয়ে গেল দেশের সুপার সাইক্লোন আম্পান। আম্পান আমাদের যা ক্ষতি করে গেছে তা পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লেগে যাবে। ভয়ংকর অবস্থা হয়েছে আমাদের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। ঘরবাড়ি হারা হয়েছে মানুষ, বিদ্যুৎ সংযোগের বাহিরে চলে গেছে অনেকে। আম্পানে ঝড়ের পাশাপাশি হয়েছে জ্বলোচ্ছাস, এটা হয়েছে ক্ষতির একটা বড় বিষয়। অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানির মধ্যে ঈদের নামাজ পড়ার দৃশ্য হৃদয় কেড়েছে সবার।
এদিকে ভারতে আক্রমণ শুরু করে দিয়েছে পঙ্গপাল। অর্থাৎ আমাদেরও খুব কাছাকাছি চলে এসেছে এই পঙ্গপাল। আমরা অনেক দিন ধরেই কৃষিখাতের দিকে নজর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের উৎরে যাওয়ার সবচেয়ে উত্তম পথ হতে পারে এই কৃষি। কিন্তু আম্পানের ক্ষতির পরে পঙ্গপাল আসার সম্ভাবনা আমাদের ভোগাতে পারে। কৃষিখাত ধ্বংস হয়ে গেলে দেশের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যাবে। তাই অবশ্যই আমাদের কৃষিখাতে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই আসলে খারাপ। অনেক খারাপের দিকেই যাচ্ছে অনেক খাত। সরকারও এই মুহুর্তে অনেক ভালো ভূমিকা পালন করেছে। সরকারী কোষাগার থেকে অনেক অর্থ ইতিমধ্যেই খরচ হয়েছে। এভাবে যদি সাহায্য দিতে হয় তাহলে সামনের বাজেট করতে সরকারের বেগ পেতে হবে। কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে মানুষকে সাহায্য না করেও তো উপায় নেই। দেশের সার্বিক যে পরিস্থিতি তাতে লকডাউনও বেশিদিন রাখা সম্ভব হচ্ছে না, যদিও করোনা পরিস্থিতি দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের প্রথম দিকের বেখেয়ালি মনোভাব, লকডাউন দিব কী দিব না! এমন দ্বিধাদ্বন্দ অনেক সমস্যায় ফেলেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অনেক অভাবও দেখা গেছে। প্রত্যেকটা ইউনিট যুগপৎ হয়ে কাজ করতে পারলে যা অনেকটাই দুর করা যেত। স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে প্রশাসন, পরিবহণ থেকে শুরু করে সকল বিভাগের সমন্বয় প্রয়োজন ছিল।
সকল কিছুর মাঝেও আমরা কিছু আশার বাণী দেখি। আমরা জানি বাঙালি জাতি লড়াই করতে জানে। লড়াই আমাদের রক্তে রয়েছে। আমরা এর চেয়েও বড় বড় বিপদ সামলে এসেছি। আমরা ভাষার জন্য লড়াই করেছি, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা এবারের যুদ্ধেও জয়লাভ করব। ত্রাণ কার্যক্রমে কিছু অসৎ মানুষের কর্মকাণ্ড ছাড়া সার্বিকভাবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের ভূমিকা আসলেই অনস্বীকার্য।
এই যুদ্ধের একদম যারা অগ্রসৈনিক তাদের কথা না বললেই নয়। ডাক্তার, প্রশাসন, কৃষক, সাংবাদিকসহ অনেকেই জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। এদের কেউই বলেননি যে আমরা কাজ করতে পারব না। তাদের অনেক সুবিধার অভাব রয়েছে কিন্তু পিছপা হয় নি কেউই। ডাক্তার ও পুলিশরা অনেক আক্রান্ত হয়েছেন নিজেরাই। তাদের মধ্যে মারাও গেছেন অনেকে। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর কথা না বললেই নয়। পুলিশের হাজারটা খারাপ কাজের গল্প আমরা বলে বেড়াই। খারাপটা যদি বলতে পারি তাহলে ভালোটাও অবশ্যই বলা উচিত। এবারের যুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা আসলেও দারুণ। শুধু পুলিশ নয়, প্রশাসনের সবাই অনেক ভালো ভূমিকা রেখেছে।
আমাদের ডাক্তারদের পিপিই থেকে শুরু করে অনেক কিছুর অভাব ছিল এবং আছেও। সেগুলো এখন বলে লাভ নেই। কিন্তু তারাও নিরলস লড়াই করে যাচ্ছেন।
কৃষকেরা তো আজীবন আমাদেরকে দিয়েই যাচ্ছেন। তারা তো নিজেরা কিছুই পান না। সবসময় আমরা কৃষকদের ঠকিয়ে যাই। কম মূল্য দিয়ে হোক আর যেভাবেই হোক আমরা তাদের ঠকিয়েই যাই। কিন্তু তারা তো চাষাবাদ বন্ধ করেন না। জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে কোনোদিন তারা কৃষককে ঠকাবে না। কৃষক যদি ফসল উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তাহলে দেশ বিপদে পড়ে যাবে।
আমরা জানি আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে কিন্তু এটাও জানি আমাদের বুকে সাহস আছে, বিশ্বাস আছে, ভালোবাসা আছে। আমরা এই বিপদ থেকে উৎরে ইনশা আল্লাহ্‌ যাবই। আমরা আবার প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিব, অনেক আনন্দ করে বাঁচব আবার!