সীমিত আকারে সব খোলা: ভয়ংকর উন্মুক্ততা

সেদিন টেলিভিশনে ঈদ আয়োজনের নাটক দেখছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়ল নিচের ব্রেকিং নিউজের দিকে। সীমিত আকারে সবকিছু খোলা। মাথার ওপর যেন বাইরের ঝুমবৃষ্টির বাজ পড়ল। কেন? হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত?

আমরা সবাই জানি বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে। কতটা ভয়াবহ হয়ে গেছে, তা–ও জানা। যেখানে অন্যান্য দেশে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা কমে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে হুড়হুড় করে বাড়ছে। আমরা এখনো বিশ্বের অন্য দেশের মতো আক্রান্ত ও মৃত্যুসংখ্যা কমিয়ে আনতে পারিনি।

আমরা বোধ হয় এখনো এই সিদ্ধান্তের ভয়াবহতা বুঝতে পারছি না। করোনাভাইরাস কোনো জোক না। যাঁরা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা জানেন কী রকম কষ্ট তাঁকে পেতে হয়েছে। আর যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁরা তো সম্পূর্ণ একা বিদায় নিচ্ছেন। কোনো প্রিয়জন কাছে যাচ্ছে না। হাজারো পরিবার অচল হয়ে যাচ্ছে।

আমার নিজের আত্মীয় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। আমরা দেখতে পাচ্ছি তাদের অবস্থাটা কতটা করুণ। বাড়ির উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটাই তো আক্রান্ত। এখন বাকিদেরও আক্রান্ত হওয়ার লক্ষ্মণ প্রকাশ পাচ্ছে।

অবশ্যই আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবে। আমি আমার পরিবারসহ দুই মাসের বেশি সময় ধরে বাসায় অবস্থান করছি। আমরা নিজেরাও বিরক্ত হয়ে গেছি। কিন্তু কিছুই তো করার নেই। সব খুলে দেওয়ার আগে কি কঠোর লকডাউন দেওয়া উচিত ছিল না? অবশ্য আমাকে এটাও স্বীকার করতে হয় যে আমার দেশের মানুষ কখনোই আইন মানে না। লকডাউন দিলেও হয়তো মানুষ অকারণেই বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে, যেভাবে শুরু থেকেই বের হচ্ছিল, সেভাবেই বের হবে।

আমার প্রশ্ন তাদের কাছে, যাঁরা কারণ ছাড়া বের হচ্ছেন, যাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, আপনারা কি আপনাদের নিজের স্বার্থের কারণে আমাদের চিকিৎসক, পুলিশ ভাইবোনদের জীবনের ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন না? এখন অনেকেই বলে রাস্তায় পুলিশ নেই, কেন থাকবে? কার জন্য থাকবে? আপনারা কি পুলিশকে মেনে চলছেন? এই মানুষদের জন্য হাজারো পুলিশ আক্রান্ত হচ্ছেন। একবার ভেবে দেখেছেন আমাদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য কি ভবিষ্যতে কোনো পুলিশ থাকবে? অসুখ হলে চিকিৎসা দেওয়ার মতো চিকিৎসক থাকবেন? খবর দেওয়ার জন্য সাংবাদিক থাকবেন? তাঁদেরও তো জীবন আছে। কেন এসব বিবেকহীন মানুষের জন্য তাঁরা (পুলিশ-চিকিৎসকসহ অন্যরা) মারা যাবেন...?