দেশ থেকে কি করোনা চলে গেছে

যেভাবে ছুটি বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে, যানবাহন চালু করা হচ্ছে তাতে তো মনে হচ্ছে দেশ থেকে করোনা চলে গেছে।

করোনা নিয়ে নানা ব্যবস্থাপনায় সরকারের প্রশংসা না করলেই নয়। কিন্তু ছুটি দেওয়া, লকডাউন, দোকানপাট খোলা এই ধরণের সিদ্ধান্ত বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে মানুষের কাছে।

বারবার তিনবার। খুবই জনপ্রিয় একটি কথা। তিনবার পর্যন্ত একটা জিনিস সহ্য করা যায়। কিন্তু আমরা তো অগণিত অসংখ্য ভুল করে যাচ্ছি। এত বড় একটা সমস্যা কিন্তু কোনোভাবেই চতুর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। ন্যাড়া বেলতলায় নাকি একবারই যায়। আমরা তো বারবার যাচ্ছি।

করোনা চীনে শুরু হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। আমাদের দেশে এসেছে এ বছরের মার্চে। কিন্তু এই তিন মাসে আমাদের কি কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছিল? আমরা কি এর মাঝে সামান্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারতাম না? আমরা টেস্ট কিট থেকে শুরু, পিপিই বা অন্যান্য সামগ্রীর আগেই কিছু এনে রাখতে পারতাম না? পোশাক কারখানাগুলো তো নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে হলেও বানাতে পারতো মাস্ক কিংবা পিপিই। সামান্য ব্যবসাটুকুও আমরা বুঝলাম না। প্রথম অনেকগুলো দিন আমরা কিটের অভাবে টেস্টই করতে পারিনি। আর এখন টেস্ট করা শুরু হয়েছে আর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তার মানে কি দাঁড়াল?

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইতালি বা অন্য দেশ থেকে যারা আসলেনে তাদের কি আমরা সঠিকভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারতাম না? তা না করে আমরা তাদের সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ দিয়েছি। প্রথম যেদিন করোনা শনাক্তের কথা বলা হলো ওইদিনই উচিত ছিল যে লকডাউন করে দেওয়া। ছড়িয়ে পড়া রোধ করা উচিত ছিল তখনই। এমনকি আমরা স্কুল কলেজ বন্ধ করতে রাজি হচ্ছিলাম না। সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার পর বন্ধ হলো। আচ্ছা, জনগণ আলোচনা করার পর যদি বন্ধ হবে তাহলে যারা দায়িত্বে আছে তারা রাষ্ট্রের কি কাজ করছেন? তাদের মাথায় এগুলো আগে থেকে কেন আসে না?

এরপর বহুদিন মানুষ অফিসে গেছে, গণপরিবহনে চড়েছে, যা ইচ্ছা তাই করেছে। আমরা প্রায় দুই সপ্তাহ পর গিয়ে করলাম অফিস বন্ধ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখানেও থেকে গেল বিশাল একটা ফারাক। গাড়ি ঘোড়া তো সব চলছে। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে গেল। এরপর গাড়ি ঘোড়া বন্ধ করা হলো।

এর পরের ভুলটা পোশাকারখানা শ্রমিকদের নিয়ে ফুটবলের মতো খেলা হলো। কেউ বলছে বন্ধ রাখার জন্য, কেউ খুলতে। যারা যারা এ দায়িত্বে আছেন একেক জনের একেক কথা বললেন। কোনো সামঞ্জস্যতা নেই কারো সাথে কারো। এমন অবস্থায় শ্রমিকেরা সব ঢাকায় আসতে শুরু করলেন। কিসে করে আসছে? পন্যবাহী গাড়ীতে। এরপর পন্যবাহী গাড়ীতে মানুষ নেওয়া বন্ধ করা হলো। আর ঢাকায় কেউ আসা বা ঢাকা থেকে যাওয়া বন্ধ করা হলো। মালিকেরা সরকার থেকেও সুবিধা নিবে আবার শ্রমিকদেরও খাটিয়ে মারবে। আর তারা যেভাবে এসেছে তাতে একজনের শরীরে করোনা থাকলে হাজারজনের হতে সময় লাগবে না। এই ভুলটা কোনোভাবেই মানা যায় না। এটা অবশ্যই আগে থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল।

ছবিটি প্রতীকী। ছবি: রয়টার্স
ছবিটি প্রতীকী। ছবি: রয়টার্স

এরপর আসল পবিত্র ঈদ। আমরা মসজিদে মানুষ যাওয়ার ব্যবস্থা করলাম, শপিং করার ব্যবস্থা করলাম, এমনকি বাড়ি যাওয়ার রাস্তাও খুলে রাখলাম। এখন কথা হচ্ছে চাইলে কি আমরা মানুষের চলাচল বন্ধ করতে পারতাম না? আর চাইলে কি আমরা নিজেরা ঘরে থাকতে পারতাম না? ভুল দুই পক্ষেরই আছে।

যখন ৩-৫ জন করে আক্রান্ত হচ্ছিলো তখন আমরা সব বন্ধ করে দিলাম আর এখন দুই হাজার আক্রান্ত হচ্ছে এখন আমরা সব খুলে দিচ্ছি। মানুষের জীবনের চেয়ে অর্থনীতি অনেক বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের কাছে। কিন্তু আমরা না বাঁচলে অর্থনীতি কার জন্য? কিসের জন্য?

বস্তুত দেশের অর্থনীতির যা অবস্থা তাতে সব খুলতে অনেকটা বাধ্য হয়েছে সরকার। কিন্তু আমরা কার্যকরী একটা লকডাউনের ব্যবস্থা করতে পারতাম না? আমরা কি মাত্র ১৫ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা দিতে পারতাম না? আমরা অনেক দিন লকডাউন রেখেছি কিন্তু মানুষ মানেনি। মানুষকে জোর করে মানানো দরকার ছিল অবশ্যই। বের হলেই শাস্তি, এমন ব্যবস্থা হলে ঠিকই সবাই ঘরে থাকতে বাধ্য হতো। কিন্তু আমরা এটা করতে পারিনি। আমরা এখন এক অচেনা অজানা পথের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। জানি না বাংলাদেশের ভবিষ্যতে কী আছে! হার্ড ইম্যুনিটি বা কোনো কিছুই কিছু এখন। এখন শুধু একটাই উপায় স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা যদি আমাদের ক্ষমা করে দেয়!