করোনা পাল্টে দিয়েছে আমাদের

করোনাভাইরাস যখন প্রথমে চীনে দেখা দিল, তখন অনেক দেশই ঠিকভাবে এটাকে নেয়নি। অনেক বড় বড় রাষ্ট্র কোনো মূল্যই দেয়নি এই ভাইরাসকে। মূল্য না দেওয়ার চরম খেসারত দিয়েছে স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র।

এখন করোনা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের কোনো জায়গায় বাদ থাকছে না। অদ্ভুতভাবে বেঁচে গেছে চীন। কিন্তু দিন দিন খারাপ অবস্থায় চলে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব। কবে এই ভাইরাস বিদায় নেবে, তা বলাও কঠিন হয়ে গেছে। এই ভাইরাসকে বিদায় করতে হলে প্রয়োজন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের। কিন্তু এই ভ্যাকসিন আবিষ্কার কবে যে হবে, তার ঠিক নেই। এর আগে যেসব ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে, তা এত দ্রুত হয়নি কোনোটাই। যদিও বিশেষজ্ঞরা আশা দেখাচ্ছেন দ্রুতই ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে। কিন্তু আসলে কী যে হবে, তা পৃথিবীর কেউ জানে না। অনেক সময় ভাইরাস নিজে থেকেও বিলুপ্ত হয়ে যায়। এমন আশা আমরা করতেই পারি। কারণ, মানুষ তো আশায় বেঁচে থাকে। কোনো একটা ভরসা না পেলে তো সামনের পথ অনেক কঠিন হয়ে যাবে।

তবে এই করোনার মধ্যেও আমরা কিছু আশার বাণী দেখেছি। করোনা আমাদের সাধারণ জীবনযাপনকে বদলে দিয়েছে। আমাদের নিয়ম মানতে শিখিয়েছে। করোনার কারণে আমাদের পরিবেশ প্রকৃতির যেসব ক্ষতি আমরা করে থাকি, তা করছি না। আমরা বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত থাকছি না। সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও কমে এসেছে। আমরা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার যেসব নিয়মকানুন এখন পালন করছি, সেটা তো আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হওয়ার কথা। সেই প্রতিদিনকার কাজই আমরা করতাম না। কিন্তু করোনা আমাদের নিয়ম মানতে বাধ্য করেছে।

এখন যেসব দেশে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে সেই দেশগুলোতে বাইরে বের হলে মনে হবে নতুন এক পৃথিবী। সবুজেরা বেড়ে উঠতে শুরু করেছে চারদিকে। পরিবেশের মাঝে নির্মল হাওয়া খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। কালো ধোঁয়া তেমন একটা নির্গত হচ্ছে না, হচ্ছে না যত্রতত্র ময়লা ফেলা।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমন করে চীন ও আমেরিকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দুই দেশ অনেকটাই সেই পথ থেকে বেরিয়ে এসেছে। চীন যদিও সবকিছু নতুন করে শুরু করেছে। তবে দুই দেশেই কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমন ছিল শূন্যের কাছাকাছি।

পরিবেশের ভারসাম্য যেভাবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছিল, বিশ্বে উষ্ণায়নের প্রভাব যেভাবে বাড়ছিল, তা আসলেই আশঙ্কার। প্রকৃতির পাশাপাশি পশুদের জন্যও পৃথিবী হয়ে উঠছিল দুর্বিষহ। এখন পশুরা পর্যন্ত লোকালয়ে চলে এসেছে। তারা লোকালয়ে এসে বসবাস করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় পশুদের বাইরে আসার নজির দেখা গেছে।

বিশ্বব্যাপী জাতিগত নিধন ও নির্যাতন ছিল চরম পর্যায়ে। বিভিন্ন দেশে শরণার্থী শিবিরে নির্যাতনের মাত্রা ছিল ভয়াবহ। এসব কিছুই এখন বন্ধের পথে। ট্রাম্প এখন আর মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল ওঠানো নিয়ে ভাবছেন না। ট্রাম্প এখন নিজের দেশ বাঁচাতেই ব্যস্ত। কাশ্মীরকে কিছুদিন আগেই লকডাউন করে রাখা হয়েছিল। এখন স্বেচ্ছায় পুরো দেশকেই লকডাউন করতে হচ্ছে। স্বজন হারানোর যন্ত্রণা বুঝতে পারছে সবাই। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের খবর এখন শোনা যাচ্ছে না।

আমাদের বাংলাদেশে প্রতিনিয়িত যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা দেখা যায়, তার চিত্র পুরোটাই বদলে গেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় তবু মানুষ মারা গেছে। তবে আমরা যেভাবে সড়কে মৃত্যুর মিছিল দেখি, তা দেখা যাচ্ছিল না এই লকডাউনের সময়।

করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ হওয়ায় অপরাধ কর্মকাণ্ড অনেকটা কমে গেছে। বিশেষ করে অস্ত্র, মাদকের কারবার একদম বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু পারিবারিক নির্যাতনের সংখ্যা বেড়েছে, যেটা আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোপরি অপরাধ কমেছে।

কিছু অসাধু মানুষ আছে, যারা এই পরিস্থিতিতেও নিজেদের স্বার্থ সুবিধার কথা ভেবে মানবতা গর্হিত কাজ করেছে। কিন্তু তাদের জন্য এই কথাগুলো নয়। যারা এই সময়টায় নিয়ম মেনে চলেছে, খারাপ কাজগুলো বাদ দিয়েছে। তারা যদি ভালো কাজের ধারা অব্যাহত রাখে, তাহলে পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে যাবে।