খাদ্যনিরাপত্তায় শ্রম দিচ্ছেন কুষ্টিয়ার শিক্ষার্থীরা

খাদ্যসামগ্রী প্যাকেট করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: লেখক
খাদ্যসামগ্রী প্যাকেট করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: লেখক

করোনা মহামারিতে আমাদের দেশটি পার করছে এক কঠিন সময়। কর্মহীন হয়েছে দেশের নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা। মৃত্যুর ভয়ের সঙ্গে ক্ষুধায় মৃত্যুর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বহু মানুষ। পাশাপাশি সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ফলেও দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। করোনা ও আম্পানের সময়ে কুষ্টিয়া জেলাকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে খাদ্যনিরাপত্তার উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন কুষ্টিয়া জেলা থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত একঝাঁক শিক্ষার্থী। অন্তত নিজের জেলার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাঁদের লক্ষ্য।

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার পর দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। ২৫ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর কর্মহীন হয়ে যাওয়া দিনমজুর ও রিকশাচালকদের সহায়তার জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী অনুপ কুমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সহায়তায় বন্ধুদের সহযোগিতা চান। এরপর ৮-১০ জন বন্ধুরা মিলে মাত্র ৫ দিনে ৭০টি কর্মহীন পরিবারের মধ্যে এক সপ্তাহের খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন। ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ২ কেজি আলু, ২ কেজি আটা, আধা কেজি পেঁয়াজ, আধা কেজি তেল, আধা কেজি লবণ ও ১টি সাবান দেওয়া হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় মোট তিন ধাপে ৩০০টি পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩ টন খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন কুষ্টিয়ার শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া যাঁরা হীনম্মন্যতা ও লজ্জার কারণে সহায়তা চাইতে পারেন না, তাঁদের জন্য হটলাইন নাম্বারের ব্যবস্থা করা হয়, যার মাধ্যমে ১০টির বেশি পরিবার সহযোগিতা পেয়েছে।

সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: লেখক
সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: লেখক

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হাতে নেন। অসচ্ছল ও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ১ হাজার মানুষের মধ্যে তাঁরা ‘৫০ টাকায় ঈদ খুশি’ প্রজেক্ট চালু করেন। সামর্থ্যবান অনেকেই এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেন। ঈদের দিন মোট ১ হাজার ৩০০ জন মানুষের মধ্যে ভুনা খিচুড়ি, মুরগির মাংস ও ডিম রান্না করে বিতরণ করেন কুষ্টিয়ার শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৃজন বলেন, ‘এমন উদ্যোগে পাশে থাকতে পেরে ব্যতিক্রমী এই ঈদ আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ঈদ।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তামান্না বলেন, ‘খাদ্যসহায়তার পাশাপাশি আমরা কুষ্টিয়ার চিকিৎসক ভাইয়া ও আপুদের সহযোগিতায় খুব শিগগির দুস্থদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিনা মূল্যে ওষুধ বিতরণ শুরু করব।’

আরেক উদ্যোক্তা রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে আমরা চাচ্ছি একইভাবে কিছু অসচ্ছল পরিবারকে সহায়তা করতে, যাতে তাদের পরবর্তী সময়ে আর সহায়তার প্রয়োজন না হয়। অর্থাৎ আমরা তাদের স্বাবলম্বী করার প্রজেক্ট হাতে নিতে চাচ্ছি। এ জন্য নিজেদের পাশাপাশি আমি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আট বন্ধু মিলে শুরু করা কাজে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন।’

*এমবিবিএস শিক্ষার্থী, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা।