সহজে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে...

প্রতিদিন আমরা জীবনের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকি, যেগুলোর জন্য আমাদের কিছুটা ভাবনাতে পড়তে হয় এবং ভেবেচিন্তে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হয়। কখন কোন পোশাকটি পরা উচিত, কোন সিনেমাটি দেখতে হবে, বাইরে ছাতা নিয়ে বের হব কি না ইত্যাদি সিদ্ধান্ত আমরা যত সহজে নিতে পারি, তত সহজে কিন্তু আমরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া উচিত, ক্যারিয়ারের কোন পথটি সবচেয়ে ভালো হবে অথবা বিয়ে-সংসার এখনই করব কি না—এই সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারি না। কিন্তু এই সিদ্ধান্তগুলোই জীবন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত; আমরা কি হতে চাই, দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাই, তা এই সিদ্ধান্তগুলোর ওপরেই নির্ভর করে।

ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কয়েকটি পদ্ধতি আছে। এমন না যে আমরা জন্মগতভাবে কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখি না, তবে কেবল জীবনের প্রতিটি ধাপে অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়তে থাকে। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচটি পদক্ষেপ বিবেচনা করা দরকার। আজ আলোচনা করবে সেসব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে:

১.
আপনার লক্ষ্য চিহ্নিত করুন
সবচেয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের কৌশলগুলোর মধ্যে একটি হল আপনার লক্ষ্যকে সুনির্দিষ্ট করা। এর অর্থ হলো সমস্যাটি সমাধান করার প্রয়োজন কী, সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য কী, কেন এই সমস্যার সমাধান করা দরকার, তা নির্ধারণ করা। এটি আপনাকে ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। আপনি যখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত কারণটি জানবেন, তখন সহজেই সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারবেন।

২.
প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা
এর ফলে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে কী করা উচিত, তা আরও ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করবে। যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চান, সেই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ অথবা অভিজ্ঞদের সঙ্গে মতামত বিনিময়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে সহায়তা করে থাকে। সেরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সবার উচিত যতটা সম্ভব অভিজ্ঞদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা।

৩.
তথ্য উপাত্তগুলো বিবেচনা করুন
এই পদক্ষেপটি প্রথম ধাপের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি আপনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি কীভাবে নিজেকে ও চারপাশের সবাইকে প্রভাবিত করবে, তা নির্ধারণে সহায়তা করে থাকে। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন, আপনার সিদ্ধান্তের ফলাফল কী হতে পারে? এটি বর্তমানে অথবা ভবিষ্যতে আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?

৪.
আপনার সিদ্ধান্ত নিন
আপনি আপনার লক্ষ্য চিহ্নিত করেছেন, প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং তথ্যগুলো যাচাই–বাছাই করেছেন এখন আপনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নেওয়ার সময়। এই পদক্ষেপটি নেওয়ার সময় কিছু লোককে প্রচুর উদগ্রীব হতে দেখা যায়। কিন্তু নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। সিদ্ধান্তটি অনুভব করতে হবে। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে এই সিদ্ধান্তটি কি আপনার জন্য এখন এবং ভবিষ্যতে সবচেয়ে কার্যকর? এই প্রশ্নের সবচেয়ে সুন্দর উত্তর পেলেই বুঝবেন আপনি সঠিক সিদ্ধান্তেই আছেন।

৫.
আপনার সিদ্ধান্ত মূল্যায়ন
একবার আপনি নিজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে তা কার্যকর করে তুলতে হবে । মনে রাখবেন, এই পদক্ষেপের জন্য কিছুটা ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। কারণ সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত ফলাফলটি সময়সাপেক্ষ।

এই পাঁচটি পদক্ষেপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটিকে সহজতর করতে সহায়তা করে থাকে, তবে সব পদক্ষেপের মতো এখানেও কিছুটা ঘাটতি রয়েছে, যা আপনাকে অবশ্যই নিজ বিবেচনায় দূর করতে হবে। আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য একাধিক উৎস হতে নিতে চেষ্টা করতে হবে, কারণ শুধু একটি উৎসই শতভাগ নির্ভরযোগ্য হতে পারে না। যতটা সম্ভব সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে খুব সহায়ক হয়ে থাকে, তবে তথ্যের অতিরিক্ত বোঝা আপনাকে বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে এবং আপনাকে আপনার নিজের মতামতের অনুসরণ করতে বাধা দিতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার নিজের ওপর বিশ্বাস রাখাটাই ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি প্রধান চাবিকাঠি, তবে বিকল্প সিদ্ধান্ত ভেবে রাখতে ভুলে যাওয়া মোটেও উচিত না।

*শিক্ষার্থী: সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়