করোনা মহামারি না বাসচাপা

পুরো পৃথিবী যখন করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যস্ত, তখন বাংলাদেশ সরকারও আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনতে হিমশিম খাচ্ছে। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশ প্রথম সংক্রমণ দেখে। এরপর দিন যেতে যেতে সবকিছু বন্ধ হতে থাকে। বন্ধ হয় গণপরিবহনও। মানুষ ভুলে যেতে শুরু করে এই দেশে একসময় প্রতিদিন মানুষ রাস্তায় প্রাণ হারাত।

করোনাভাইরাস চলাকালীনও মানুষ বাইরে বের হচ্ছিল এবং এখনো হচ্ছে। কিন্তু বাসচাপায় মৃত্যুর খবর আসেনি। ১ জুন সরকারি সিদ্ধান্তে সব গণপরিবহন চালু করা হয়। তার ঠিক এক দিন পর আমরা দেখতে পাই বাসচাপায় মৃত্যু। এরপর ৪ জুন সকালে বাংলামোটর এলাকায় বিহঙ্গ বাসের চাপায় দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। খবরে দেখা যায়, বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাপা দেয়।

একটা বাসে কারিগরি ত্রুটি আছে, তাহলে কোন হিসাবে বাসটি রাস্তায় নামানো হয়? অনেক সময়ে আমরা বিভিন্ন নাটক-ছবিতে দেখি শত্রুতা করে গাড়ির ব্রেক ফেল করানো হয়। এটা তো বাস্তব, কোনো ছবি নয়। যে দুজন মারা গেছেন, তাঁরা হয়তো বহু কষ্টে নিজেদের করোনাভাইরাস থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু তাঁরা এটা জানতেন না যে তাঁদের মৃত্যু করোনায় নয়, দানব বাসের চাপায় হবে। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই রাস্তায় রক্তের দাগ মুছে ফেলা হয়। এই দুর্ঘটনার দাগ তো মুছে ফেলা হয় কিন্তু মুছে ফেলা হয় না সেই ঘাতক বাস এবং বাস চালকদের।

বিভিন্ন ধরনের খবরের চাপায় এই খবরটিও চাপা পড়ে যায় শহীদ রামিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় মারা যায়। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আন্দোলনের ঝড় ওঠে। ফলাফল কিছুই হয় না। বাসের প্রতিযোগিতা হয় কিন্তু প্রাণ দিতে হয় সাধারণ মানুষকে। দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ হারান বিইউপি ইউনিভার্সিটির ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী।

২০১৯ সালে ৪ হাজার ৭০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ৫ হাজার ২২৭ জন। একবারও কি কেউ ভেবে দেখেছিল, এটাই হবে তাদের বাসা থেকে শেষবারের জন্য বের হওয়া?

অতএব, আমরা কোন বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করব—করোনাভাইরাস নাকি বাসচাপা? কারণ, উভয়টিই আমাদের জন্য মহামারি।