আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের ব্যবধান ৩-০

শিরোনামটা দেখে নিশ্চয় আপনার চোখ কপালে উঠেছে! ওঠারই কথা। যেখানে আর্জেন্টিনা একটা টপ ক্লাস ফুটবল দল, আর সেখানে ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান একদম পেছনের দিকে (অস্তিত্ব খুবই নগণ্য)। দল হিসেবেও আর্জেন্টিনার ঝুলিতে আছে দুইটা ফিফা বিশ্বকাপ, সেখানে কোনোদিন ফিফা বিশ্বকাপের মূল পর্বেই খেলতে পারেনি বাংলাদেশ।

তার থেকেও বড় কথা হলো, ফুটবল মাঠে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনোদিন ম্যাচই খেলেনি আর্জেন্টিনা। সেখানে জয়–পরাজয় তো পরের বিষয়।

তাহলে জয়ের ব্যবধান ৩-০ হলো কেমনে? না, আপনি ভুল শোনেননি, ঠিকই শুনেছেন। তবে জয় কিন্তু ফুটবলে না, জয় ক্রিকেটে।

ক্রিকেটে এ পর্যন্ত তিনবার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনা। তিনবারের দেখায় তিনবারই জিতেছে বাংলাদেশ, সেই হিসাবে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের ব্যবধান ৩-০।

ফুটবল পরাশক্তি আর্জেন্টিনার সঙ্গে ক্রিকেট মাঠে প্রথমবার বাংলাদেশের দেখা হয়েছিল ১৯৮৬ সালের ২৫ জুন, ইংল্যান্ডের হেয়ারফোর্ডে।

৬০ ওভারের নির্ধারিত ম্যাচে সেদিন কোনো টস হয়নি। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের সামনে দিশেহারা হয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা। রবার্ট কিরটোন ও অধিনায়ক পিটার স্টোকসের ১৯ রানের ওপর ভর করে ৪৯.২ ওভারে ১২২ রানে অল আউট হয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

বাংলাদেশের পক্ষে ৮ ওভার বোলিং করে ২২ রানে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন জাহাঙ্গীর শাহ।

ব্যাটিংয়ে নেমে জয়ের জন্য মোটেও বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশকে। দুই ওপেনার রকিবুল হাসানের অপরাজিত ৪৭ ও জাহিদ রাজ্জাকের ২২ রানের ইনিংসে ১২৫ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনাকে হারানোর কৃতিত্ব গড়ে টিম টাইগার্স।

এরপর আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় দেখা কেনিয়ার নাইরোবিতে। ১৯৯৪ সালের এবিএন-অ্যামরো আইসিসি ট্রফিতে।

সিমবা ইউনিয়ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শুরুতেই টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করে শুরুতেই আর্জেন্টিনাকে চেপে ধরেন বাংলাদেশের বোলাররা।

বর্তমান আম্পায়ার এনামুল হক মনি ও গোলাম নওশেরের বোলিং তোপে ৪৩.২ ওভারে ১২০ রানে অল আউট হয়ে যায় আর্জেন্টিনা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন ডোনাল্ড ফরেস্টার।

১০ ওভারে ৪ মেডেন, ২৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন গোলাম নওশের এবং ৮.২ ওভার হাত ঘুরিয়ে ২ মেডেন, ২৩ রান দিয়ে সমানসংখ্যক ৩ উইকেট নেন এনামুল হক।

বৃষ্টির জন্য ১৩ ফেব্রুয়ারিতে খেলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় খেলা গড়ায় ১৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ডেতে।

ব্যাট হাতে আতাহার আলী খানের ৪১ ও জাহাঙ্গীর আলমের ৩৭ রানের ওপর ভর করে ৮৮ বল হাতে রেখে আবারও ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ৪১ রান করে ম্যাচসেরা হন আতাহার আলী খান।

আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের তৃতীয় ও শেষবারের মতো দেখা হয়েছিল মালয়েশিয়ায় কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে। ১৯৯৭ সালের ২৪ মার্চ, ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় মুখোমুখি হয় দুই দল।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা। বার্নাডো ইরিগুয়েনের ৩০* ও মিজুয়েল মরিসের ১৮ রানে কিছুটা বিপর্যয় কাটিয়ে ৪৮.৩ ওভারে সংগ্রহ করে ১৩৮ রান। তবে ম্যাচ জেতার জন্য যেটা মোটেও পর্যাপ্ত সংগ্রহ ছিল না।

বল হাতে বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন এনামুল হক ও নাইমুর রহমান। হাসিবুল হোসেন ২টি উইকেট নেন।

১৩৯ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে আতাহার আলীর অপরাজিত ৩৯, নাইমুর রহমানের ৫৩ এবং শেষ দিকে ৭ বলে ২ চার ১ ছক্কায় মোহাম্মদ রফিকের ১৫ রানের ক্যামিওতে আর্জেন্টিনাকে ৫ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ।

বল হাতে ১০ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৩ উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৩৭ বলে ৭ চার, ২ ছক্কায় ৫৩ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়।

সেই আসর অর্থাৎ ১৯৯৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে শিরোপা জিতেই বাংলাদেশ অর্জন করেছিল প্রথমবারের মতো ১৯৯৯ আইসিসি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা।

* শিক্ষার্থী, প্রথম বর্ষ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]