রাঙামাটির ছাদ সাজেকের প্রেম মিস করি

বন্ধুরা মিলে সাজেক ভ্যালিতে। ছবি: সংগৃহীত
বন্ধুরা মিলে সাজেক ভ্যালিতে। ছবি: সংগৃহীত

রাত ১০টায় বাস ছাড়ার কথা ছিল। আটটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা কমলামপুর স্টেডিয়ামের সামনে জড়ো হতে শুরু করে। এবারের শিক্ষাসফরটি হতে যাচ্ছে রাঙামাটির ছাদে। বলছি সাজেক ভ্যালির কথা। 

আমাদের ৩২তম ব্যাচের এবারের ভ্রমণ বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শেষ ভ্রমণ। কারণ, মাসখানেক পরই গ্র্যাজুয়েট হতে যাচ্ছি। সবাই নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে এল। কিন্তু বাসের দেখা নেই। আমাদের রিজার্ভ করা বাসটি স্টেডিয়ামের সামনে এল রাত ১১টায়। তবে এতে কারও কোনো অভিযোগ বা অভিযোগ ছিল না।

সবাই বাসে উঠলাম। বলা হলো, যাওয়ার সময় যারা সামনে বসেছে, তারা আসার সময় পেছনে বসবে। বরাবরের মতো সবাই ঠিক আছে স্যার বলে চিৎকার করে উঠল। আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল সাজেকের রূপ। এত দিন যার রূপবৈচিত্র্যের কথা শুনেছি, আজ তা স্বচক্ষে দেখব।
কল্পনা করতে করতে কখন যে কুমিল্লা চলে এলাম, বুঝলামই না। একটি হোটেলের সামনে থামাল, নৈশভোজের জন্য। ছোট মাইকটি নিয়ে স্যার বললেন, ৩০ মিনিট দেওয়া হলো, সবাই খাবার খেয়ে দ্রুত বাসে উঠে যাবে। দ্রুত বাস থেকে নেমে খাবার খেয়ে ৩০ মিনিট পূর্ণ হওয়ার আগে সিটে বসে গেলাম। পর্যায়ক্রমে সবাই উঠে গেল।
বাস চলল খাগড়াছড়ির পানে। খাওয়ার পর একটু ঘুম হলো। চোখ বুজে ছোট্ট একটা ঘুম দিলাম। ইঞ্জিনের আওয়াজে আর হালকা ঝাঁকুনিতে ঘুমটা আমার বেশ হয়েছে। একটি মসজিদের সামনে থামানো হলো, ফজরের নামাজ পড়লাম সবাই। আবারও গাড়িতে উঠলাম। খানিক বাদে খাগড়াছড়িতে পৌঁছাই।

দেখে মনে হবে মেঘে ঢেকে গেছে পাহাড়। ছবি: লেখক
দেখে মনে হবে মেঘে ঢেকে গেছে পাহাড়। ছবি: লেখক

সকালের নাশতা সেরে রিজার্ভ করা চাঁদের গাড়িতে সাজেকের উদ্দেশে রওনা দিই। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ দিয়ে গাড়িটি চলছে। চাঁদের গাড়িতে ভ্রমণের অনুভূতিটা আরও সুখময় ছিল। সাজেক পৌঁছে হোটেল বুক করা হলো। শিক্ষকেরা রুম বণ্টন করে দিলেন। আমরা চারজন এক রুমে ছিলাম। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখলাম প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। সাজেকে আরেকটি আকর্ষণ রুই লুই পাহাড়। ১ হাজার ৮০০ ফুট উচ্চতার ওই পাহাড়ে উঠে উপভোগ করা যাবে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, সঙ্গে একগুচ্ছ মেঘের ভেলা।

সাজেকে মূলত লুসাই, ত্রিপুরা, পাংখোয়ারারা বসবাস করে। সাজেকে রয়েছে লুসাই গ্রাম। এখানে লুসাইরা বসবাস করে। মাত্র ৩০ টাকা টিকিট কাটতে হয় লুসাই গ্রামে প্রবেশ করতে হলে। ১০০ টাকায় কয়েক ঘণ্টার জন্য মিলবে লুসাইদের পোশাক। অনেকে এই পোশাক পরেছে, ছবি তুলেছে, ইউটিউবের জন্য কন্টেন্ট বানিয়েছে কেউ কেউ। এ দৃশ্য দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে যায়।

মেঘে ঢাকা পাহাড়। ছবি: লেখক
মেঘে ঢাকা পাহাড়। ছবি: লেখক

বিকেলে হেলিপ্যাডে হাঁড়ি ভাঙা ও বুদ্ধিমত্তা যাচাই খেলা হয়। খেলায় অংশ নেওয়ায় কংলাক পাহাড়ে উঠে সূর্যাস্ত দেখতে পারিনি। তবে ভোরে কংলাক পাহাড়ে উঠেছি, কিন্তু জানুয়ারি মাস হওয়ায় বেশ কুয়াশা থাকায় সূর্যোদয় দেখা যায়নি। মাত্র এক রাত দুই দিন ছিলাম সাজেকে। কিন্তু এই ক্ষণিক সময়ের মধ্যে সাজেকের প্রেমে মগ্ন হয়ে যাই। করোনার চলমান ভয়াল পরিস্থিতিতে খুব মিস করছি সাজেককে।