ড. নীলিমা ইব্রাহিম: একটি নক্ষত্র

ড. নীলিমা ইব্রাহিম
ড. নীলিমা ইব্রাহিম

নীলিমা ইব্রাহিম বাংলার নারীজাগরণের পথিকৃতদের মধ্যে একজন। নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে আজন্ম নারীর আত্মোন্নয়নে কাজ করেছেন। সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর অনমনীয় দৃঢ়তা সত্যিই বিস্ময়কর।

প্রথমে তাঁর পরিচয়, শিক্ষা ও জন্মস্থান সম্পর্কে জেনে নিই। ১৯২১ সালের ১১ অক্টোবর খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন নীলিমা রায় চৌধুরী। পিতা ছিলেন প্রফুল্ল কুমার রায় চৌধুরী আর মাতা কুসুম কুমার দেবী। পিতা খুলনার বিশিষ্ট আইনজীবী ছিলেন। পূর্বপুরুষ জমিদার বংশের ছিলেন।

নীলিমা রায় চৌধুরীর বাল্য কিংবা শিক্ষাজীবন দারুণ গৌরবোজ্জ্বল। ১৯৩৫ সালে চারটি বিষয়ে লেটার নম্বর নিয়ে ম্যাট্রিক পাস করেন। বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে কলিকতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে ভর্তি হন। ১৯৪১ সালে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী সময়ে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে প্রথম শ্রেণি লাভ করেন। তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটক’—উক্ত বিষয়ে ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনিই প্রথম বাঙালি নারী, যিনি বাংলায় ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

নীলিমা চৌধুরী ১৯৪৫ সালে ইন্ডিয়ান আর্মি মেডিকেল কোরের ক্যাপ্টেন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে বিয়ে করেন। অতঃপর তিনি নীলিমা ইব্রাহিম নামেই সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠেন। পারিবারিক জীবনে তিনি পাঁচ কন্যাসন্তানের জননী।

নীলিমা ইব্রাহীমকে কীভাবে মূল্যায়ন করব, বিষয়টি খুবই জটিল। কারণ, তাঁর কর্মের ব্যাপ্তি বিশাল। পার্থিব জীবনের যেদিকে দৃষ্টিপাত করা যায়, সেদিকেই তিনি উজ্জ্বল তারার মতো দেদীপ্যমান। শিক্ষায়, সাহিত্যে, সমাজ সবায়, অর্থনীতি চিন্তায়, রাজনীতির বাস্তবতায় এবং নারীর সঠিক পরিচয় নির্ণয়ে তাঁর আছে নিরলস সাধনা।

ষাটের দশকটি ছিল বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক কাল। এ সময় থেকেই বাঙালি মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শুরু করে। সেই সময়টিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নীলিমা ইব্রাহিমের আগমন। ১৯৫৬ সালে প্রভাষক পদে বাংলা বিভাগে যোগ দেন। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা নবীন এই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে নানাবিধ সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

ষাটের দশকের শুরু থেকেই বেশ কিছু উপন্যাস ‘বিশ শতকের মেয়ে’, ‘একপথ দুইবাঁক’, ‘কেয়াবন সঞ্চারিণী’ প্রকাশিত হয়। তা ছাড়া নীলিমা ইব্রাহিমের বেশ কিছু প্রবন্ধ এ সময় সাহিত্যিক সমাজে তোলপাড় সৃষ্টি করে। ‘শরৎ প্রতিভা’, ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলার কবি মধুসূদন’ এবং তাঁর গবেষণাধর্মী বই ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি সমাজ ও বাংলা নাটক’ সুধীমহলে ব্যাপকভাবে প্রশংশিত হয়। তিনি শক্তিশালী লেখিকা হিসেবে নিজের আসনটি পোক্ত করেন। এসব উপন্যাস ও প্রবন্ধে তিনি সমাজসচেতনতা কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে নারীদের মনের কথা বলার চেষ্টা করেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টিভঙ্গীর কথাই যেন তার গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় ছিল। তিনি বাঙালি নারীকে দেখতে চেয়েছেন, নারীরাও মাথা উঁচু করে হেঁটে চলবে। মেরুদণ্ড যেন বাঁকা না হয়। যে নারী উপার্জন করেন, পুরুষ তাঁকে অবজ্ঞা করতে শতবার চিন্তা করে, এ কথাটি তিনি বিভিন্নভাবে প্রবন্ধ ও উপন্যাসে উপস্থাপন করে পাঠকের চিন্তাকে বিস্তৃত করার চেষ্টা করেন। নারীর ব্যক্তিত্বের বিকাশ, তার স্বাধীন সত্তার উন্মোচন এবং সমাজে নারীর যথাযোগ্য স্থান নির্ণয়ের প্রয়াস পেয়েছেন তিনি। তবে তিনি নারীবাদী লেখিকা নন। সমাজে অসম বিকাশের জন্য নারীমুক্তির ক্ষেত্রে যে অচলায়তনের সৃষ্টি হয়েছে, তা ভেঙে নারী–পুরুষের সুস্থ, স্বাভাবিক ও আত্মসম্মানসম্পন্ন জীবন লাভই তাঁর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। সেদিক থেকে তিনি এক মানবতাবাদী লেখক। ‘বিশ শতকের মেয়ে’, ‘কেয়াবন সঞ্চারিনী’ প্রভৃতি উপন্যাসে তিনি নারীকে স্বাধীন, স্বাবলম্বী ও মানুষ হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস, নারী–পুরুষের মিলিত প্রয়াসেই মানবমুক্তি সম্ভব।

নীলিমা রাজনীতি–সচেতন শিক্ষক ছিলেন। তাই পাকিস্তান সামরিক সরকারের বাঙালি দলননীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন বারবার। ১৯৬১ সালে কবিগুরুর জন্মশতবার্ষিকী পালনকে পূর্ব পাকিস্তানে নিষিদ্ধ করলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। ১৯৬৪ সালে দাঙ্গায় নিপীড়িত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান। বিহারিরা পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লায় হানা দিয়ে অনেক হিন্দুকে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক বি.সি রায় থাকতেন পুরান ঢাকায়। তাঁর বাড়িটা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে নীলিমা ইব্রাহিম ছুটে যান। পুলিশ এবং মিলিটারির সঙ্গে অনেক ঝক্কিঝামেলা শেষে চার দিন পর জগন্নাথ কলেজের শরণার্থীশিবির থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন। পরবর্তীকালে পাকিস্তান সরকারের রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং আধুনিক বাঙালি জাতীয়তা চেতনায় একদল নতুন সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মী তৈরির কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। বাংলা বিভাগের সেই আদর্শবাদী, বিশেষ লক্ষ্য অর্জনের ব্রতী, অঙ্গীকারদীপ্ত অধ্যাপিকা নীলিমা ইব্রাহিম বিপুল ছাত্রসমাজকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নীলিমা ইব্রাহিমের জ্যেষ্ঠ কন্যা মঞ্জুরা কবীর সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়পাড়ায় থাকার সময় আমাদের বাড়িটা ছিল বহু ছাত্রছাত্রীর অস্থায়ী আস্তনা। আজকের বহু নামীদামি নেতারা তখন ছিলেন ছাত্রনেতা। মা ছিলেন রাজনৈতিক সচেতন। সেই উনসত্তরের ছাত্র আন্দোলন, ছয় দফা-এগারো দফার দিনে মা উদার হস্তে তার ছাত্রদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। ছাত্রছাত্রীরা সারা দিন মিটিং–মিছিল সত্ত্বেও ক্লান্ত–শ্রান্ত হয়ে চলে আসত মায়ের কাছে। থাকা–খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের প্রচণ্ড আশাবাদী মনের স্পর্শে উজ্জীবিত হতো তারা। আমার আজ মনে পড়ে কী চরম অবস্থায়¯মা এই ছাত্রদের ভালোমন্দের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন।’ নীলিমা ইব্রাহিম সাহসী ছিলেন, তাই পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা নজরদারিকে তোয়াক্কা করতেন না।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নীলিমা ইব্রাহিম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে আত্মগোপন করেন। এ সময় আকাশবাণী থেকে প্রচার করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিমকে হত্যা করা হয়েছে। সংবাদটি প্রচারিত হওয়ার কিছুদিন পর, আগস্টের শেষ দিকে যুদ্ধের মধ্যে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফিরে আসেন তিনি। এ সময় পাকিস্তান সরকারের প্রয়োজন ছিল নীলিমা ইব্রাহিমকে বাঁচিয়ে রাখা। তবুও তিনি পাকিস্তানি সেনাদের মুখোমুখি হয়েছেন অসংখ্যবার। পাকিস্তানি সেনারা তাঁর বাড়ি সার্চ করতে এসেছিল। তখন চার মেয়ে ও মেঘনা গুহঠাকুরতা (শহীদ অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মেয়ে) ফুলার রোডের শিক্ষক কোয়ার্টারে ছিলেন। আর্মি ক্যাপ্টেন বাড়ি সার্চ করতে উদ্যত হলে তিনি শান্ত গলায় বলেন, বাড়িতে আমার মেয়েরা আছে, কোনো পুরুষ মানুষ নেই। কী ভেবে, সেদিন মিলিটারিরা বাড়ি সার্চ না করে চলে যায়। তা ছাড়া তাঁকে হেনস্তা করার জন্য ক্যান্টনমেন্ট থেকে তার নামে চিঠিও আসে। নীলমা ইব্রাহিম এসব ভয়ভীতিকে উপেক্ষা করে রীতি ইব্রাহিমকে নিয়ে (ছোট মেয়ে) গাড়ি চালিয়ে ঢাকা শহর ঘুরে বেড়িয়েছেন।

রীতি ইব্রাহিম তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং ভালো গাড়ি চালাতে জানতেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি পাকিস্তানি সেনাদের ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করতেন এবং ভাবতেন, একদিন দেশ স্বাধীন হবেই।

স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু সরকার নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠিত হলে নীলিমা ইব্রাহিম একজন সম্মানীত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন। শ্রদ্ধেয় বিচারপতি কে এম সোবহান এর প্রধান দায়িত্বে ছিলেন। নীলিমা ইব্রাহিমের এই কাজের বিশাল অভিজ্ঞতার খানিকটা ফসল আমরা পেয়েছি তাঁর অমূল্য গ্রন্থ ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’–এর মাধ্যমে। এই বইয়ের মাধ্যমে ’৭১–এর যুদ্ধে লাঞ্ছিত বাঙালি নারীর কান্না-দুঃখ-শোকের ইতিহাসই কেবল পাই না, এখানে এক নারীর মানবাধিকার–সচেতন শক্তিশালী লেখককে আমরা খুঁজে পাই। ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’—এই গ্রন্থের ভূমিকায় লেখিকা শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন: ১৯৭২ সাল যুদ্ধ জয়ের পর যখন পাকিস্তানি বন্দীরা ভারতের উদ্দেশে এ ভূখণ্ড ত্যাগ করে, তখন আমি জানতে পারি প্রায় ৩০–৪০ জন ধর্ষিতা নারী এ বন্দীদের সঙ্গে দেশ ত্যাগ করছেন। অবিলম্বে আমি ভারতীয় দূতাবাসের সামরিক অফিসার ব্রিগেডিয়ার অশোক ডোরা এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে নিয়োজিত মরহুম নুরুল মোমেন খান, যাঁকে আমি মিহির নামে জানতাম, তাঁদের শরণাপন্ন হই। উভয়েই একান্ত সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে এসব মেয়ের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ আমাদের করে দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নওসাবা শরাফী, ড. শরীফা খাতুন ও আমি সেনানিবাসে যাই এবং মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা লাভ করি। পরে নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত থেকে নারকীয় বর্বরতার কাহিনি জানতে পারি। সেই থেকে বীরাঙ্গনাদের সম্পর্কে আমার আগ্রহ জন্মে। এই ক্ষুদ্র গ্রন্থে সে আগ্রহের খণ্ডাংশ মাত্র। তাঁর এই ভূমিকা থেকেই পাঠক বুঝতে সক্ষম পাকিস্তানিরা আমাদের মা-বোনের ইজ্জতের ওপর কি বীভৎস হামলা চালিয়েছিল। বইটি একটি প্রামাণ্য দলিল। তাই বইটি সর্বত্র পঠিত হওয়া প্রয়োজন। আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতার কথা ভুলতে পারি কি?

বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭৪ সালে নীলিমা ইব্রাহিম বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেন। বাংলা একাডেমিতে চলছিল অনিয়ম–বিশৃঙ্খলা। দৃঢ় হাতে এসব অনিয়ম দূর করেছিলেন। মকবুল নামে এক ভণ্ড খাদেম বাংলা একাডেমির চত্বর দখল করেছিল। প্রথমে ছিল একটি কবর এবং তার পাশে মাত্র ৪ শতক জায়গা। মকবুলের হাতের কারসাজিতে তা বেড়ে হয়ে গেল এক শ চুয়াল্লিশ শতক। আর একটু চাপ দিলেই আরও জায়গা বেড়ে বাংলা একাডেমিকে গ্রাস করে। প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে দৃঢ় হাতে মকবুলকে উচ্ছেদ করতে পেরেছিলেন সেদিন। মকবুলের কাছে পাওয়া গিয়েছিল ১৪২টি চাঁদা আদায়ের বাক্স। শহরের বিভিন্ন স্থানে এবং শহরের বাইরেও এই বাক্সগুলো রক্ষিত ছিল। এর তত্ত্বাবধান করত এক সুসংগঠিত দল। তারা চাঁদার ভাগ নিত এবং বাক্স পাহারা দিত। কিন্তু মকবুলের অবৈধ ব্যবসা ভেঙে দেওয়ার পর এই বাক্সের তালা আর সে খুলতে পারেনি। পাহারাদাররাই সেই বাক্স দখল করে নিয়েছে। পক্ষান্তরে বাংলা একাডেমি রাহুমুক্ত হয়েছে। প্রয়োজনে কি কঠিনই না হতে পারতেন তিনি।

১৯৭২ সালে থেকে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভাপতি ছিলেন ড. নীলিমা ইব্রাহিম। এ সময় থেকে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল চালিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন মহিলা সমিতি মিলনায়তন। সত্যি কথা বলতে কি, তাঁর উৎসাহে এই মিলনায়তন মঞ্চে নিয়মিত নাটক উপস্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি করে তিনি এ দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রেও বিরাট অবদান রেখেছিলেন। পরে মহিলা সমিতি ভবনের ওপর তলায় একটি সেমিনার কক্ষ চালু করেছেন। যেখানে সৃজনশীল বিষয়ের চর্চার জন্য সেমিনার কক্ষ উন্মুক্ত করে দেন।

নীলিমা ইব্রাহিমকে একবার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল। খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীর শেষ দিকে ১৯৯৫ সালে। ‘মাগো আমি কোয্যাবো’ লেখার জন্য সরকার রাষ্ট্রবিরোধী মামলা ঠুকে দিল। নীলিমা ইব্রাহিমের বাসায় পুলিশ খঁজতে গিয়েছিল, পায়নি। তিনি অসুস্থ ছিলেন, তাই আগাম জামিনের জন্য হাইকোর্টে গেলে সেখান থেকে নানা টালবাহনায় প্রত্যাখ্যাত হন। নিম্ন আদালত থেকে জামিন আনয়নের কথা বলা হয়। সেই করুণ ও হৃদয়বিদারক কাহিনি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। স্বাধীন দেশে একজন নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ ও কলম-সৈনিকের এ অবস্থা। সাংবাদিক কাজী শাহেদ আহমেদও (আজকের কাগজ) আসামি ছিলেন। তিনি বলেন, নীলিমা ইব্রাহিম মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আজকের কাগজে লিখে গেছেন। লেখার ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি ছিল না। এ দেশে সৎ থাকলে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। তিনিও পড়েছিলেন।

আজ ২০২০ সালের ১৮ জুন। ২০০২ সালের এই দিনে তিনি না–ফেরার দেশে চলে যান। তাঁর কাজ ও আদর্শকে স্মরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধায়।

*সাংবাদিক