নারীর অবৈতনিক গৃহস্থালিকাজের মর্যাদা বৃদ্ধিতে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো সময়ের দাবি

‘অবৈতনিক গৃহস্থালিকাজের মর্যাদা উন্নীতকরণ ও পারিবারিক কার্যক্রমে নারী-পুরুষের অংশীদারত্বমূলক দায়িত্ব বণ্টনকে উৎসাহিতকরণ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
‘অবৈতনিক গৃহস্থালিকাজের মর্যাদা উন্নীতকরণ ও পারিবারিক কার্যক্রমে নারী-পুরুষের অংশীদারত্বমূলক দায়িত্ব বণ্টনকে উৎসাহিতকরণ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য নারীর অবৈতনিক গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়ন ও মর্যাদা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে বাধাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সবাইকে একযোগে কাজ করা জরুরি। এমন অভিমত ব্যক্ত করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের আয়োজিত কর্মশালার বক্তারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘অবৈতনিক গৃহস্থালিকাজের মর্যাদা উন্নীতকরণ ও পারিবারিক কার্যক্রমে নারী-পুরুষের অংশীদারত্বমূলক দায়িত্ব বণ্টনকে উতসাহিতকরণ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজিত হয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

সমাজসেবা অধিদপ্তর এসডিজি অনুযায়ী অবৈতনিক গৃহস্থালিকাজের মর্যাদা উন্নীতকরণ ও পারিবারিক কার্যক্রমে নারী-পুরুষের অংশীদারত্বমূলক দায়িত্ব বণ্টন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (গবেষণা ও প্রকাশনা) মো. সাজ্জাদুল ইসলাম। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের মূল লক্ষ্য সব ধরনের বৈষম্যের অবসান ও অসমতা হ্রাসের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করা। আর এসব কর্মকাণ্ডের মূলমন্ত্র leave no one behind নীতি গ্রহণ।

বাংলাদেশ জাতিসংঘ–ঘোষিত সহাস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে সাফল্য অর্জন করেছে; যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। এগুলো বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক দায়িত্ব বণ্টনের পথনকশা (ম্যাপিং) প্রণয়ন করা হয়েছে। দায়িত্ব বণ্টন পথ নকশা (ম্যাপিং) অনুযায়ী অভীষ্ট ৫–এর বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা ৫.৪ বাস্তবায়নকারী লিড মন্ত্রণালয় হিসেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

লক্ষ্যমাত্রায় উল্লেখ রয়েছে, সরকারি সেবা অবকাঠামো ও সামাজিক সুরক্ষা নীতিমালার মাধ্যমে অবৈতনিক পরিচর্যাকার্য ও গৃহস্থালিকাজের মর্যাদা ও স্বীকৃতিদান এবং খানা ও পারিবারিক পরিমণ্ডলে জাতীয়ভাবে যুক্তিযুক্ত অংশীদারত্বমূলক দায়িত্ব পালনকে উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশে নারীর মজুরিবিহীন গৃহস্থালিকাজের মূল্যায়ন ও মর্যাদা এখনো স্বীকৃত নয়। তবে বর্তমানে সারা বিশ্বে মজুরিবিহীন গৃহস্থালিকাজের মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ভারত, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, নেপালসহ বেশ কিছু দেশ। আর বাংলাদেশে নারী ও পুরুষ উভয়ই মজুরিবিহীন কাজে নিয়োজিত থাকলেও এ কাজ সবচেয়ে বেশি করছেন নারীরা।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ‘নারীর গৃহস্থালিকাজের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে নারীদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মানবসম্পদ উন্নয়ন’, ‘নারীর অংশগ্রহণ বা সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে লক্ষ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান নীতি, আইন, বিধি বা বাস্তবায়ন নীতিমালায় সংশোধন বা নতুন প্রণয়ন’, ‘সংকট ও অভিঘাতকালীন (crisis and shocks) নারীকে সুরক্ষা প্রদান ও নারীর প্রতি অধিক সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহায়তা প্রদান বৃদ্ধি’, ‘নারীর অবৈতনিক গৃহস্থালি কাজের মর্যাদা বৃদ্ধি ও গৃহস্থালি কাজে পুরুষের অংশীদারত্ব বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণে সমাজসেবা অধিদপ্তর কী ধরনের সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে’—এ বিষয়ের ওপর সুপারিশ পেশ করে। অংশগ্রহণকারীরা নারীর আর্থিক ক্ষমতায়নের জন্য প্রশিক্ষণ, স্কুলে ঘরের কাজে শিশুদের ধারণা প্রদান ও সচতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চলে নারীর কাজের মর্যাদা অতীতে ছিল না, এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা পায়নি। তবে ধীরে হলেও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে কাজ করা।’

কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আবু মাসুদ, পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ নূরুল বাসির, পরিচালক (কার্যক্রম) মো. জুলফিকার হায়দার, পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা) মো. সাব্বির ইমাম, ঢাকা বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক মিনা মাসুদুজ্জামানসহ সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

*লেখক: সমাজসেবা অফিসার; গবেষণা, মূল্যায়ন, প্রকাশনা ও জনসংযোগ শাখা, সমাজসেবা অধিদপ্তর।